৩৩তম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব শুক্র ও শনিবার

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৫:৪৭ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

‘এই জীবনে ব্যথা যত এইখানে সব হবে গত’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এমন অমিয়বাণী ধারণ করে মঞ্চে ফিরছে ঐতিহ্যবাহী জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব। আয়োজনে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা। ১৯৮৮ সাল থেকে রবীন্দ্রসংগীত ও নবীন শিল্পীদের বিকাশে কাজ করে আসছে সংস্থাটি। করোনার কারণে প্রায় তিন বছর পর ফের সরাসরি মঞ্চে ফিরছে এ উৎসব।

আগামী শুক্র ও শনিবার দুদিনের এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে। শুক্রবার সকাল ১০টায় উৎসব উদ্বোধন ও গুণীজন সম্মাননা দেবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি। 

বুধবার রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও কণ্ঠশিল্পী পীযূষ বড়ুয়া। এ সময় সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। 
এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ, সহ-সভাপতি খন্দকার খায়রুজ্জামান কাইয়ুম, বুলা মাহমুদ, কাজল মুখার্জী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক (সাধারণ) তানজিমা তমা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক (পরিকল্পনা) সাগরিকা জামালী, অর্থ সম্পাদক কনক খান, দপ্তর সম্পাদক সীমা সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক রিফাত জামাল মিতু এবং নির্বাহী সম্পাদক শর্মিলা চক্রবর্তী, আহমেদ শাকিল হাসমী, সাজ্জাদ হোসেন, জাফর আহমেদ ও রাবিতা সাবাহ।

সংবাদ সম্মেলনে পীযূষ বড়ুয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘শেষবার এ উৎসব করেছি ২০১৯ সালে, মানে সরাসরি মঞ্চে। ২০ সালে পারিনি করোনভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে। ২১ সালে করেছি সীমিত পরিসরে অনলাইনে। ফলে এবারের উৎসবটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
 
সংবাদ সম্মেলন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সভাপতি তপন মাহমুদ বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকেই এ সংস্থার মূল উদ্দেশ্য নবীন শিল্পীদের প্রমোট করা। সেই ধারা অব্যাহত থাকছে এবারের উৎসবেও। তার ভাষায়, ‘আমাদের সময় শুধু বিটিভি ছিল বা বেতার। ফলে আমরা সেখানে গাইলে পুরো বাংলাদেশ কাভার হতো। এখন অসংখ্য চ্যানেল, কিন্তু শিল্পীরা আগের সেই এক্সপোজার পান না। অথচ আমরা চাই নতুনরা গাওয়ার সুযোগ পাক, প্রচার পাক। সেই কাজটির জন্য এমন একটি উৎসবের আসলে খুব দরকার। এমন আয়োজন হলে নতুন শিল্পীরা অনেক সাহস পাবেন। তাই এবারও আমরা নতুন সদস্যদের তুলে ধরব মঞ্চে। সঙ্গে আমরা পুরোনোরা তো থাকবই।’ 

শুধু গান নয়, বরাবরের মতো এবারের উৎসবেও বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া হবে গুণীজন সম্মাননা। এবার সম্মাননা পাচ্ছেন বরেণ্য বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম এবং বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম। দুজনেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক। 

শুক্রবার সকাল ১০টায় উৎসবের উদ্বোধন ও সম্মাননা প্রদান শেষে বেলা ১১টা থেকে হবে সংগীত পরিবেশনা। মাঝে বিরতি নিয়ে বিকাল ৫টা থেকে হবে আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। পরদিন শনিবার বিকাল ৫টা থেকে হবে আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। এবারের উৎসবের সারা দেশ থেকে প্রায় ২০০ জন শিল্পী একক ও দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেবেন। 

এদের মধ্যে রয়েছেন বুলবুল ইসলাম, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, রোকাইয়া হাসিনা, অদিতি মহসিন, ড. অরূপ রতন চৌধুরী, চঞ্চল খান, লিলি ইসলামসহ বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী। 

উদ্বোধনী পর্বে অংশ নেবে পাঁচটি সঙ্গীত দল। এগুলো হলো- সুরতীর্থ, সঙ্গীতভবন, বিশ্ববীণা, বুলবুল লতিকলা একাডেমী (বাফা) ও উত্তরারণ। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। এরপর থাকবে পর পর দুটি কোরাস। দুদিনের অনুষ্ঠানে গানের পাশাপাশি আবৃত্তি পরিবেশনায় অংশ নেবেন বাকশিল্পী আশরাফুল আলম, জয়ন্ত রায়, বেলায়েত হেসেন, মাহমুদা আখতার ও রেজিওয়ালী লীনা। 

৩৩তম (ত্রয়োত্রিংশ) এ উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে করোনাকালে যেসব শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি ও সংস্কৃতজন মারা গেছেন তাদের স্মৃতির প্রতি। 

এ প্রসঙ্গে তপন মাহমুদ বলেন, ‘এ মহামারি শুধু আমাদের মঞ্চটাই কেড়ে নিয়েছে তা নয়। নিয়েছে আরও অনেক প্রাণ। যারা থাকলে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি আরও সমৃদ্ধ হতে পারতো। তাই সেই মানুষগুলোকে উৎসর্গ করা হলো এ আয়োজন। আর এবারের স্লোগানের উদ্দেশ্য হলো- ‘আমরা বলতে চাই- আমাদের যত ব্যথা ও বাধা ছিল জীবনে, তার সব অতিক্রম করব এ উৎসবের ভেতর দিয়ে।’

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন