কৎবেল কাহন

 হাসান মাহমুদ রিপন 
০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৬:০৬ এএম  |  অনলাইন সংস্করণ


কৎবেল এক ফলের নাম। এটি শিশু-কিশোর ও টিনেজারদের জনপ্রিয় ফলও বটে। “ফেরোনিয়া লিমোনিয়া” কৎবেলের বৈজ্ঞানিক নাম। আগে এর নাম ছিল ফেরোনিয়া অ্যালিফেনটাম।

কৎবেল গাছ রুটেসী পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। এ গাছ উচ্চতায় ১৫-১৬ মিটার হয়। এরা শক্ত সমর্থ ধরনের গাছ। ডালপালা ও পাতায় ঘন ছায়া সৃষ্টি করে। কৎবেল গাছে ফুল আসে ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল মাসে এবং ফল পাকতে শুরু করে শীতের প্রারম্ভে। পাকা ফলের শক্ত খোসার রঙ কালচে হয়। 

ভিতরে থাকে নরম সাদা শাঁসের একটি পাতলা আবরণ এবং অম্লমধুর স্বাদের সুগন্ধযুক্ত কালচে বাদামী ঘন শাঁস ও প্রচুর ক্ষুদ্রাকার বীজ।

প্রায় সব ধরনের মাটিতেই কৎবেল চাষ হয়। গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া এ ফল চাষের পক্ষে উপযুক্ত। বেশি বৃষ্টিপাত ও ঠাণ্ডা জলহাওয়া এদের অপছন্দ।

কৎবেলের চারা তৈরি করা হয় বীজ খেকে। সুপক্ব ফলের বীজ নিয়ে শাঁস থেকে আলাদা করে ধুয়ে ছায়ায় অল্পদিন শুকিয়ে নিয়ে বীজতলায় বীজ ফেলা হয়। বীজ জমিতে ফেলার পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। মাটির ১-২ সে.মি. নিচে বীজ পুঁততে হবে। তাছাড়া সরাসরি পলিব্যাগেরও বীজ থেকে চারা করা যায়। 

চারা বসানোর কিছুদিন আগ থেকে ৭৫ ঘন সে.মি. গর্ত তৈরি করে প্রতি গর্তে ১৫ কেজি গোবর বা সার, ১ কেজি কাঠের ছাই, ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়ো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্তে ভরাট করে রাখতে হবে। এদের সারের চাহিদা নেই তবে চারা ছোট অবস্থায়

প্রতি বর্ষার আগে গোড়ায় মাটির সঙ্গে ১৫ কেজি গোবর সার মিশিয়ে দিলে চারা সতেজ হয়।

কৎবেলের বাগান করা হয় না। পুকুরে কিংবা দীঘির ও নদীর উঁচু বাঁধের ধারে লাগানো হয় এ গাছ। গাছের মাঝে তাল, খেজুর ও নারকেল গাছ লাগানো হয়। কৎবেল অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পাকতে শুরু করে। পাকা ফল গাছ থেকে পড়তে শুরু করলেই হাত দিয়ে বা জাল দিয়ে তা পাড়া হয়। 

পুষ্ট ফল পেড়ে তুষের বস্তার মধ্যে রেখে দিতে হয়। ঘরের গরম জায়গায় রাখলে ফল পেকে যায়। পাকা বেলের খোসা কালচে হয়ে আসে এবং সুগন্ধ ছড়ায়। তবে আজকাল কার্বোরাইড দিয়েও বেল পাকানো হয়ে থাকে।

কৎবেল পুষ্টিগুণে অনন্য। এ ফলের মধ্যে যতটুকু প্রোটিন ও রাইবোফ্লেভিন রয়েছে তা প্রায় অনেক নামি দামি ফলের চেয়েও বেশি। কৎবেল পুষ্টিগুণে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- জলীয় রস রয়েছে ৬৯.৫ ভাগ, স্নেহ ০.৬ ভাগ, প্রোটিন ৭.৩ ভাগ, খনিজ ১.৯ ভাগ, শর্করা ১৫.৫ ভাগ, আঁশ ৫.২ ভাগ, ক্যালসিয়াম ০.১৩ ভাগ, ফসফরাস ০.১১ ভাগ এবং লৌহ ০.৬ ভাগ। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে থাকে ১৭০ মিলিগ্রাম রাইবোক্লেভিন, ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ ও বি২ এবং আয়রন থাকে।

কৎবেল যকৃৎ ও হৃৎপিণ্ডের বলবর্ধক হিসেবে কাজ করে। বিষাক্ত, পোকামাকড় কামড়ালে আক্রান্ত স্থানে ফলের শাঁস এবং খোসার গুড়ার প্রলেপ দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া কচি পাতার রস দুধ ও মিছরির সাথে মিশিয়ে পান করলে শিশুদের পিত্তরোগ ও পেটের পীড়া উপশম হয়। মোটকথা কৎবেল পুষ্টিগুণেও অতুলনীয়।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন