অপপ্রচার ও সহিংসতা বন্ধে বিদ্যমান আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন দাবি
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উদ্যোগে বুধবার সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকালে ‘গণতন্ত্র, ইহজাগতিকতা ও নারী এবং সংখ্যাল্প জনগোষ্ঠীর অধিকার’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বিশেষ অতিথি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সিনিয়র বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহফুজ আলী, প্রাগ্রসরের নির্বাহী পরিচালক ফওজিয়া খন্দকার, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী নেটওয়ার্ক-এর সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা, আদিবাসী যুব ফোরামের নেত্রী মুনিরা ত্রিপুরা, পরিবেশ বার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহম্মেদ, কৃষক সমিতি নেতা মানবেন্দ্র দেব, আইইডি-এর সমন্বয়কারী তারিক হোসেন, স্টেপস টুওয়াডস ডেভেলপমেন্টের সমন্বয়কারী চন্দন লাহেড়ী, নারীনেত্রী মাসুদা রওশন ও ফ্রিল্যান্স কনসাল্টটেন্ট মাহফুজা মালা প্রমুখ। পরিচালনা করেন বিএনপিএস-এর উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী।
সভাপতির বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, নির্বাচন সামনে এলেই রাজনৈতিক দলগুলোকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলতে শুনি। নারী, সংখ্যাল্প ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোথায়? জনগোষ্ঠীর শতকরা ৫০ শতাংশ নারী। অথচ তাদের বিরুদ্ধে ও অপরাপর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, তাদের প্রতি বৈষম্য টিকিয়ে রাখতে ধর্মকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। এটা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সংবিধানে বলা আছে, এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। আমরা প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সমনাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোডের (এনসিটিবি) জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, গণতন্ত্রমনা, মানবিক, জেন্ডার ও সংখ্যাল্প জনগোষ্ঠীর প্রতি সংবেদনশীল মানস গঠনে পাঠ্যপুস্তকের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাকরণ পড়াই, বিজ্ঞান পড়াই, গণিত পড়াই কিন্তু তারা এগুলো কেন পড়ছেÑতা তারা জানে না। শিক্ষার দর্শন ও আদর্শ শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্ট করা জরুরি। এর মাধ্যমেই সমাজের চিন্তাভাবনার বদল ঘটানো সম্ভব। আমরা নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কাজ করছি। এতে জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও সব নাগরিকের অধিকারের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি হলেও কর্মস্থলে নারী-পুরুষের মধ্যে অসমতা রয়েছে। এ অসমতা দূর করতে চাইলে রাজপথের লড়াইয়ের পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ জোট থাকা জরুরি। শ্রমজীবী নারী এ জোটের একটা বড় অংশ হতে পারে। শক্তিশালী নারী অধিকারবিষয়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।
নারী অধিকার কর্মী মাহফুজা মালা বলেন, দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে গুজব রটিয়ে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। যার ফলে সংখ্যাল্প জনগোষ্ঠীর প্রার্থনাস্থল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসবাসস্থান এবং সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় আলোচনায় নারী ও সংখ্যাল্প জনগোষ্ঠী বিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণা বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রাগ্রসরের নির্বাহী পরিচালক ফওজিয়া খন্দকার বলেন, শ্রেণি বৈষম্য পরিবর্তন না করলে সমাজের সার্বিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। সমনাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে চাইলে এর আদর্শ পরিবারে-সমাজে-রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করা দরকার। কেবল রাষ্ট্রের নয়, আমাদের নিজেদেরও যার যার নিজস্ব ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। ধর্মীয় আধিপত্যবাদকে রুখতে চাইলে আমাদের পালটা শক্তিশালী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
কৃষক আন্দোলনের নেতা মানবেন্দ্র দেব বলেন, আমরা যে ধরনের বৈষম্যমুক্ত শুভবুদ্ধির সমাজ চাই, তা গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির পথে বড় ধরনের বাধা। গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাইলে রাজনৈতিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। এ জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
অপপ্রচার ও সহিংসতা বন্ধে বিদ্যমান আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন দাবি
যুগান্তর প্রতিবেদন
৩০ জুন ২০২২, ২২:০৯:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উদ্যোগে বুধবার সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকালে ‘গণতন্ত্র, ইহজাগতিকতা ও নারী এবং সংখ্যাল্প জনগোষ্ঠীর অধিকার’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বিশেষ অতিথি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সিনিয়র বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহফুজ আলী, প্রাগ্রসরের নির্বাহী পরিচালক ফওজিয়া খন্দকার, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী নেটওয়ার্ক-এর সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা, আদিবাসী যুব ফোরামের নেত্রী মুনিরা ত্রিপুরা, পরিবেশ বার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহম্মেদ, কৃষক সমিতি নেতা মানবেন্দ্র দেব, আইইডি-এর সমন্বয়কারী তারিক হোসেন, স্টেপস টুওয়াডস ডেভেলপমেন্টের সমন্বয়কারী চন্দন লাহেড়ী, নারীনেত্রী মাসুদা রওশন ও ফ্রিল্যান্স কনসাল্টটেন্ট মাহফুজা মালা প্রমুখ। পরিচালনা করেন বিএনপিএস-এর উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী।
সভাপতির বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, নির্বাচন সামনে এলেই রাজনৈতিক দলগুলোকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলতে শুনি। নারী, সংখ্যাল্প ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোথায়? জনগোষ্ঠীর শতকরা ৫০ শতাংশ নারী। অথচ তাদের বিরুদ্ধে ও অপরাপর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, তাদের প্রতি বৈষম্য টিকিয়ে রাখতে ধর্মকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। এটা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সংবিধানে বলা আছে, এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। আমরা প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সমনাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোডের (এনসিটিবি) জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, গণতন্ত্রমনা, মানবিক, জেন্ডার ও সংখ্যাল্প জনগোষ্ঠীর প্রতি সংবেদনশীল মানস গঠনে পাঠ্যপুস্তকের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাকরণ পড়াই, বিজ্ঞান পড়াই, গণিত পড়াই কিন্তু তারা এগুলো কেন পড়ছেÑতা তারা জানে না। শিক্ষার দর্শন ও আদর্শ শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্ট করা জরুরি। এর মাধ্যমেই সমাজের চিন্তাভাবনার বদল ঘটানো সম্ভব। আমরা নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কাজ করছি। এতে জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও সব নাগরিকের অধিকারের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি হলেও কর্মস্থলে নারী-পুরুষের মধ্যে অসমতা রয়েছে। এ অসমতা দূর করতে চাইলে রাজপথের লড়াইয়ের পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ জোট থাকা জরুরি। শ্রমজীবী নারী এ জোটের একটা বড় অংশ হতে পারে। শক্তিশালী নারী অধিকারবিষয়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।
নারী অধিকার কর্মী মাহফুজা মালা বলেন, দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে গুজব রটিয়ে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। যার ফলে সংখ্যাল্প জনগোষ্ঠীর প্রার্থনাস্থল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসবাসস্থান এবং সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় আলোচনায় নারী ও সংখ্যাল্প জনগোষ্ঠী বিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণা বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রাগ্রসরের নির্বাহী পরিচালক ফওজিয়া খন্দকার বলেন, শ্রেণি বৈষম্য পরিবর্তন না করলে সমাজের সার্বিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। সমনাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে চাইলে এর আদর্শ পরিবারে-সমাজে-রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করা দরকার। কেবল রাষ্ট্রের নয়, আমাদের নিজেদেরও যার যার নিজস্ব ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। ধর্মীয় আধিপত্যবাদকে রুখতে চাইলে আমাদের পালটা শক্তিশালী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
কৃষক আন্দোলনের নেতা মানবেন্দ্র দেব বলেন, আমরা যে ধরনের বৈষম্যমুক্ত শুভবুদ্ধির সমাজ চাই, তা গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির পথে বড় ধরনের বাধা। গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাইলে রাজনৈতিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। এ জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2024