রোজা ও ঈদ আমাদের যে বার্তা দেয়

 মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান, অনুবাদ: মহিউদ্দিন মণ্ডল 
০১ মে ২০২২, ০৪:১২ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

রমজান মাস শেষ হওয়ার পরপরই আসে ঈদের দিন। এই ক্রমপর্যায় খুবই অর্থবহ। এটি একজন মুমিনের জীবনের দুই স্তরের প্রতীক।

রোজা আমাদের পার্থিব জীবনের প্রতীক, আর ঈদ আমাদের আখেরাতের প্রতীক। রোজা একটি পরীক্ষার মতো, এবং ঈদ তার সমাপ্তি। রোজা হলো বিধিনিষেধের পর্যায়, আর ঈদ হলো মুক্তির পর্যায়। রোজা হলো পরিশ্রম ও ধৈর্যের সময়, আর ঈদ হলো বিশ্রাম ও আনন্দের সময়।

হাদিসে উল্লেখ আছে যে, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। প্রথম খুশি ইফতারের সময়, আর দ্বিতীয় খুশি যখন সে তার সৃষ্টিকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করবে (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৯০৪, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১১৫১) ।

রোজা রেখে একজন ব্যক্তি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করে। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর সে তার রোজা ভাঙ্গে এবং পানাহার পান করে। তখন তার অবস্থা হাদিসে নিম্নোক্ত শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে : তৃষ্ণা মিটে গেছে এবং শিরা-উপশিরা ভিজে গেছে এবং অগণিত সওয়াব প্রাপ্ত হয়েছে, ইনশাআল্লাহ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ২৩৫৭) ।

রোজা রাখা এবং রোজা ভঙ্গ করা দুটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা। মুমিনের জন্য রোজা হলো দুনিয়ার জীবনের অভিজ্ঞতা আর ইফতার হলো আখেরাতের জীবনের অভিজ্ঞতা। আখেরাতে সে সুখ এবং স্বাদ ভোগের জন্য মুক্ত হবে। 

এভাবে রোজার সময় হলো দুনিয়ার প্রতীক, আর ইফতারের সময় হলো আখেরাতের প্রতীক। রমজান মাস পার্থিব জীবনের প্রতীক, এবং ঈদ, যা বৃহত্তর ইফতারের দিন, আখেরাতের জীবনের পরিচয় দেয়।

যখন মানুষ রমজানের দিনগুলিতে রোজা রাখে, তখন রোজা তার জন্য পার্থিব জীবনের নিদর্শন হয়ে ওঠে। রোজা অবস্থায় তার মানসিকতা এমন হয় যে, ‘আমি যেমন খাওয়া-দাওয়া থেকে নিজেকে সংযত রেখেছি, তেমনি আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা থেকেও বিরত থাকতে হবে। এই পৃথিবীতে আমাকে সারাজীবন রোজা রেখে জীবনযাপন করতে হবে।’

অতঃপর যখন সন্ধ্যা হয়ে যায় এবং সে ইফতার করে তখন তার মনে হয়, সে যেন আখিরাতের দুনিয়ায় পৌঁছে গেছে এবং মহান আল্লাহ তাকে আপ্যায়ন করছেন। 

দু’চোখ ভরে অঝোর নয়নে সে চিৎকার করে বলে: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার জন্য রোজা রেখেছি, এখন আমার জন্য ‘ইফতার’ করছি।। আমি আপনার জন্য রমজানের রোজা সম্পন্ন করেছি, এখন আমার উপর অনন্ত ঈদের অসীম বরকতের দরজা খুলে দিন।’

রোজায় সকাল থেকে সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধের মধ্যে দিন অতিবাহিত হয়। এটা করো, ওটা করো না, তারপর এখন খাও তখন খাবে না, কখন ঘুমাতে হবে আর কখন বিছানা থেকে উঠতে হবে, পুরো একটি মাস এমনভাবে কাটে যেন তার পুরোজীবনটা অন্যের অধিকারে। 

মানুষকে অন্যের ইচ্ছা অনুসরণ করতে হবে, নিজের ইচ্ছা নয়। এভাবে, রোজা  মানুষকে এমনভাবে জীবনযাপন করতে শেখায় যে, সে আল্লাহর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, সমস্ত বিষয়ে আল্লাহর আদেশ পালন করে।

এইভাবে পুরো মাস নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে চলার পর ঈদের দিন আসে। ঈদের দিনে হঠাৎ করেই সব নিয়ম পাল্টে যায়। আগে রোজা ফরজ ছিল, এখন (ঈদের দিন) রোজা রাখা হারাম। আগে এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসও নিষিদ্ধ ছিল, এখন বলা হচ্ছে অবাধে ঘুরে বেড়াতে এবং ঈদ উদযাপন করতে। 

এমনকি গরীবদের জন্যও দান-খয়রাত নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে তারাও আজকের আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত না হয়। এ যেন পরকালের ছবি। এটা সেই দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যেদিন আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের উপর থেকে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। তারা চিরন্তন আরাম ও অনন্ত সুখের স্বর্গে প্রবেশ করবে, যদিও তারা আজ অন্যদের নিকট দুর্বল এবং মূল্যহীন মনে হতে পারে।

আসল কথা হল, রোজা এবং ঈদ মানেই আমাদের জীবনের দুটি পর্যায়কে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। রোজা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের এই পৃথিবীতে কীভাবে জীবনযাপন করা উচিত এবং ঈদ আমাদেরকে বলে যে আমাদের আখেরাতের জীবন কেমন হবে। একটি হল দুনিয়ার জীবনের প্রাথমিক নিদর্শন, আর অন্যটি পরকালের জীবনের প্রাথমিক নিদর্শন।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন