মলাট বৃত্তান্ত জোকস বিরতি

 সত্যজিৎ বিশ্বাস 
১৪ নভেম্বর ২০২২, ০৪:৩৫ এএম  |  অনলাইন সংস্করণ

তিন অক্ষরের নাম তার মানুষ হাসিয়ে মারে, প্রথম অক্ষর বাদ দিলে, তিতা বের করে ছাড়ে। মাঝের অক্ষর বাদ দিলে দারুণ তারে কয়, শেষের অক্ষর বাদ দিলে, শুনেই লাগে ভয়! বলুন তো দেখি, জিনিসটা কী?
ঠিক ধরেছেন। জোকস-এর কথাই বলছি।

কোনো একটা কনটেন্টকে জোঁকের মতো চেপে ধরে তার কস বের করতে করতে জোস উপস্থাপনাই, আমার দৃষ্টিতে জোকস। বিশাল তার পরিধি। রিয়েল লাইফ জোকস, গুড নিউজ অ্যান্ড ব্যাড নিউজ জোকস, সায়েন্টিফিক জোকস, এনিমেল জোকস, ট্র্যাপ জোকস, পলিটিক্যাল জোকস থেকে ফ্লপ জোকস কী নেই জোকস রাজত্বে!
তো পাঠক, উদাহরণ দেওয়ার অজুহাতে তিন ধরনের তিনটা জোকস হয়ে যাক। 
ক্রেতা : তোমার আম মিষ্টি হবে তো? 
বিক্রেতা : স্যার, আপনার ডায়াবেটিস নাই তো? থাকলে না কেনাই ভালো!
আরেকটা শুনুন
পুলিশ : থানা থেকে বলছি। আপনার জন্য একটা গুড নিউজ, আরেকটা ব্যাড নিউজ আছে। কোনটা আগে শুনবেন?
জনৈক ব্যক্তি : গুড নিউজটাই আগে শুনি।
পুলিশ : বারো বছর আগে আপনার হারানো ছেলেকে আমরা খুঁজে পেয়েছি।
জনৈক ব্যক্তি : বলেন কী! এ তো দারুণ গুড নিউজ! ব্যাড নিউজটা কী?
পুলিশ : সে এখন ডাবল মার্ডারের আসামি টপ টেরর কাইল্যা বাবু!  
এবং আরও একটি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন এক স্বৈরশাসক। হঠাৎ তার কাছে ফোন এলো চিড়িয়াখানা থেকে।
: হ্যালো, মি. প্রেসিডেন্ট, গত কয়েকদিনে মন্ত্রিসভায় কোনো পরিবর্তন এনেছেন কি?
না তো। কেন?
: আমাদের চিড়িয়াখানার একমাত্র গাধাটাকে পাওয়া যাচ্ছে না তো, তাই! 
তবে মজার ব্যাপার হলো, জোকস রাজত্বের শুরু থেকে আজ অবধি পাঁচ হাজার জোকসই ঘুরে ফিরে আসছে নানাভাবে। নতুন জোকস খুব কমই তৈরি হয়। রিয়েল লাইফ জোকস কিংবা প্র্যাকটিক্যাল জোকস, এগুলো তৈরি হয়। বাকি জোকস সব এদিক-ওদিক করেই চলছে। কথায় আছে না, ঞযবৎব রং হড়ঃযরহম হবি টহফবৎ ঃযব ংঁহ. জোকসের বেলাতেও তাই। একই আইডিয়া নতুন নতুন রূপে আসছে। যারা জোকস নিয়ে কাজ করেন, এক একজন এক একভাবে উপস্থাপন করছেন।
হিউমার দিয়ে, উইট দিয়ে রাজসভাকে হাস্যরসে কাঁপাতে যুগে যুগে গোপাল ভাঁড়, মোল্লা নাসিরুদ্দিন, বীরবল এসেছেন। তারা যে জোকস বলে হাসাতেন, তা কিন্তু নয়। উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে কথার পিঠে কথা বলে হাসাতে হাসাতে কাশাতে মাস্টারপিস ছিলেন তারা। পরবর্তীকালে তাদের এসব স্টান্ডআপ কমেডি জোকসকে সমৃদ্ধ করেছে শতগুণে।
জোকস বা কৌতুক অনেক আগে থেকেই সাহিত্যের একটি স্বীকৃত অংশ, যা মিনিয়েচার সাহিত্যের অন্তর্গত। মিনিয়েচার রম্য সাহিত্যের গুরুত্ব কিন্তু কম নয়। একটা ছোট্ট জোকসের ভেতরেও থাকতে পারে দম ফাটানো হাসির উপাদান থেকে শুরু করে প্রতিবাদের ঠাসা বারুদ, হাই ফিলোসফি। 
জোকস-এর মধ্যে ‘ফান’, ‘উইট’, ‘হিউমার’, ‘আয়রনি’Ñএ সবই বিচরণ করে। ‘ফান’ থেকে হাহা, হিহি বেরিয়ে আসে ভীষণ শব্দে। ‘হিউমার’ও কম যায় না অকৃপণ হাসি উপহার দিতে। ‘উইট’-এর হাসি যেন মেঘের মাঝে বজ্রের ঝিলিক, অন্ধকারে হঠাৎ চমকে ওঠে। আর ‘আয়রনি’ থেকে যে মুচকি হাসিটা বের হয়, তা শ্লেষ তিক্ত হাসি। এ সবের দুই, একটার মোরব্বামিশ্রিত কোনো জোকস যদি উপস্থাপন করা যায়, তাহলে সম্মিলিত হাসির মাত্রা যে কামানের গোলার গতিতে ছোটে, তাতে সন্দেহ আছে কারও?
প্রিয় পাঠক, তবে আর দেরি কেন? জোকসের ঝুলি নিয়ে নেমে পড়ুন আসরে। আসর বাজিমাত করার এমন সুবর্ণ সুযোগ আর কিসে পাবেন? আপনার বলা জোকস বুঝতে পারলে শ্রোতারা হাসবেন, আর বুঝতে না পারলে আপনি হাসবেন। হাসির রোল পড়বেই।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন