কবি সুফিয়া কামাল সম্মাননা পেলেন ইফ্ফাত আরা দেওয়ান

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
২৪ জুন ২০২২, ০৯:৪৬ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

কবি সুফিয়া কামাল সম্মাননা পেলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী ইফ্ফাত আরা দেওয়ান। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সোমবার বিকাল ৪টায় বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি সুফিয়া কামালের ১১১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠিত হয়। ‘সুফিয়া কামাল স্মারক বক্তৃতা ও সম্মাননা’ অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কবি সুফিয়া কামালের জীবন ও কর্মের উপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সংগীত পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী বুলবুল ইসলাম ও সুষ্মিতা আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। ‘সুফিয়া কামাল ও নারীবাদী আন্দোলন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। এ বছর সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তির পরিচিতি পাঠ করেন সংগঠনের অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, কবি সুফিয়া কামালের জন্মবার্ষিকী পালনের সঙ্গে আমাদের একটা আত্তিক সম্পর্ক আছে। নারী আন্দোলন সামাজিক আন্দোলনের অংশ, যা মহিলা পরিষদের দীর্ঘ পদযাত্রায় প্রমাণিত। বিশ্বব্যাপী বহমান নারী আন্দোলন বাংলাদেশে নারী আন্দোলনকে সঞ্জীবিত করবে। আর জাতীয় বিকাশে নারীর অংশগ্রহণ আরও অগ্রগামী করবে। আজকের স্মারক বক্তৃতায় নারীবাদ ও নারী আন্দোলনের পারস্পারিক সম্পর্ক বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। যা আগামী দিনের নারী আন্দোলনকে সাহায্য করবে। 

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, শত বছর আগে কবি সুফিয়া কামাল রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এ সময় মেয়েদের ব্যক্তিস্বাধীনতা, চলাচল, শিক্ষাগ্রহণ এবং সাংস্কৃতিক চর্চা ছিল বেশ কঠিন। এমন এক প্রতিকূল সময়ে কবি সুফিয়া কামাল স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আÍমর্যাদাসম্পন্ন, স্বাধীনচেতা এবং অসাম্প্রদায়িক মানুষ হয়ে ওঠেন। বেগম রোকেয়ার নারীবাদী দর্শনের সঙ্গে তার সংশ্রব ঘটে। তার নানা ধরনের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারী মুক্তির আন্দোলন অগ্রসর হতে থাকে। তিনি নারী মুক্তির আন্দোলন, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন সৃষ্টিশীল উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে প্রতি বছর কবির জন্মবার্ষিকী পালনের মাধ্যমে তার জীবন-কর্মের আলেখ্য তরুণ প্রজন্মসহ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস অব্যাহত রাখবে এই প্রত্যাশা রইল। 

স্মারক বক্তৃতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, নারীর মুক্তিকে মানবমুক্তি হিসাবে দেখার যে মন্ত্র বেগম রোকেয়া ছড়িয়েছিলেন, সেই মন্ত্রে এবং কাজে দীক্ষিত ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল। তাকে কেন্দ্র করেই রোকেয়া-পরবর্তী বাংলাদেশের নারী আন্দোলন অগ্রসর হতে থাকে। তার সাহিত্যিক অভিযাত্রায় বেগম রোকেয়ার নারীবাদী প্রভাব ছিল। পাশাপাশি নারী সাহিত্যিক হিসাবে লেখায় নারীর প্রতি সুষ্পষ্ট দায়বদ্ধতার দৃশ্যমানতা, বেগম রোকেয়ার সঙ্গে কাজ করে আসার অভিজ্ঞতাসহ নারীর জন্য আন্দোলন করার অভিজ্ঞতা এবং সাম্প্রদায়িক বাধাকে মোকাবিলা করে নারী সমাজের মুক্তির জন্য সুফিয়া কামালের সক্রিয় ভূমিকা পালন এদেশের নারী আন্দোলনের অবিসংবাদিত আইকনে পরিণত করে। 

তিনি আরও বলেন, ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ গঠিত হওয়ার পর এদেশের নতুন নারীদের আন্দোলন-সংগ্রামের মশালবাহক হয়ে ওঠেন সুফিয়া কামাল। তিনি দীর্ঘ সংগ্রামী অভিজ্ঞতায় বুঝেছিলেন, দেশের সব নারী আন্দোলনকারী সংগঠনকে একসূত্রে বেঁধে, একস্বরে নারীনির্যাতন বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলেই কেবল সাফল্য আশা করা সম্ভব। নারী আন্দোলনের নতুন বিকাশ ও বিস্তারের পাশাপাশি সত্তরের দশক থেকে পাশ্চাত্যের নারীবাদী চিন্তা ও কর্মসম্পাদন কৌশলের প্রয়োগযোগ্যতা এদেশের প্রেক্ষাপটে বিচার করে গ্রহণ-বর্জনের বিবেচনা করেছেন এবং যে দীর্ঘ সময় ধারাবাহিকভাবে নারীমুক্তি আন্দোলনে তিনি দিয়েছেন, এত দীর্ঘ সক্রিয়তা দেশে তো বটেই সারা বিশ্বের বিচারেই বিরল হয়ে থাকবে। 

সম্মাননাপ্রাপ্ত বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী ইফ্ফাত আরা দেওয়ান স্মৃতিচারণ করে বলেন, শৈশব থেকেই কবি সুফিয়া কামালের সঙ্গে সময় কেটেছে। আমার সংগীত কর্মসহ সব কর্মকাণ্ডের প্রেরণাদাত্রী ছিলেন তিনি।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন