বাসর রাতে পালিয়েছে ছর ভ্যেছ

 রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে 
৩১ অক্টোবর ২০২২, ০৩:২৬ এএম  |  অনলাইন সংস্করণ

জীবনে অনেক কিছু শুনেছি, দেখেছি এমনকি জেনেছি; কিন্তু কখনই শুনিনি যে বাসর রাতে একটি কোবরা সাপ ছর ভ্যেছ (Sir Väs) সঙ্গিনীকে ফেলে পালিয়ে গেছে, যা সদ্য ঘটেছে স্টকহোমের স্কানসেনে (Skansen)। সুইডেনের স্কানসেন জাদুঘর হলো বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ওপেন হাউস মিউজিয়াম। স্কানসেন জাদুঘর সুইডেনের ঐতিহাসিক ভবন পাশাপাশি কুচুটে ক্যাপচার প্রদর্শন ও দেখার সুযোগ রয়েছে।

স্কানসেন জাদুঘরে বেশিরভাগ ভবন এবং খামারবাড়িগুলো মূলত ১৮ শতকের শেষের এবং ১৯ শতকের প্রথম দিকের। ঐতিহাসিক ভবন সংগ্রহ ছাড়াও নানা ধরনের দোকান আছে, আছে ক্যাফে, আছে একটি চমৎকার গির্জা, একটি চিড়িয়াখানা এবং একটি অ্যাকোয়ারিয়াম; যা শিশুদেরসহ সবার মন জয় করে, বিনোদন দেয়।

কিছুদিন আগে ২.৫ মিটারের একটি কোবরা সাপ (নাম ছর ভ্যেছ) তার টেরারিয়াম থেকে পালিয়ে যায়। একটি নজরদারি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা যায় কিং কোবরা সিলিংয়ের ল্যাম্প ফিক্সচারে ফাটল দিয়ে বেরিয়ে আসে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে টেরারিয়াম থেকে পালিয়ে আসা কিং কোবরাটির সন্ধান পুরোদমে চলছে।

ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার। বিষাক্ত কিং কোবরা তার টেরারিয়াম ছেড়ে চলে যায়, তারপর থেকে একটি নিবিড় অনুসন্ধান অভিযান শুরু হয়।

কর্তৃপক্ষ বলছে- আমরা সম্প্রতি স্বল্প-শক্তির বাতিতে পরিবর্তিত হয়েছি। আমরা আগে যে লাইট বাল্বগুলো ব্যবহার করতাম সেগুলো খুব গরম ছিল এবং সাপগুলো কাছে গেলে তারা নিজেরাই পুড়ে যেত। এখন যেহেতু এটি গরম ছিল না, সেক্ষেত্রে বাতি এবং ভাল্বের তারের মধ্য দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছে। স্ক্যানসেনের অন্য একটি সাপের সাথে কিং কোবরার সঙ্গম করার চেষ্টা করার জন্য তাকে সেখানে রাখার পর কিং কোবরা পালিয়ে যায়।

মানুষ বাসরঘর থেকে পালিয়েছে শুনেছি, তবে সাপও যে পালাতে পারে জানলাম এবার। কর্মীরা এখন স্থগিত সিলিংয়ের একটি এলাকা ঘেরাও করে রেখেছে, যেখানে সাপটি আছে, কিন্তু এটি আটকা পড়েনি। কর্মীরা বলেছেন যে, তারা সাপটিকে পুনরুদ্ধার করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন। অনুসন্ধানের পর এটি এখন টেরারিয়ামের কাছে একটি জায়গায় পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। 
সুইডিশ টেলিভিশনের তথ্য অনুযায়ী, কাস্টমস অফিসের বিশেষ ক্যামেরা ও এক্স-রে যন্ত্রপাতির সাহায্যে সাপের অবস্থান জানা যায়। সাধারণত সরঞ্জামগুলো মাদকদ্রব্য ট্র্যাক করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

সামান্য একটি সাপের খোঁজে গত সাত দিন ধরে যে পরিমাণ অর্থ এবং কর্ম বিনিয়োগ করা হয়েছে, সেই সাথে মিডিয়া এবং সব ধরনের খবরে শিরোনাম হয়ে প্রচারিত হয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত আমি নিজেও এ বিষয়টি তুলে ধরতে বাধ্য হলাম। জীবজন্তু বা পশুপক্ষীর ব্যাপারে কিছু ঘটলে এ জাতি এমনভাবে তাকে হাইলাইট করে যে, মনে হয় জীবনে কখনো সুইডেনে কোনো অঘটন ঘটে না। অথচ এ বছরে নানা ধরনের গোলাগুলি বা মারামারির কারণে সম্ভবত ৪৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তারপর ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধে কত মানুষ মরেছে সেটা নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা খুব একটা দেখছি না, যদিও সবাই নিন্দা করছে। তবে বাসর রাতে সাপের পালানো ঘটনা সবার মুখে, যা এক বিশাল ঘটনা না লিখলেই নয়। কী কারণে কিং কোবরা তার প্রিয় সঙ্গিনী ছেড়ে পালাল এ রহস্য আমার ভাবনায় থেকেই গেল!

[প্রিয় পাঠক, যুগান্তর অনলাইনে পরবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাসে আপনার কমিউনিটির নানান খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন jugantorporobash@gmail.com এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]
যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন