ওয়েব কনটেন্ট নিয়ে যুগান্তরের মুখোমুখি অর্চনা

 যুগান্তর রিপোর্ট 
১৫ নভেম্বর ২০২০, ০৯:১৩ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশের দর্শকদের মধ্যে ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্ম নির্ভর বিনোদন সেবা গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান সেবাটি দিচ্ছে। ওটিটি ভিত্তিক বিনোদন পরিষেবায় এটি যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা।  করোনা মহামারীর কারণে মানুষের মধ্যে বেড়েছে ওয়েব কনটেন্ট ভিত্তিক বিনোদনের চাহিদা মেটানো প্ল্যাটফর্মের মধ্যে জি ফাইভ অন্যতম। সম্প্রতি তারা ৪টি বাংলাদেশি অরিজিনাল কনটেন্ট আনার ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে মুক্তি দিয়েছে অরিজিনাল ওয়েব কনটেন্ট ‘মাইনকার চিপায়’। সম্প্রতি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে যুগান্তরের বিশেষ সংবাদদাতা মুজিব মাসুদের মুখোমুখি হয়েছিলেন জি ফাইভের চিফ বিজনেস অফিসার অর্চনা আনন্দ। 

যুগান্তর: ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে মহামারীর সময়টাতে এর চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে।
অর্চনা: এটা সত্য যে করোনার মতো মহামারীর কারণে মানুষ ঘরে আবদ্ধ ছিলেন। এ সময়টাতে মানুষ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এক্সপ্লোর করেছেন। এবং এ মাধ্যমেই তারা ভালো কনটেন্ট উপভোগ করেছেন। এটা মানুষকে বেশ ভালো স্বস্তি দিয়েছে। তবে কেবল করোনা নয়, অন্য সময়টাতেও মানুষ ওয়েব কনটেন্ট দেখছে। এর পেছনে বড় কারণ প্রযুক্তি। এ জন্য আমরা টেলিকম প্রযুক্তি সেবাদাতাদের সঙ্গেও কাজ করছি। 

যুগান্তর: জি ফাইভ বাংলাদেশের বাজারে এসেছে বছর দু’য়েক হল। আপনাদের অভিজ্ঞতা কেমন? 
অর্চনা: আমরা বেশ ভালো বোধ করছি। এখানকার দর্শকরা আমাদের পছন্দ করছেন। এটা একটা ভালো দিক।  এখানকার গুগল ট্রেন্ড আমরা দেখছিলাম, বাংলাদেশের মানুষ আমাদের ওয়েব কনটেন্ট পছন্দ করছেন এবং দ্রুততার সঙ্গে আমাদের গ্রহণ করেছেন। এ জন্য আমরা স্থানীয় কনটেন্ট নিয়ে কাজ করতে বেশি উৎসাহিত হয়েছি। 

যুগান্তর: আপনারা চারটি ওয়েব কনটেন্ট আনছেন। এর মধ্যে একটি চলে এসেছে- এটার গল্পটা শুনতে চাই।
অর্চনা: আমরা বছর দু’য়েক আগে এখানে কাজ শুরু করি। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে আমরা এখানকার এক নম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে মানুষের আস্থা অর্জন করি। এখানকার দর্শকদের রুচি এবং স্থানীয় নির্মাতা ও শিল্পীদের গ্লোবাল অডিয়েন্সের সামনে নিয়ে আসার জন্য আমরা এ দেশিয় অরিজিনাল কনটেন্ট তৈরিতে হাত দেই। আপনি ঠিকই জানেন, ৪টি কনটেন্ট আমরা আনছি। তার মধ্যে ‘মাইনকার চিপায়’ ৯ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছে। এর ট্রেলারই দর্শকরা বেশ পছন্দ করেছেন।  ওয়েব কনটেন্টটিও তারা পছন্দ করছেন। এটাই আমাদের প্রেরণা। এটি দর্শকরা দেখছেন বিনামূল্যে। এ শর্ট ফিল্মটি দর্শকদের শুধু বিনোদনই দেবে না অন্যদিকে মাদকসেবন ও মাদক ব্যবসার মরণ ফাঁদটিকেও দেখিয়ে দেবে। এটি মাদকবিরোধী সচেতনতা তৈরিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি। মাইনকার চিপায়- এর পরিচালক আবরার বেশ মেধাবী। অভিনেতা আফরান নিশো চমৎকার অভিনয় করেছেন। শ্যামল মাওলা এবং শরিফুল রাজও বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। আমরা সামনের দিনগুলো এ রকম আরো ভালো বিনোদন নির্ভর ওয়েব কনটেন্ট দর্শকদের উপহার দিতে চাই। দর্শকরা প্রথমবারের মতো আফরান নিশোকে ওয়েব প্ল্যাটফর্মে দেখবেন। এটাও একটা এক্সাইটিং নিউজ!
 
যুগান্তর: বাংলাদেশি অরিজিনাল কনটেন্ট নির্মাণ অব্যাহত থাকবে?  
অর্চনা: হ্যাঁ। আমরা সামনেও আরও ওয়েব কনটেন্ট বানাব। এখানকার মানুষের রুচি, সংস্কৃতি এবং বৈশ্বিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা অডিয়েন্সের জন্য ভালো কিছু দিতে চাই। যেটি মানুষের প্রত্যহিক জীবনকে আনন্দময় বিনোদনে ভরিয়ে তুলবে। 

যুগান্তর: বাংলাদেশে আপনাদের গ্রাহক সংখ্যা কেমন?
অর্চনা: বাংলাদেশে আমরা বেশ জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। বৈশ্বিকভাবে (বাংলাদেশসহ) আমাদের মাসে ৪০ মিলিয়ন সক্রিয় ইউজার রয়েছে। এটা অবশ্য এ বছরের জুন পর্যন্ত হিসাবে। এটি এখন বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে। কারণ আমরা কনটেন্টের ক্ষেত্রে একটা বৈচিত্র্য নিয়ে আসছি। যেখানে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও সেখানকার মানুষের গল্প তুলে আনা হচ্ছে। 

যুগান্তর: আপনাদের ভান্ডারে এখন কেমন কনটেন্ট আছে? করোনার কারণে তো মানুষ প্রায় সব ধরনের কনটেন্টই দেখেছেন।  নতুন কিছু কি আছে? 
অর্চনা: করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। উদ্ভাবনী ও বাস্তবধর্মী কিছু বিষয় আমরা ঠিক করি এবং চর্চা করি। আমাদের মূল চ্যালেঞ্জটা ছিল কনটেন্ট নির্মাণের। লোকজন বাড়িতে বসে আছেন। তারা চাচ্ছিলেন কনটেন্ট। নতুন কনটেন্টের জন্য তারা অপেক্ষা করছিলেন। বেশকিছু কনটেন্ট নির্মাণ করে আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি। বর্তমানে আমাদের প্ল্যাটফর্মে ২৫ হাজার ঘণ্টার কনটেন্ট রয়েছে।  এটা নিঃসন্দেহে ডিজিটাল বিনোদনের বেশ বড় ভাণ্ডার।  আমি এখানে আপনাদের আরও জানিয়ে রাখতে পারি- জি ফাইভ প্রতি সপ্তাহে ৫ হাজার ঘণ্টার কনটেন্ট নির্মাণ করে। 

যুগান্তর: বাংলাদেশে আপনাদের ব্যবহারকারী বাড়ছে। এখানে অফিস খোলার ইচ্ছে আছে? 
অর্চনা: অফিস খোলার বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় আছে। এখনও একটা খারাপ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব। আমাদের এ জন্য সময় নিতে হচ্ছে। তবে স্থানীয় কনটেন্ট আমরা নিতে থাকব। এ জন্য আমরা এখানকার শিল্পী ও নির্মাতাদের নিয়ে কাজ করছি। আমরা একটি ওয়েব মুভিও করছি। ‘যদি কিন্তু তবুও’- মুভিটিও দর্শকদের জন্য জি ফাইভ প্ল্যাটফর্মে মুক্তি দেয়া হবে। 

যুগান্তর: বাংলাদেশের ওয়েব কনটেন্ট নিয়ে সরকার একটি নীতিমালা তৈরির কথা ভাবছে? এ বিষয়ে আপনাদের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা কেমন?
অর্চনা: আমরা যেখানে বা যে দেশে কাজ করি সেখানকার আইন রীতিনীতি মেনে চলি। এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটবে না। 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন