গন্তব্যহীন এক বিকাল
jugantor
গন্তব্যহীন এক বিকাল
প্রবাস ডায়েরি-১

  নাসরীন সুলতানা  

২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৬:৪৭:৪২  |  অনলাইন সংস্করণ

স্প্রিংয়ে অন্টারিওর প্রকৃতি খুব সুন্দর। যেদিকে তাকাই কেবল রং আর রং। রংধনুর সব রং দিয়ে যেন প্রকৃতি আপন হাতে সেজেছে।

বরফের চাদর থেকে বের হয়ে একেবারে মেলে ধরেছে নিজেকে। আজ মনটাও এক অজানা কারণে খুব ভালো।

জগারস, কেডস, আর হুডি পরে অজানার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। শরীর আর মন যতক্ষণ সাহায্য করে হাঁটব। আমার বাসা থেকে বের হতেই স্প্রুস স্ট্রিট। এটা ডান্ডাস স্ট্রিট থেকে সোজা নিনিতের স্কুলে গিয়ে থেমেছে। এর দুইপাশে লাইন ধরে পরপর একতলা বাড়ি। বাড়িগুলো দেখতে আমাদের দেশের টিনের চার চালা ঘরের মতো। সামনে এবং পেছনে রয়েছে ইয়ার্ড।
প্রতিটা বাড়ির ফ্রন্ট ইয়ার্ডে সোভা পাচ্ছে নানা রংয়ের বসন্তের ফুল। আমি অবশ্য সব ফুলের নাম জানি না, কিন্তু দেখতে খুব ভালো লাগে। ফুল মানেই এক ধরনের পবিত্র কিছু মনে হয়, যার নিজের উদ্দেশ্যই যেন কেবল অপরকে আনন্দ দেওয়া। আমি ভাবি মানুষ যদি এমন হতো! আমরা সবাই যদি নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে অন্যের জন্য কাজ করতাম জগতটা অন্য রকম হতো।

কিন্তু না, সেটা তো হবার নয়। মানুষ মাত্রই পৃথিবীর সবচেয়ে স্বার্থপর প্রাণী। এই পৃথিবীর আলো বাতাসে বেঁচে আছে, নিজেদের ইচ্ছেমতো পৃথিবীকে ব্যবহার করছে, আবার সেটাকে নিজের হাতেই বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বড় বড় জমি, বাড়ি কিংবা ব্যাংকভর্তি সঞ্চয় রেখে যাচ্ছে কিন্তু তাদের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে জরুরি যেটা সেই সুন্দর প্রকৃতি, বিশুদ্ধ অক্সিজেন, সেটার দিকে কোনো মনোযোগ নেই।

আমি ডান দিকে হাঁটা শুরু করলাম, ঠিক নিনিতের স্কুল বরাবর। একটু আগাতেই নাকে ভেসে এলো কোনো এক অজানা ফুলের তীব্র গন্ধ। গন্ধটায় এক ধরনের মাদকতা আছে, ঠিক যেন মহানিমের গন্ধ পাচ্ছি আমি। এ মহানিম ফুল নিয়ে আমার খুব সুন্দর কিছু স্মৃতি আছে। আমি তখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। নিনিতের বাবার সঙ্গে নতুন নতুন পরিচয় হয়েছে। সে শুনেছে মহানিম ফুল আমার খুব প্রিয়। পৃথিবীতে এতো ফুল থাকতে এ ধরনের বৃক্ষজাতীয় ফুলের প্রতি আকর্ষণ শুনে সে তখন একটু অবাক হয়েছিল। এরপর প্রতিদিন নিম গাছের ডাল ভেঙে আমাকে উপহার দিতো। আমিও সেগুলো আমার টেবিলে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখতাম। সারা ঘর এক ধরনের মাদকতায় ছেয়ে থাকতো। আর দুইদিন পরে টেবিলের উপড়ে ছোট ছোট ফুল ঝরে এক ধরনের সাদা আর বেগুনি রঙের আলপনা তৈরি করতো। আমি মাঝে মাঝে মুগ্ধ হয়ে সেই দিকে তাকিয়ে থাকতাম। এক ঝলকের জন্য আমি যেন আমার সেই চির চেনা রং আর গন্ধের আস্বাদন পেলাম। কিন্তু শুধু স্মৃতি রোমন্থন করলেই তো হবে না। আমাকে তো খুঁজে বের করতে হবে কোত্থেকে এ গন্ধ আসছে।

হাতের ডান দিকে দেখি অনেকগুলো রঙের ফুল ফুটে আছে। কিছু ফুল অফ হোয়াইট রঙের, অনেকটা নলের মতো সামনের দিকে বেঁকে গেছে। পুরো নলের চারদিকে ছোট ছোট হাসনাহেনা ফুলের মতো ফুল। গাছগুলো গুল্ম জাতীয়। এর ঠিক পাশেই দেখা যাচ্ছে ল্যাভেন্ডার কালারের থোকা থোকা ফুল। এর গাছও গুল জাতীয়। আমি একটু কাছে গেলাম। না, এটা সাদা ফুলের ঘ্রাণ নয়, এটা এ ল্যাভেন্ডার বেগুনি ফুল থেকে আসছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি। আমি যেন আমার দেশের সেই মহানিম পেয়ে গেছি। কি সুন্দর, কি এক মাদকতা এ ঘ্রাণে।

বুক ভরে অনেকটা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে আমি হাঁটতে থাকলাম। সরু হাঁটার পথ। দুই পাশে সবুজ দুর্বা ঘাস। তার ফাঁকে ফাঁকে উকি দিচ্ছে হলুদ রঙের ডান্ডেলিওন। এখানে ডান্ডেলিওন কেউ রোপন করে না মনে হয়। কিন্তু আগাছার মতো দুর্বা ঘাসের মধ্যে মিশে থাকে। দেখতে অনেকটা সূর্যমুখীর মতো। আর এটি সূর্যের হাসির প্রতীকও বটে। দূর থেকে তাকালে মনে হয় এক সবুজ মাঠে হাজারো হাসিমুখ। অনেকটা ইমোজির মতো।

আমি ইচ্ছে করে একটু ঘাসের মধ্যে পাটা মাড়িয়ে দিলাম যাতে করে আমার পায়ে ডান্ডেলিওনের কিছু রেণু লেগে থাকে, আমার শরীরে সূর্যের হাসি লেগে থাকে। আমি মনে মনে হেসে ফেললাম। কী সব আবোল তাবোল চিন্তা করছি। এগুলো নিছক পাগলামি ছাড়া আর কী?

ততক্ষণে আমি এলেন এভিনিউতে পৌঁছে গেছি। খানিকটা এগিয়ে বরডেন স্ট্রিট ধরে এবার বা দিকে টার্ন নিলাম। সামনে ভাংকুভার স্ট্রিট। আমার খুব অদ্ভুত লাগে এখানের রাস্তার নামগুলো দেখে। রাস্তাগুলো বড় বড় শহরের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ভাংকুভার স্ট্রিটে উঠতেই দেখি একজন তার ফ্রন্ট ইয়ার্ডের ঘাস কাটছে। আমাকে দেখে এক গাল হেসে, হাত উঁচু করে বলল, ‘Hi, have a good day’. আমিও বললাম, ‘you too’.

আমার মনে হলো আমার মতো এই লোকটাও নিশ্চয়ই এতক্ষণ মনে মনে কোনো মানুষ খুঁজছিল। এতোটা সময় হাঁটলাম, রাস্তায় কোনো মানুষ নেই। এতো বড় দেশ, কিন্তু মানুষ কতো কম। এই লোক আমার নাম, পরিচয় কিছুই জানে না। তারপরেও গ্রিটিংস বিনিময় করতে, হাসি বিনিময় করতে দ্বিধা করেনি। আমাদের দেশে অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলাকে ব্যক্তিত্বহীনতা মনে করা হয়। কিন্তু এখানে এটা একটা সাধারণ ভদ্রতা।

ভাংকুভার স্ট্রিট পার হয়ে ক্যালগেরি স্ট্রিটে পৌঁছাতেই চোখে পড়লো বড় একটা ম্যাগনোলিয়া ফুলের গাছ। এটা বৃক্ষ জাতীয় গাছ, সারা গাছে বেবি পিংক কালারের ফুল শোভা পাচ্ছে। গাছে একটি পাতাও নেই, কেবল ফুল আর ফুল, ঠিক যেন গোলাপি রঙের শিমুল গাছ দাঁড়িয়ে আছে একটা। আমার নানাবাড়িতে একটা বড় শিমুল গাছ ছিল। শীতের শেষে লাল রঙের শিমুল ফুলে গাছ ছেয়ে থাকতো। এখন অবশ্য শিমুল খুব একটা চোখে পড়ে না। আমাদের দেশের মানুষ এখন আর বাড়ির সামনে বাগান করে না। যে জায়গায় বাগান করবে, সেই জায়গায় বাড়ি তৈরি করে ভাড়া দিলে একটা বিনা পরিশ্রমে উপার্জনের ব্যবস্থা হয়। বাগান করে জায়গার অপচয় করার মতো বিলাসিতা এখন আর মানুষের মধ্যে দেখা যায় না।

আমি হাঁটছি। আরও দিগুণ গতিতে হাঁটছি। আমার ডানদিকে হাঁটুর নিচে সারি সারি হলুদ আর লালা রঙের টিউলিপ, মাথার কাছটা ঘেঁষে একটু পর পর দেখা যাচ্ছে ইস্টার্ন রেডবাডের ম্যাজেন্ডা রং। এতো সুন্দর এ পৃথিবী! সৃষ্টিকর্তা কত অকৃত্রিমভাবে আমাদেরকে এত রং, সৌন্দর্য আর গন্ধ উপহার দিয়েছেন। আমার কাছে মনে হয় আমাদের জীবনও যেন প্রকৃতির মতোই নানারঙে সাজানো। কখনো এ জীবন মহানিমের মতো চারদিকে মাদকতা ছড়ায়, সেই মাদকতায় কেউ কেউ মুগ্ধ হয়, ক্ষণিকের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলে। আবার কেউ গ্রাহ্যই করে না। এই জীবন কখনো ডান্ডেলিওনের মতো হাসে, আবার কেউ তাকে মাড়িয়ে দিয়ে যায়, কারো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকে অতি যত্নে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখা বন্য মহানিমের মতোই আদরে দিনযাপন করে, আবার অনেকে শিমুল কিংবা মাগনোলিয়ার মতো শুধু কারো বাড়ির শোভাই বৃদ্ধি করে, ফুলদানিতে কোনোদিন জায়গা পায় না।

আমি হাঁটছি এডমন্টন স্ট্রিট ধরে। দূর থেকে ভেসে আসছে সাই সাই করে ছুটে চলা গাড়ির শব্দ। সবার গন্তব্যে পৌঁছাবার তাড়া। আমার আজ শুধু মনে হচ্ছে আমি কয়েক ঘণ্টার জন্য গন্তব্যহীন। আমি হাঁটছি... গন্তব্যহীন গন্তব্যে।

অন্টারিও, কানাডা
২০ মে, ২০২২

[প্রিয় পাঠক, যুগান্তর অনলাইনে পরবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাসে আপনার কমিউনিটির নানান খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন jugantorporobash@gmail.com এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]

গন্তব্যহীন এক বিকাল

প্রবাস ডায়েরি-১
 নাসরীন সুলতানা 
২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৬:৪৭ এএম  |  অনলাইন সংস্করণ

স্প্রিংয়ে অন্টারিওর প্রকৃতি খুব সুন্দর। যেদিকে তাকাই কেবল রং আর রং। রংধনুর সব রং দিয়ে যেন প্রকৃতি আপন হাতে সেজেছে।

বরফের চাদর থেকে বের হয়ে একেবারে মেলে ধরেছে নিজেকে। আজ মনটাও এক অজানা কারণে খুব ভালো।

জগারস, কেডস, আর হুডি পরে অজানার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। শরীর আর মন যতক্ষণ সাহায্য করে হাঁটব। আমার বাসা থেকে বের হতেই স্প্রুস স্ট্রিট। এটা ডান্ডাস স্ট্রিট থেকে সোজা নিনিতের স্কুলে গিয়ে থেমেছে। এর দুইপাশে লাইন ধরে পরপর একতলা বাড়ি। বাড়িগুলো দেখতে আমাদের দেশের টিনের চার চালা ঘরের মতো। সামনে এবং পেছনে রয়েছে ইয়ার্ড।
প্রতিটা বাড়ির ফ্রন্ট ইয়ার্ডে সোভা পাচ্ছে নানা রংয়ের বসন্তের ফুল। আমি অবশ্য সব ফুলের নাম জানি না, কিন্তু দেখতে খুব ভালো লাগে। ফুল মানেই এক ধরনের পবিত্র কিছু মনে হয়, যার নিজের উদ্দেশ্যই যেন কেবল অপরকে আনন্দ দেওয়া। আমি ভাবি মানুষ যদি এমন হতো! আমরা সবাই যদি নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে অন্যের জন্য কাজ করতাম জগতটা অন্য রকম হতো।

কিন্তু না, সেটা তো হবার নয়। মানুষ মাত্রই পৃথিবীর সবচেয়ে স্বার্থপর প্রাণী। এই পৃথিবীর আলো বাতাসে বেঁচে আছে, নিজেদের ইচ্ছেমতো পৃথিবীকে ব্যবহার করছে, আবার সেটাকে নিজের হাতেই বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বড় বড় জমি, বাড়ি কিংবা ব্যাংকভর্তি সঞ্চয় রেখে যাচ্ছে কিন্তু তাদের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে জরুরি যেটা সেই সুন্দর প্রকৃতি, বিশুদ্ধ অক্সিজেন, সেটার দিকে কোনো মনোযোগ নেই।

আমি ডান দিকে হাঁটা শুরু করলাম, ঠিক নিনিতের স্কুল বরাবর। একটু আগাতেই নাকে ভেসে এলো কোনো এক অজানা ফুলের তীব্র গন্ধ। গন্ধটায় এক ধরনের মাদকতা আছে, ঠিক যেন মহানিমের গন্ধ পাচ্ছি আমি। এ মহানিম ফুল নিয়ে আমার খুব সুন্দর কিছু স্মৃতি আছে। আমি তখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। নিনিতের বাবার সঙ্গে নতুন নতুন পরিচয় হয়েছে। সে শুনেছে মহানিম ফুল আমার খুব প্রিয়। পৃথিবীতে এতো ফুল থাকতে এ ধরনের বৃক্ষজাতীয় ফুলের প্রতি আকর্ষণ শুনে সে তখন একটু অবাক হয়েছিল। এরপর প্রতিদিন নিম গাছের ডাল ভেঙে আমাকে উপহার দিতো। আমিও সেগুলো আমার টেবিলে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখতাম। সারা ঘর এক ধরনের মাদকতায় ছেয়ে থাকতো। আর দুইদিন পরে টেবিলের উপড়ে ছোট ছোট ফুল ঝরে এক ধরনের সাদা আর বেগুনি রঙের আলপনা তৈরি করতো। আমি মাঝে মাঝে মুগ্ধ হয়ে সেই দিকে তাকিয়ে থাকতাম। এক ঝলকের জন্য আমি যেন আমার সেই চির চেনা রং আর গন্ধের আস্বাদন পেলাম। কিন্তু শুধু স্মৃতি রোমন্থন করলেই তো হবে না। আমাকে তো খুঁজে বের করতে হবে কোত্থেকে এ গন্ধ আসছে।

হাতের ডান দিকে দেখি অনেকগুলো রঙের ফুল ফুটে আছে। কিছু ফুল অফ হোয়াইট রঙের, অনেকটা নলের মতো সামনের দিকে বেঁকে গেছে। পুরো নলের চারদিকে ছোট ছোট হাসনাহেনা ফুলের মতো ফুল। গাছগুলো গুল্ম জাতীয়। এর ঠিক পাশেই দেখা যাচ্ছে ল্যাভেন্ডার কালারের থোকা থোকা ফুল। এর গাছও গুল জাতীয়। আমি একটু কাছে গেলাম। না, এটা সাদা ফুলের ঘ্রাণ নয়, এটা এ ল্যাভেন্ডার বেগুনি ফুল থেকে আসছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি। আমি যেন আমার দেশের সেই মহানিম পেয়ে গেছি। কি সুন্দর, কি এক মাদকতা এ ঘ্রাণে।

বুক ভরে অনেকটা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে আমি হাঁটতে থাকলাম। সরু হাঁটার পথ। দুই পাশে সবুজ দুর্বা ঘাস। তার ফাঁকে ফাঁকে উকি দিচ্ছে হলুদ রঙের ডান্ডেলিওন। এখানে ডান্ডেলিওন কেউ রোপন করে না মনে হয়। কিন্তু আগাছার মতো দুর্বা ঘাসের মধ্যে মিশে থাকে। দেখতে অনেকটা সূর্যমুখীর মতো। আর এটি সূর্যের হাসির প্রতীকও বটে। দূর থেকে তাকালে মনে হয় এক সবুজ মাঠে হাজারো হাসিমুখ। অনেকটা ইমোজির মতো।

আমি ইচ্ছে করে একটু ঘাসের মধ্যে পাটা মাড়িয়ে দিলাম যাতে করে আমার পায়ে ডান্ডেলিওনের কিছু রেণু লেগে থাকে, আমার শরীরে সূর্যের হাসি লেগে থাকে। আমি মনে মনে হেসে ফেললাম। কী সব আবোল তাবোল চিন্তা করছি। এগুলো নিছক পাগলামি ছাড়া আর কী?

ততক্ষণে আমি এলেন এভিনিউতে পৌঁছে গেছি। খানিকটা এগিয়ে বরডেন স্ট্রিট ধরে এবার বা দিকে টার্ন নিলাম। সামনে ভাংকুভার স্ট্রিট। আমার খুব অদ্ভুত লাগে এখানের রাস্তার নামগুলো দেখে। রাস্তাগুলো বড় বড় শহরের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ভাংকুভার স্ট্রিটে উঠতেই দেখি একজন তার ফ্রন্ট ইয়ার্ডের ঘাস কাটছে। আমাকে দেখে এক গাল হেসে, হাত উঁচু করে বলল, ‘Hi, have a good day’. আমিও বললাম, ‘you too’.

আমার মনে হলো আমার মতো এই লোকটাও নিশ্চয়ই এতক্ষণ মনে মনে কোনো মানুষ খুঁজছিল। এতোটা সময় হাঁটলাম, রাস্তায় কোনো মানুষ নেই। এতো বড় দেশ, কিন্তু মানুষ কতো কম। এই লোক আমার নাম, পরিচয় কিছুই জানে না। তারপরেও গ্রিটিংস বিনিময় করতে, হাসি বিনিময় করতে দ্বিধা করেনি। আমাদের দেশে অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলাকে ব্যক্তিত্বহীনতা মনে করা হয়। কিন্তু এখানে এটা একটা সাধারণ ভদ্রতা।

ভাংকুভার স্ট্রিট পার হয়ে ক্যালগেরি স্ট্রিটে পৌঁছাতেই চোখে পড়লো বড় একটা ম্যাগনোলিয়া ফুলের গাছ। এটা বৃক্ষ জাতীয় গাছ, সারা গাছে বেবি পিংক কালারের ফুল শোভা পাচ্ছে। গাছে একটি পাতাও নেই, কেবল ফুল আর ফুল, ঠিক যেন গোলাপি রঙের শিমুল গাছ দাঁড়িয়ে আছে একটা। আমার নানাবাড়িতে একটা বড় শিমুল গাছ ছিল। শীতের শেষে লাল রঙের শিমুল ফুলে গাছ ছেয়ে থাকতো। এখন অবশ্য শিমুল খুব একটা চোখে পড়ে না। আমাদের দেশের মানুষ এখন আর বাড়ির সামনে বাগান করে না। যে জায়গায় বাগান করবে, সেই জায়গায় বাড়ি তৈরি করে ভাড়া দিলে একটা বিনা পরিশ্রমে উপার্জনের ব্যবস্থা হয়। বাগান করে জায়গার অপচয় করার মতো বিলাসিতা এখন আর মানুষের মধ্যে দেখা যায় না।

আমি হাঁটছি। আরও দিগুণ গতিতে হাঁটছি। আমার ডানদিকে হাঁটুর নিচে সারি সারি হলুদ আর লালা রঙের টিউলিপ, মাথার কাছটা ঘেঁষে একটু পর পর দেখা যাচ্ছে ইস্টার্ন রেডবাডের ম্যাজেন্ডা রং। এতো সুন্দর এ পৃথিবী! সৃষ্টিকর্তা কত অকৃত্রিমভাবে আমাদেরকে এত রং, সৌন্দর্য আর গন্ধ উপহার দিয়েছেন। আমার কাছে মনে হয় আমাদের জীবনও যেন প্রকৃতির মতোই নানারঙে সাজানো। কখনো এ জীবন মহানিমের মতো চারদিকে মাদকতা ছড়ায়, সেই মাদকতায় কেউ কেউ মুগ্ধ হয়, ক্ষণিকের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলে। আবার কেউ গ্রাহ্যই করে না। এই জীবন কখনো ডান্ডেলিওনের মতো হাসে, আবার কেউ তাকে মাড়িয়ে দিয়ে যায়, কারো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকে অতি যত্নে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখা বন্য মহানিমের মতোই আদরে দিনযাপন করে, আবার অনেকে শিমুল কিংবা মাগনোলিয়ার মতো শুধু কারো বাড়ির শোভাই বৃদ্ধি করে, ফুলদানিতে কোনোদিন জায়গা পায় না।

আমি হাঁটছি এডমন্টন স্ট্রিট ধরে। দূর থেকে ভেসে আসছে সাই সাই করে ছুটে চলা গাড়ির শব্দ। সবার গন্তব্যে পৌঁছাবার তাড়া। আমার আজ শুধু মনে হচ্ছে আমি কয়েক ঘণ্টার জন্য গন্তব্যহীন। আমি হাঁটছি... গন্তব্যহীন গন্তব্যে।

অন্টারিও, কানাডা
২০ মে, ২০২২

 

[প্রিয় পাঠক, যুগান্তর অনলাইনে পরবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাসে আপনার কমিউনিটির নানান খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন jugantorporobash@gmail.com এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]
যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

স্পেনে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বাংলাদেশিদের সফলতা

 কবির আল মাহমুদ, স্পেন থেকে 
২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৩২ এএম  |  অনলাইন সংস্করণ

স্পেনের সূর্য নগরীখ্যাত  মারবেলা। প্রতিবছর এ নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নৈসর্গিক স্থাপত্য কলা, নিদর্শন উপভোগ করতে হাজারও পর্যটকের ভিড় জমে।

বছরজুড়ে পর্যটকদের আনাগোনা থাকায় দেশটির অন্যান্য শহরের তুলনায় এখানকার ব্যবসা বাণিজ্য দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে।

স্পেনের রাজধানী শহর মাদ্রিদ থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দূরবর্তী এ শহরে বাংলাদেশিদের বসবাস খুবই কম। অন্তত ৪০ জন প্রবাসী বাংলাদেশি এ শহরে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন। তবে বাংলাদেশিরা রেস্তোরাঁ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন। নতুন কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মারবেলায় বসবাসরত বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল এসব কথা তুলে ধরেন।

গত বৃহস্পতিবার মাদ্রিদে দূতাবাসের হলরুমে ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রদূতকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। বাংলাদেশি ব্যবসায়ী জাছিম আহমদ, শিপলু সালাম ও মনজুর আহমদ এ সময় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পরিচিত হন।

এ সময় দূতালয়প্রধান এটিএম আব্দুর রউফ মণ্ডল, প্রথম কাউন্সিলর মুতাসিমুল ইসলাম, ইউরোপ বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কবির আল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

 

[প্রিয় পাঠক, যুগান্তর অনলাইনে পরবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাসে আপনার কমিউনিটির নানান খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন jugantorporobash@gmail.com এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]
যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

বিরহের চিঠি সে লিখে পাঠাল

 রহমান মৃধা 
২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৯:২৬ এএম  |  অনলাইন সংস্করণ

খাবারের অভাবে অনেককে কষ্ট পেতে দেখেছি, খেতে না পারার কারণে কাউকে মরতে দেখিনি। তবে সঙ্গিনীর অভাবে অনেককে জীবন যন্ত্রণায় বিছানধরা হতে দেখেছি।

শুনেছি ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়, তবে নিজ চোখে ভালোবাসা জানালা দিয়ে আসতে দেখেছি- সেটা ছিল মনের জানালা।

পল নিলছন নামটি পরিচিত নয়। কারণ এ নামটি বাংলাদেশি নয়, এটা একটি সুইডিশ নাম। পল সুদর্শন চেহারাধারী একজন সুইডিশ ছাত্র। সে আমার সমবয়সী, আমরা তখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি এবং থাকিও একই ডর্মিটরিতে। আমার সাবজেক্ট তখন কম্পিউটার এবং তার রসায়ন। আমাদের প্রথম দেখা ডর্মিটরিতে।

-আমি পল নিলছন, সাউথ অব সুইডেন থেকে এসেছি।
-তুমি?
-আমি রহমান মৃধা, সুদুর বাংলাদেশ থেকে এসেছি।
-পল বললো, তা ইংলিশ কান্ট্রি ছেড়ে সরাসরি সুইডেনে?
-আমি বললাম, মানে?
-পল বললো, না, মানে সুইডিশ ভাষা, তারপর ঠাণ্ডা দেশ, কারণটা কী জানতে পারি?
-আমি ভাবছি, সুইডিশ জাতি শুনেছি কিউরিয়াস কিন্তু সরাসরি এভাবে প্রশ্ন করতে পারে তাতো কখনও শুনিনি!

যাই হোক প্রথম পরিচয়, এ কথা সে কথা শেষে বিদায় নিয়ে নিজ রুমে চলে এলাম। আমার ডর্মিটরিতে আরও ছয়জন ছেলেমেয়ে থাকে তবে পল কিছুটা ভিন্ন। সময় পেলেই আমার সঙ্গে মিশতে চায়। তার ক্লাসে ছেলের থেকে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। সে ফ্রি সময়ে মেয়েলি কাহিনী নিয়ে আলোচনা করতেই বেশি পছন্দ করে।

আমাদের সাবজেক্ট ভিন্ন, ক্লাস আলাদা, বন্ধু-বান্ধবীও আলাদা। তবে একই ডর্মিটরিতে থাকি সেক্ষেত্রে আমরা দুইজনে অবসর সময়ে এক সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করি। সুইডেনে তখন বিজ্ঞান বিভাগের সাবজেক্টগুলোর মধ্যে যারা রসায়ন পড়তো তাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ছিল বেশি। পলের ক্লাসে মেয়েদের সংখ্যা নব্বই শতাংশ আর আমার কম্পিউটার ক্লাসে একে তো বেশির ভাগ বিদেশি এবং তার  প্রায় নব্বই শতাংশই ছেলে। মেজাজ যেতো খারাপ হয়ে, দেশে থাকতে শুধু ছেলেদের সঙ্গে পড়েছি। প্রাইমারি, হাইস্কুলে মেয়ে বন্ধু ছিল বটে, তবে খোলামেলাভাবে না, মেয়েরা শিক্ষকদের সঙ্গে ক্লাসে আসতো, ক্লাস শেষে শিক্ষকের সঙ্গে চলে যেতো। পরে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হলাম। ওমা! মেয়ের কোনো বালাই নেই! এমনকি শিক্ষকরাও সব পুরুষ। লেখাপড়ায় ঠিকমতো মনই বসে না! পরে একজন নারী শিক্ষক এসেছিলেন, তিনি বাংলা পড়াতেন। সে আরেক কাহিনী, অন্য কোনো এক সময় লিখব সে বিষয়ে হয়তো। তবে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল যাই হোক না কেন, বাংলা দুই সাবজেক্টের রেজাল্ট কিন্তু ভালো ছিল।

যাই হোক ভাগ্য সুইডেনে আসার পরও একই থেকে গেল। কী আর করা বিদেশে পড়তে এসেছি লেখাপড়া গোল্লায় গেলে তো মান-ইজ্জত যাবে। ছোটবেলা থেকে জেনেছি সবাই বিদেশে আসে উচ্চ শিক্ষার্থে তাও দেশের সব লেখাপড়া শেষ করে। আমি এসেছি এইসএসসি পাস করে। বিশাল চ্যালেঞ্জ, ঠিকমতো লেখাপড়া না হলে তো খবর হয়ে যাবে।

১৯৮৫ সালের কথা বলছি। আজ যেমন দেশের মানুষ বিদেশে আসে চাকরি করতে আমার সময় বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে বিদেশে আসতো শুধু উচ্চশিক্ষার্থে আর কিছু আসতো তাদের নাকি দেশে থাকলে জীবন নাশের সম্ভাবনা তাই। যাই হোক লেখার মূল বিষয়ে ফিরে যাই এখন।

আমি পলের ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। বলেছি আগেই সমবয়সি তারপর একই ডর্মিটরিতে থাকি। উইকেন্ডে পার্টি হলে আমি ওর বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গেই বেশি মিশতাম, নিজ ক্লাসের বন্ধুদের সঙ্গে না মেশার পেছনে দুটো কারণ ছিল। প্রথমত, সবাই বলতে গেলে ছেলে। দ্বিতীয়ত, দেখা হলে ইংরেজিতে কথা। থাকি এখন সুইডেনে, পড়ি সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে, এমনিতেই যথেষ্ট ইংরেজি রয়েছে, তারপর টোফেল পাস করে এসেছি দেশ থেকে। মোটামুটি ম্যানেজবল, কিন্তু সুইডিশ তো ম্যানেজবল হলে চলবে না? তো পলের গ্রুপেই সুযোগ সুবিধে বেশি তারপর মজা আছে বান্ধবীদের সঙ্গে মিশে। তখন আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা ‘লজ্জা’। আমার লজ্জা লাগে কথা বলতে। মেয়েদের সঙ্গে কখনো তো কথাই বলিনি দেশে থাকতে। গোপনে গাপনে একটু আধটু চিঠি লিখেছি তাতেই খবর হয়ে গেছে। এখন নতুন জীবন, কী করি! বড়ই বিপদ।
 
এদিকে পল সুইডিশের লজ্জা আমার থেকে আরও বেশি, ল্যাও ঠ্যালা। হাতে হারিকেন সেখানে বাঁশ। পল এদিকে ক্লাসের এক মেয়ের প্রেমে পড়েছে বাঙালিদের মতো। আমি বললাম পল তোর অবস্থা তো বাংলাদেশিদের মতো হবে শেষে, শালা তুই তো দেবদাস হবি পরে। ও বললো দেবদাস কী? আমি মনে মনে বল্লাম ধরা তো ভালো মতো খাইছি, সুইডিশ ভাষার যে অবস্থা সবে মাস খানেক হইছে এসেছি, কীভাবে এখন দেবদাস কী তা বুঝাবো? পরে বল্লাম ওই ধর রোমিও এবং জুলিয়েটের প্রেম। শালা তৎক্ষণাৎ বলে যে তাদের তো পারিবারিক সমস্যা ছিল, আমাদের তো সে সমস্যা না। আমি বল্লাম তোর আবার কী সমস্যা। পল বললো যে আমার লজ্জা লাগে, আমি তো তারে বলতেই পারছিনে যে, আমিও তাকে পছন্দ করি, ভালোবাসি। কী বিপদ, নিজেই যে রোগে ভুগছি, কিভাবে বন্ধু পলকে সাহায্য করব? বন্ধু মানুষ কিছু একটা না করলেও তো হবে না। বল্লাম বন্ধু শোন, লজ্জা হচ্ছে নারীদের জন্য, আমাদের লজ্জা মানায় না। পল তখন বললো তাহলে তুই কেন লাজুক? আমি বললাম আমি লাজুক তোকে কে বলল? পল বলল আমার ক্লাসের একটি মেয়ে বলেছে। আমি এবার শুধু বিপদ নয় মহাবিপদে পড়লাম, মুহূর্তে মনের মধ্যে ঘণ্টার কাঁটা বাজতে শুরু করল, কে সেই সুন্দর কে?

সেদিন শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে বসে পড়ছি। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন একটু চিমটি দিয়ে বললো রহমান কী করো? চেয়ে দেখি সুফিয়া, বল্লাম একটু সুইডিশ পড়ছি। সুফিয়া বললো, তা কেমন চলছে? বললাম, কী মনে হয়? মোটামুটি বলেই সুফিয়া জিজ্ঞেস করল, What is the secret of love?

-আমি আন্দাজে জোকস করে বল্লাম, Close your eyes and just love, এটাই সিক্রেট।

-কথাটি শুনে সে অবাক হয়ে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।

-আমি বললাম কী দেখছো?

-সে বলল, তোমাকে।

-আমি বললাম এত দিন ধরে তাহলে কী দেখেছো?

-সে তারও উত্তরে বলল, তোমাকে।

-আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তাহলে?

-উত্তরে সে বলল, তোমার মতো এত সুন্দর মনের মানুষ এর আগে অন্য কাউকে দেখিনি, বলেই চোখ বন্ধ করে মুখে মুখ লাগিয়ে লাইব্রেরিতে জনসমুদ্রের সামনে একটি চুম্বন লাগিয়ে দিব্বি চলে গেল।

তারপর? তার আর পর নেই, কিছু দিন পরে বিরহের কথা লিখে একটি চিঠি এসেছিল। কে লিখেছিল, কী লিখেছিল, কাকে লিখেছিল? সুফিয়া লিখেছিল আমাকে। পল সম্পর্কে, সেও নাকি মনেপ্রাণে পলকে ভালোবাসতো কিন্তু পল এত লাজুক ছিল যে ভালোবাসার ফুল তাদের মাঝে ফোটেনি তখন। পরে সুফিয়া অন্য একজনকে বিয়ে করে এতটুকু শুনেছি।

বহু বছর পর আজ পল হঠাৎ টেলিফোন করেছে আমাকে। আমি স্টকহোম আরলান্ডা এয়ারপোর্টে বসে আছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার প্লেন ছাড়বে লন্ডনের উদ্দেশে। ফোন ধরে হ্যালো বলতেই জানলাম পল। কী ব্যাপার পল কেমন আছো, কোথায় আছো, কী করছো?

পল বিনাদ্বিধায় বলে গেল, রহমান আমার বউ নেই, সন্তান নেই, পরিবার নেই, আছে একটি অ্যাপার্টমেন্ট, থাকি একা, কেউ নেই, কিছু নেই। আমি চুপ হয়ে গেলাম, আমার বলার কিছু ছিল না। আজও সেই সুফিয়ার অপেক্ষায় পল, যার ফলে সে জীবনে বিয়েও করেনি!

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

[প্রিয় পাঠক, যুগান্তর অনলাইনে পরবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাসে আপনার কমিউনিটির নানান খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন jugantorporobash@gmail.com এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]
যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

সাংবাদিকতায় এওয়ার্ড পেয়েছেন নির্জন মোশাররফ

 মারিয়াম মুন, অস্ট্রেলিয়া 
২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৭:১১ এএম  |  অনলাইন সংস্করণ

অস্ট্রেলিয়ায় সাংবাদিকতায় অবদান রেখে ‘অনার অব জার্নালিষ্ট’ এওয়ার্ড পেয়েছেন নির্জন মোশাররফ।

সম্প্রতি সিডনিতে অনুষ্ঠিত এক আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে সিডনির স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা এ পুরষ্কার তুলে দেন। পুরস্কারে বিবেচনায় রাখা হয় জন-বান্ধব সাংবাদিকতা, বস্তুনিষ্টতা ও  সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা।

সিডনির পেরিপার্কের স্থানীয় হল রুমে এক বর্ণিল আয়োজনে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। আয়োজনের নেপথ্যে কাজ করে স্থানীয় গনমাধ্যম নবধারা নিউজ। গণমাধ্যটির দশবছর পূর্তির মাইলফলকে সাংবাদিকতাসহ আরো বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে গুনীজনদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি কার্ল সালেহ, রাজ দত্ত, ডক্টর সাবরিন ফারুকী, ভাদ্রা উবায়বা, খলিল মাসুদসহ আরো অনেক গন্যমান্য বাক্তিবর্গ।

নবধারার কর্ণধার আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটিতে যোগদেন স্থানীয় মিডিয়া ব্যাক্তিত্বসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও পেশাজীবী অভিবাসীরা।

নির্জন মোশাররফ বাস করেন ওয়ের্স্টান অস্ট্রেলিয়ার পার্থে।সাংবাদিকতায় আছে চৌদ্দ বছরের অভিজ্ঞতা।বর্তমানে কাজ করছেন জনপ্রিয় গনমাধ্যম বাংলাভিশন টেলিভিশন ও ঢাকা পোস্টে।

সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ প্রেস এন্ড মিডিয়া ক্লাবে। টিম লিডার (ওয়ের্ষ্টান অস্ট্রেলিয়া) হিসেবে যুক্ত আছেন এমএলসি ইন্টারন্যাশনালে। লেখালেখি করছেন প্রবাসে থেকে। ’ডার্ক চকলেট’ উপন্যাস দিয়ে লেখক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছেন। রোমান্টিক ঘরনার থ্রিলার উপন্যাসটি এবছর বাজরে এসেছে ।

প্রকাশ পেয়েছে আন্তজার্তিক ভাবেও। ঢাকা, সিডনি ও লন্ডনে আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উন্মোচন হয় গ্রন্থটির। প্রকাশের অপেক্ষামান আছে আরো বেশ কয়েকটি থ্রিলার উপন্যাস।

নির্জন মোশাররফের পুরো নাম মোশাররফ হোসেন নির্জন। সাংবাদিকতার খাতে খড়ি দৈনিক ভোরের কাগজে।তিনি ব্যাক্তিগত জীবনে বিবাহিত।তার সহধর্মনীও সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন ডিবিসিতে।

নির্জন মোশাররফ ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার তিতাস বিধৌত আখাউড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। রেলওয়ে স্কুল, ভিক্টোরিয়া কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যায়ন করে পাড়ি জমান সদূর অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে ইডিথ কাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর সম্পন্ন করেন।

[প্রিয় পাঠক, যুগান্তর অনলাইনে পরবাস বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাসে আপনার কমিউনিটির নানান খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন jugantorporobash@gmail.com এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]
যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
No more pages