ভিসার ধরন না বুঝে কুয়েতে এসে বিপাকে পড়ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা

 সাদেক রিপন, কুয়েত থেকে 
০৯ নভেম্বর ২০২২, ০১:৫৪ এএম  |  অনলাইন সংস্করণ

মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার হল কুয়েত। দেশটিতে কাজের ধরন ভেদে ভিসার ধরনেও রয়েছে ভিন্নতা ও আলাদা নিয়ম-কানুন। 

কুয়েতে ভিসার ধরন সম্পর্কে না জানার ফলে দালালের খপ্পরে পড়ে লোভনীয় কথায় মুগ্ধ হয়ে  আসার পর বিপাকে পড়তে হয় দক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিকদের। কুয়েতে বাইরের দেশ হতে ২০ নম্বর খাদেম (গৃহকর্মী) এবং ১৮ নম্বর (শোন কোম্পানি) দুই ধরনের ভিসায় শ্রমিকরা বেশি আসে । 

খাদেম ভিসার মধ্যে রয়েছে ড্রাইভার,বাবুর্চি ও  গৃহস্থলী কাজের সহযোগী এই ৩ ধরণে ভিসা। কাজের  মালিকের অনুমতি নিয়ে অন্য বাসায় কাজ করতে পারে কিছু কিছু সময়। এছাড়া অভিজ্ঞতা থাকা শর্তেও  অন্য কোথাও ভালো সুযোগ সুবিধা থাকলে ভিসা পরিবর্তনে সুযোগ নেই খাদেম আকামাধারীদের।

শোন ভিসা কয়েক ধরনের রয়েছে। এগুলোর মধ্যে হলো - মাজরা শোন ভিসা (বাগানের কৃষি কাজ), রায় গানাম শোন ভিসা (খামারের পশু-পাখি দেখাশোনা করা), মাসনা শোন ভিসা ( বিভিন্ন ধরণের পণ্য উৎপাদনকারী কারখানার কাজ )।

মাসুরা সাগীরা ( ছোট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান ), আখুদ হুকুমা ভিসা- পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী। কোম্পানি লাইসেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ হতে শ্রমিক নিয়ে আসে দেশটির বিভিন্ন অফিস, আদালত,শপিংমল, রাস্তাঘাট,মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কাজ। সাধারণত ৮ ঘন্টা ডিউটি ৭৫ দিনার বেতন ,খাওয়া নিজের থাকা মালিকের। 

এই কয়েক ধরনের ভিসায় বাংলাদেশি শ্রমিক এসে থাকে। এই ভিসায় আসা শ্রমিকরা কোম্পানির অনুমিত সাপেক্ষে একই ভিসায় একই ধরনের অন্য আরেকটি কোম্পানিতে আকাম পরিবর্তন করতে পারে। ভিন্ন ধরনের ভিন্ন কোম্পানিতে ভালো সুযোগ-সুবিধা থাকলেও ভিসা পরিবর্তন করা সুযোগ নেই। 

তবে ১৮ নাম্বার শোন ভিসার মধ্যে আহালি নামে এক ধরনের ভিসা আছে। এই ভিসায় আসা শ্রমিকরা নিজের পছন্দ মত কাজ ও কোম্পানিতে আকামা পরিবর্তন করতে পারে। ভিসাগুলো কয়েক হাত ঘুরে আসার ফলে বাংলাদেশিদের ভিসার মূল্য হয় ৬ লাখ টাকা থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত । 

একই ভিসা ভারত, নেপালের শ্রমিকরা আসতে খরচ ১ লক্ষ থেকে দেড় লাখ টাকা।  বর্তমানে কুয়েতে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে।

শোন ভিসা নিয়ে কুয়েতে ৭ বছর পূর্বে আসা চট্টগ্রামের শাহজাহান বলেন, ‘আমি মোবাইল মেরামতের কাজ জানি। দোকান বিক্রি করে দালালের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা দিয়ে  ভিসা কিনি। দালাল বলেছিল আহালি ভিসা যেকোন জায়গায় আকামা পরিবর্তন করতে পারব। আসার পরে দেখে ক্লিনিং কোম্পানিতে কাজ। এই কাজে ছাড়া অন্য কোম্পানিতে ভিসা পরিবর্তনে সুযোগ নাই। কোম্পানির ডিউটি শেষে একটি মোবাইল দোকানে পার্টটাইম কাজ করি। আমার মতো অনেকেই করছে। যেটা স্থানীয় আইনে অবৈধ। ধরা পড়লে দেশে পাঠিয়ে দেবে নিশ্চিত।’

কুয়েত প্রবাসী সমাজকর্মী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এক ল’ ফার্মে কাজ করা সুবাদে দেখেছি গত কয়েক বছরে দেশ থেকে অনেক শিক্ষিত বিভিন্ন কাজে দক্ষ তরুণ শুধুমাত্র ভিসা পরিবর্তন করার সুযোগ না থাকা কারণে তাদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারছেন না। যার ফলে অনেকেই দেখা যায় কোম্পানিতে ডাবল ডিউটি করতে হচ্ছে। কিন্তু সেই পরিমাণ বেতন পাচ্ছেন না। কেউ আবার দক্ষতা অনুযায়ী অন্যত্র জায়গায় পার্টটাইম জব করে। যেটা স্থানীয় আইনে অবৈধ। নানামুখী চাপে প্রবাসীরা হতাশায় ভুগে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রবাসে যে সব প্রবাসী মারা যাচ্ছেন তার বেশিভাগই স্ট্রোকে মৃত্যু।

[প্রিয় পাঠক, যুগান্তর অনলাইনে পরবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাসে আপনার কমিউনিটির নানান খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন jugantorporobash@gmail.com এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]
যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন