বন্ধ্যত্ব কী? কেন হয়? জেনে নিন চিকিৎসায় করণীয়

 ডা. ফারজানা দীবা 
২৬ আগস্ট ২০২২, ১১:৩৬ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

বন্ধ্যত্ব কী? 

একই ছাদের নিচে স্বামী স্ত্রী যখন বাচ্চা চান, কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছাড়া এক বছর সময় কাটান, কিন্তু বাচ্চা হয় না, তারাই বন্ধ্যত্ব রোগী বা বন্ধ্যত্বতে আক্রান্ত বলে গণ্য করা হয়। এই রোগীদের উচিত বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

সাধারণত দেখা যায় যে, একশো জনের মধ্যে আশি জনই কিন্তু ৮০ জন দম্পতি কিন্তু প্রথম এক বছরের মধ্যে সন্তান ধারণে সক্ষম হন, বাকি ২০ জন যারা সন্তান ধারণে সক্ষম না হন, তাদের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে কিন্তু আরো কিছু দেখা যায় যে আরো পনেরো জন সন্তান ধারণে সক্ষম হয়, বাকি পাঁচজনই বন্ধ্যত্বে আক্রান্ত হন বা আমাদের কাছে আসেন চিকিৎসার জন্য।

বন্ধ্যত্বের অনেক ধরন ও কারণ আছে, এমনকি স্বাভাবিক যে রোগগুলো রয়েছে, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র একজন রোগীকেই চিকিৎসা করা হয়, কিন্তু এ সমস্যার কারণে দুইজনকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা করতে হয়।

বন্ধ্যত্ব কোনো রোগ নয়

বন্ধ্যত্ব আসলে কোনো রোগ নয়, এটা একটা কন্ডিশন। যার কারণে স্বামী এবং স্ত্রী দুজনকেই একসঙ্গে চিকিৎসা করতে হয়, কারণ একটা বাচ্চা হওয়ার জন্য মা যেমন তাই সেই সঙ্গে কিন্তু বাবাও দায়ী, কাজেই বন্ধ্যত্ব মানে শুধু যে মেয়েদের রোগ বা মেয়েরা দায়ী এটা কিন্তু না, বন্ধ্যত্ব মানে স্বামী এবং স্ত্রী দুজনেরই সমস্যা, তো যখন বন্ধ্যত্ব রোগের চিকিৎসা আমরা করি, তখন কিন্তু স্বামী এবং স্ত্রী দুজনকে একসাথেই চিকিৎসা করে থাকি, এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা যা কিছু আছে সবগুলোই একসাথে করি।

বন্ধ্যত্ব রোগে আক্রান্তরা যখন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে আসবেন তখন স্বামী স্ত্রী একসাথে আসবেন। কারণ, মেয়েদের দোষেই বন্ধ্যত্ব হয় না, স্বামীরও এ সমস্যা থাকতে পারে।

বন্ধ্যত্ব  নিয়ে যা জানা জরুরি

প্রবাসী স্বামী যখন ২-৩ বছর পর পর এসে সাত দিন বা এক মাস দেড় মাস পরে চলে যাচ্ছেন। এতে কিন্তু ওই স্ত্রীকে বন্ধ্যত্ব বলা যাবে না। কারণ, বন্ধ্যত্ব মানে কিন্তু এক বছর একই সঙ্গে একই ছাদের নিচে স্বামী স্ত্রী এক সঙ্গে থাকতে হবে। ওই সময় কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না।

বন্ধ্যত্বের কারণসমূহ

বন্ধ্যত্বের সমস্যা স্ত্রী এবং পুরুষ দুইজনেরই সমস্যা হতে পারে। 

পুরুষের সমস্যা: যদি আমরা চিন্তা করি সেক্ষেত্রে পুরুষের যৌনবাহিত কিছু রোগের যেমন জড়িত সেই সাথে শুক্রাণুর সমস্যা কিন্তু অনেকাংশে জড়িত, পুরুষের সবকিছু ঠিক আছে, স্বাস্থ্যগতভাবে ঠিক আছে, একসাথে স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকতে পারছেন, কিন্তু তারপরেও দেখা যায় যে শুক্রাণুর পরিমাণ কম, অথবা শুক্রাণু যেগুলো আছে সেগুলো বেশিরভাগই মৃত, অথবা শুক্রাণু গঠনগত ত্রুটি থাকতে পারে।

বন্ধ্যত্বের পরীক্ষা-নিরীক্ষা:  পুরুষদের প্রথমেই যে টেস্টটা করানো হয়-, সেটা হচ্ছে সিমেন অ্যানালাইসিস। এই পরীক্ষা থেকে একজন পুরুষের শুক্রাণুর পরিমাণ কেমন? গঠনগত পরিমাণ কেমন এবং বেঁচে থাকা বা চলন ক্ষমতা সম্পন্ন শুক্রাণুর পরিমাণ কেমন? এসব নির্ণয় করা হয়। এটি খুবই জরুরি পরীক্ষা। এটি বন্ধ্যত্বে প্রথম পরীক্ষা হিসেবে পরগণিত হয়। 

নারীদের সমস্যা: মেয়েদের ব্যাপারে প্রথমে লক্ষ্য করতে হবে-তার মাসিক নিয়মিত হচ্ছে কিনা> যে মেয়েটার মাসিক নিয়মিত হচ্ছে, তার অর্থ তার প্রত্যেক মাসে একটা করে ডিম ফুটছে বা ডিম ফুটার সম্ভাবনা অনেক বেশি রয়েছে। এর অর্থে এই মা কিন্তু প্রত্যেক মাসে অর্থাৎ বছরে ১২ বার প্রেগনেন্সি হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু যে মেয়ের মাসিক অনিয়মিত, অর্থাৎ দুই তিন মাস পর পর হচ্ছে, অথবা ছয় মাসে একবার হচ্ছে, তার কিন্তু বাচ্চার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। কাজেই এই রোগীগুলোকে চিকিৎসকরা এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন না, তার আগেই তাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

সেই সঙ্গে পঁয়ত্রিশ বছরের বেশি বয়সী নারীরা এসব সমস্যায় পড়লে তাদের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আর ছেলেদের বয়স যদি চল্লিশের বেশি হয়, তাহলে কিন্তু আগেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। তখন কিন্তু এক বছরে বাঁধাধরা যে নিয়মটা জানালাম সেটা কিন্তু কার্যকর হবে না। 

এখন যখন একটা মেয়ের ডিম ফুটছে প্রত্যেক মাসে, তখন কিন্তু ডিম ফুটের সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। এরপরে আমরা যে পরীক্ষাটা করি সেটা হচ্ছে একটা আলট্রাসোনোগ্রাফি করি, এই আলট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে জরায়ুতে কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা? 

বন্ধ্যত্ব সমাধানে জেনে নিন 

অনেক সময় জরায়ুতের টিউমার থাকে, ওভারিতে টিউমার থাকে যাকে চিকিৎসকরা চকলেট সিস্ট বলে থাকেন। 

এই জিনিসটা থাকতে পারে, অন্য ধরনের সিস্ট থাকতে পারে, পিসিওএস একটা হরমোনিয়ান রোগ, সেটাও এই ওভারিতে থাকতে পারে, যেটা আলট্রাসোলোতে ধরা পরে। এছাড়াও বন্ধ্যত্ব নির্ণয়ে টিউব টেস্ট করা হয়।

আমাদের জ্বরের দুইপাশে দুটো ডিম্বাশয় রয়েছে, এই ডিম্বাশয় থেকে প্রত্যেক মাসে ডিম ফোটে, আর এই ডিমটাকেই যখন শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত হয় তখনই কিন্তু একটা ভ্রূণ তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে বাচ্চাতে পরিণত হয়। এই ডিম্বাশয় থেকে যখন ডিম ফুটে এটা জরায়ুতে আসার পর শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হয়, তখনই একটা ভ্রূণ তৈরি হয়, কোন কারণে যদি যে পথে এটি আসে সেই টিউব বন্ধ থাকে, তখন কিন্তু দেখা যায় যে বাচ্চা আসতে সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। এজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।  

►বন্ধ্যত্ব নিয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওতে ক্লিক করুন 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন