যেভাবে আজওয়া-মরিয়ম খেজুর চাষ করে কোটিপতি গণিতে ডিগ্রিধারী বাদল (ভিডিও)

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:১৪ এএম  |  অনলাইন সংস্করণ

উচ্চশিক্ষা শেষে তরুণদের ঝোক যেখানে চাকরির দিকে, সেখানে ব্যতিক্রম নজরুল ইসলাম বাদল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক করা এই যুবক সাত বছর আগে যখন কৃষিকাজে মনোনিবেশের সিদ্ধান্ত নেন, তখন বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করত। 

কিন্তু আত্মপ্রত্যয়ী বাদল নিজ সিদ্ধান্তে অনঢ় ছিলেন। ২০১৫ সালে শুরুর দিকে প্রবাসী এক বন্ধুর সহযোগিতায় দেশের মাটিতে বিদেশি খেজুরের চাষ ও নার্সারি করার পরিকল্পনা করেন। মরুভূমি অঞ্চলের ফল আজওয়া-মরিয়ম বাংলাদেশের কাদামাটির ফলানো সম্ভব কিনা তখন তা নিয়েও ভাবনার অন্ত ছিল না বাদলের। 

ওই বন্ধুর সহযোগিতায় বিশ্বের ছয় দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের খেজুরের বীজ ও চারা সংগ্রহ করেন বাদল। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়নের আলিমপাড়ায় নিজের ৭০ শতক জমিতে গড়ে তোলেন খেজুরবাগান। প্রথমে ১৮টি চারা রোপণ করে মরুর খেজুরের চাষ শুরু করেন। এর জন্য প্রথমে তার খরচ হয়েছে ৫২ লাখ টাকা।

২০১৭ সালে তার বাগানের গাছগুলোতে ফলন আসতে শুরু করে। একেকটি খেজুরের বাধার ওজন ছিল প্রায় ২৫ কেজি। খেজুরের বীজ কিংবা সাকার থেকে চারা উৎপাদন করে খেজুরের নার্সারিও গড়ে তোলেন বাদল। সেই বছরেই বাগান থেকে ৬২ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেন।

এর পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজ বাগানের সুস্বাদু খেঁজুর ও চারা বিক্রি করে মাত্র সাত বছরেই কোটিপতি হয়েছেন তিনি। এখন তাকে নিয়ে গর্ব করেন বন্ধু, এলাকাবাসী।

বর্তমানে তার বাগানে ও নার্সারিতে ১৬ প্রজাতির খেজুরগাছ রয়েছে। বাদলের খেজুরের বাগানে যেসব জাত রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— আজওয়া, মরিয়ম, আম্বার, খুনিজি, হেলালি, ম্যাডজেলি, বারহি, খালাস, ওমানি, সুক্কারি, সাফাওয়ি ইত্যাদি। 

ভিডিও 

ব্যাপক চাহিদার জোগান দিতে তিনি আরও ১৪ জাতের চারা বাইরে থেকে এনেছেন। বর্তমানে নার্সারিসহ তার খেজুরবাগানটি সাড়ে ৭ বিঘায় সম্প্রসারিত করেছেন।

বাদলের বাগানের প্রতিটি সাকার ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খেজুর ধরা অবস্থায়ও চারা বিক্রি হচ্ছে তিন লাখ টাকায়। 

বাদল জানান, সিজনে একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে ৮-১২টি বাধি ধরে। প্রতি বাধিতে ২৫ থেকে ৩০ কেজি করে খেজুর হয়। তা ছাড়া বীজ থেকে উৎপাদিত চারায় ফলন আসতে সময় লাগে ৩-৪ বছর। বীজ থেকে উৎপাদিত চারার দাম তুলানমূলক কম। এখানে চারা ছাড়াও খেজুরও বিক্রি করা হয়।

একটু উদ্যোগী হলে খেজুরের চাহিদা দেশেই মেটানো সম্ভব বলে মনে করেন বাদল। তিনি জানান, দেশে বছরে প্রায় ৩০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। যার পুরোটাই আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। দেশে খেজুরবাগান করতে সরকারের কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশে উৎপাদিত খেজুরই দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। 

বাদল আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে সহজশর্তে ব্যাংকঋণ, কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারলে দেশে খেজুর চাষে হাজারো চাষি তৈরি হবে। কৃষকের মধ্যে খেজুর চারা সহজলভ্য ও কমমূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ হতে পারে খেজুর উৎপাদনের সম্ভাবনাময় দেশ। ৩৭ বছর বয়সি এ পরিশ্রমী যুবক দেশের মরুভূমির ফল খেজুর চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি এখন তার এই উদ্যোগ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তার এ সফলতা খেজুর চাষে আগ্রহীদের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। খেজুর আবাদের সফলতায় দেশের বিভিন্ন জেলার আগ্রহী চাষিরাও তার কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে খেজুর চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন।

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, আমি প্রায় ৯ মাস হয় গাজীপুরে যোগদান করেছি। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামে কয়েক বিঘা জমিতে সফলভাবে সৌদির খেজুর চাষ করছেন বাদল। বাংলাদেশে সৌদি আরবের খেজুর চাষ একটি সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য। এর জন্য কৃষিপর্যায়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন