‘আমির হামজাকে দেওয়া স্বাধীনতা পুরস্কার পুনর্বিবেচনা করা উচিত’

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
১৮ মার্চ ২০২২, ০৪:৩৬ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

‘এবারে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার উপযুক্ত ব্যক্তিকে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা জাতির জন্য অসম্মানজনক। কীভাবে এমন একজন ব্যক্তি পুরস্কার পেলেন, যা দুঃখজনক। মো. আমির হামজা নামের ব্যক্তিকে ঘোষিত সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’ 

শুক্রবার এফডিসিতে ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্বাধীনতা দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২২’ এর গ্র্যান্ড ফাইনালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজাকারদের প্রকৃত তালিকা করা। রাজাকার ছাড়া বাকি সবাই কোনো না কোনোভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এটা ছিল জনযুদ্ধ। আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে সত্য কিন্তু সমসুযোগ ও সুশাসন বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে স্বাধীনতার মূলনীতি থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা এখনো পাইনি।কেবল ভোটেই গণতন্ত্র নয়, সমসুযোগ ও সামাজিক নিরাপত্তাই হলো প্রকৃত গণতন্ত্র। স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষের চেয়েও বর্তমানে বড় সমস্যা হলো ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মানসিকতা।’ 

সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য আমাদের যে দেশপ্রেম ছিল, আজ সে দেশপ্রেম নেই, আজ কেবল আত্মপ্রেম। আজ সমাজের উন্নয়ন হচ্ছে না, হচ্ছে ব্যক্তির উন্নয়ন। যখনই সমাজে বিপদ আসছে তখনই ধনীদের আরও উন্নয়ন হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সলর প্রফেসর ড. গণেশ চন্দ্র সাহা। 

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল পেতে শুধু রাজনৈতিক মুক্তি পেলেই চলবে না। দরকার সামাজিক, অর্থনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি। সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধসহ বৈষম্যহীন, অসম্প্রদায়িক ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক দুর্নীতি মুক্ত রাষ্ট্র গড়ে তোলা। তাহলেই স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য যারা রাজনীতি করে তারা যেমন জনগণের বন্ধু হতে পারে না, তেমনি যারা শুধু ক্ষমতায় যাবার জন্য তারাও জনগণের বন্ধু নয়। রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেশপ্রেমের ঘাটতি ঘটলে স্বাধীনতার স্বপ্ন ভূলণ্ঠিত হয়। 
 
কিরণ আরও বলেন, আমি জানি না এবারের স্বাধীনতা পদক প্রদান কমিটিতে কারা জুরি ছিলেন। এবারের স্বাধীনতা পদকের মতো রাষ্ট্রীয় মর্যাদার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা একজন অচেনা ও অখ্যাত সাহিত্যিক কীভাবে পেলেন তা এখন সবার কাছে প্রশ্ন। আমির হামজা নামের ওই ব্যক্তির বই পড়েননি বা তার সম্পর্কে জানেন না বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনসহ প্রায় সব বিশিষ্টজনরা। ইতোপূর্বে ২০২০ সালেও রইজ উদ্দিন নামের একজনকে সাহিত্যে স্বাধীনতার পুরস্কারের জন্য নাম ঘোষণা করা হলেও, পরবর্তিতে নানা সমালোচনায় রইজ উদ্দিনকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার প্রদানে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা পরিহারের জন্য এর নির্বাচন প্রক্রিয়া বদলানো উচিত। 

স্বাধীনতার দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনালে ঢাকা সিটি কলেজকে পরাজিত করে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। চ্যাম্পিয়ন দলের বিতার্কিকদের নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং রানার আপ দলকে নগদ ৩০ হাজার টাকাসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন- অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, ড. মোহাম্মদ শাহ আলম চৌধুরী ও সাংবাদিক পার্থ সঞ্জয়। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন