শখের বসে ফ্যাশন ডিজাইন জগতে এসে সাফল্য পৌষীর

 বিজনেস ডেস্ক 
০৮ মে ২০২২, ১০:২৯ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

বর্তমানের ফ্যাশন সচেতন মেয়েরা পোশাক নির্বাচনে সবসময় ঝুঁকছে নতুনত্বের দিকে। বিশেষত অফিসে, পার্টিতে কিংবা বিজনেস মিটিংয়ে ফরমাল আউটফিটে চাই যেন নতুন কিছু। ফরমাল কিন্তু চমকপ্রদ- এমন পোশাকের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই মাহিয়া নিনান পৌষী তার নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখেই শুরু করেন ফ্যাশন ডিজাইনিং প্রতিষ্ঠান ‘পৌষী’।ফ্যাশন ডিজাইনের জগতে এসে সফলও তিনি।

পৌষীর শুরুর গল্পটা জানিয়ে সৃজনশীল এই তরুণী জানান, ফ্যাশন ডিজাইনের জগতে তিনি আসবেন এবং এটি নিয়ে কাজ করবেন এমন কোনো ভাবনা তার মধ্যে ছিল না। বরং তার আগ্রহ ছিল ফটোগ্রাফিতে। শখের বসেই একদিন নিজের ডিজাইন করা কিছু পোশাকের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন তিনি৷ তখন সবাই খুব আগ্রহ দেখায় তার ডিজাইনগুলোর প্রতি এবং খুব অল্প সময়েই সবগুলো পোশাক সোল্ড আউট হয়ে যায়। এই ব্যাপারটিই মাত্র ১৯ বছরের পৌষীকে অনুপ্রাণিত করে এত বড় উদ্যোগ নিতে।

শুরুতে পরিবারের সাপোর্ট প্রসঙ্গে পৌষী জানান, একদম শুরু থেকেই আমার বাবার সাপোর্ট ছিল প্রচুর, যখন বাবা দেখলেন যে তার মাত্র ১৯ বছর বয়সী মেয়ে নিজে আয় করছে নিজের উদ্যোগ থেকে তখন তিনিই হয়ে উঠেন সবচেয়ে বড় সাপোর্ট সিস্টেম। তিনিই অনুপ্রেরণা দিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়তে এবং আরও দক্ষ হতে৷

‘পৌষী’ এর এই পুরো যাত্রায় তার বাবার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ মাহিয়া নিনান৷ তিনি বলেন, ‘প্রথম পেইড অর্ডার থেকে শুরু করে, ইনভেস্টমেন্ট, বনানীতে আউটলেটের জন্য পার্টনার খুঁজে পাওয়া এসবই সম্ভব হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে। এমনকি ফেসবুকের মাধ্যমেই পৌষীর ডিজাইন পৌঁছে যায় বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে সুদূর ইতালিতে৷’

মাত্র ২৬ বছর বয়সী এই তরুণীর উদ্যোক্তা হিসেনে অর্জনও নেহাতই কম নয়। ডিজাইনার হিসেবে অর্জন করেছেন অনেক দেশি-বিদেশি স্বীকৃতি। 

পৌষির পথচলা সম্পর্কে মাহিয়া নিনান পৌষী বলেন, আমি অনলাইন বিজনেস শুরু করি ২০১৩, তখন আমি ক্লাশ টেনে পড়ি। ডিজাইনার এমনকি বিজনেস নিয়ে কোনো আইডিয়া নেই, কিন্তু আমি শখ করে নিজের ড্রেস বানাতাম ফেসবুকে আপলোড করতাম তখন সবাই আমাকে বলতো ড্রেস দিতে। তখন ফটোগ্রাফি করতাম টুকটাক আর এটা থেকে একটু ইনকাম হতো। দশ হাজার টাকা সেভ করে দশটা ড্রেস বানাই ওয়েস্টার্ন গাউন বেল্টসহ। নিজের জন্যই বানাই, কিন্তু যদি কেউ চায় বানিয়ে দিব এটাই চিন্তা করি। যে রাতে আপলোড করি আমার দশটা ড্রেস বিক্রি হয়ে যায়। এরপর টাকা পেয়ে অর্ডার নেই আর সেল করতে থাকি। ওই মাসেই আমার একশর বেশি সেল হয়।

‘এরপর শুরু হয় আমার বিজনেসের জার্নি। ২০১৩ থেকে ২০১৫ অনলাইনেই করি। এরপর ২০১৫ তে আমি বনানীতে শপ নেই পার্টনারশিপে। ওখানে অনেক ভালো সাড়া পাই। 
শোরুম যখন নেই আমার এ লেভেলস এক্সাম ছিল। আমি তিন মাস ভাড়া দেই কিন্তু, তখনো ড্রেস রাখতে পারিনি। আমি শোরুমে কী রাখব ড্রেস বা কী এগুলো কিছুই ছিল না শুধু শখেই কয়েকজন আপুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই পার্টনারশিপে। আমি ২০১৫ তে বুঝতে পারি নিজের ওয়ার্কার ছাড়া বিজনেস সম্ভব না। এরপর কম ভাড়ায় রুম খোঁজা শুরু করি। আমার বাসা থেকে ফ্যাক্টরি অনেক দূর কিন্তু, ভাড়া কম তাও দক্ষিণখান নিজের ফ্যাক্টরি নেই। ওয়ার্কার খুঁজে বের করি। সব একাই করি তখন। এই লাইনে কাজ করব এই জন্য ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করি যাতে কাজ আরও ভালো হয়।’

মাহিয়া নিনান পৌষী বলেন, ২০১৭ সালে বনানী শোরুম ছেড়ে দেই পড়াশোনা এবং ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার কারণে। এটা ছিল আরেকটা ধাক্কা, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ২০১৭ সালে এক্সপোর্ট করা শুরু করি। এক্সপোর্টটাই প্রধান রাখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ২০১৮ সালের ধানমণ্ডি এক্সপ্লোর করার জন্য আরেকটা শোরুম নেই এটা একটা ভুল ছিল। কারণ পড়াশোনা, এক্সপোর্ট ফ্যাক্টরি সামলানো আবার ডিজাইন নিজে করা সব অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল। দুই বছর কষ্ট করে টানি, কিন্তু না পেরে ২০১৯ সালে ডিসেম্বর মাসে শোরুম ছেড়ে দেই কারণ এক্সপোর্ট ভালো যাচ্ছিল না। এর মধ্যে ২০২০ এর লকডাউন আমার সব প্ল্যান বদলে গেল এক্সপোর্টও অফ হয়ে গেল। 

‘আমি মিরপুর আর দক্ষিণখান দুইটি ফ্যাক্টরিতে ৪৮ জন কর্মীর বেতন আর ভাড়া দিলাম কোনো ইনকাম ছাড়া। এরপর ২০২০ এর আগস্ট মাসে দক্ষিণখানের ফ্যাক্টরি বাদে সব ছেড়ে দিলাম কারণ জমানো টাকা সব শেষ।’

মাহিয়া নিনান পৌষী আরও বলেন, আমি নতুন করে আবার সব শুরু করলাম ২০২১ বাংলাদেশেই অনলাইনে। রিসার্চ করে শুরু করলাম মার্কেট গ্যাপটা কোথায়। দেখলাম স্কিনি মেয়ে এবং প্লাস সাইজ মেয়েদের জন্য রেডিমেড কিছুই নেই এবং ওয়েস্টার্ন ও আমরা বাইরে থেকেই আনাই। এজন্য আমি ওয়েস্টার্ন এবং প্লাস সাইজ নিয়ে অনলাইনে কাজ করছি। আলহামদুলিল্লাহ, এত কিছুর পর ভালোই যাচ্ছে সব। ইচ্ছা আছে আমার ব্র্যান্ডকে অনেক বড় করার এবং দেশের বাইরে নেওয়ার।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন