মানবাধিকার সুরক্ষায় নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ক অধিবেশন

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
২৩ জুলাই ২০২২, ১০:৩১ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্যের আলোকে প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন হয়। 

নারীর মানবাধিকার সুরক্ষায় নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিষয়ে ৩টি বিভাগের (ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা) ২৭টি জেলা শাখার নেতারা এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। 

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম। সঞ্চালনা করেন জুনিয়র আইনজীবী সিননোমে মারমা।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সাংগঠনিক কাজের ক্ষেত্রে তিনটি স্তম্ভ প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও নির্মাণ। আমরা আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই, যেখানে নারীর প্রতি কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটবে না। নারীর জীবন হবে নিরাপদ এবং তার সব অধিকার বাস্তবায়িত হবে। 

জাতিসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে তিনি বলেন, প্রতি ৩ জনে একজন নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। নারীর প্রতি সহিংসতার মোকাবিলায় নানা আইন থাকলেও আইন প্রয়োগে নানা বাধা আছে। এতে নির্যাতনের শিকার অনেকে বিচারের দ্বারস্থ হচ্ছে না। নারী তার অধিকার ও আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে লড়াই করতে প্রস্তত হলেও আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের যথাযথ সহযোগিতা করছে না। এ অবস্থার পরিবর্তনে আমাদের তৃণমূল থেকে কাজ করতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, কোভিড মহামারি সংকটসহ নানা সংকটজনক পরিস্থিতিতে নারীরা নানা মাত্রায় সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত নারী ও কন্যার প্রতি চলমান এ সহিংসতা প্রতিরোধ ও বৈষম্যকে প্রতিহত করতে হবে। এ লক্ষ্যে তিনি সংগঠনের আন্দোলন কর্মসূচিকে আরও জোরদার করার আহবান জানান। 

তিনি আরও বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজ গঠন করতে হলে ধর্মের ভিত্তিতে নয়, মানুষ হিসাবে আমাদের যেসব অধিকার আছে তা আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুসারে আমাদের সবার কাজ করতে হবে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র নিয়মিত অনুসরণ করার আহ্বান জানান তিনি।

সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী ও কন্যা শিশুর অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছে। সংগঠনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে সব সংগঠককে আরও দক্ষ ও চালু হতে হবে, কাজের ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়কে গভীরভাবে জানতে হবে।

এরপর দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১ম ও ২য় অধিবেশনেরও সভাপতিত্ব করেন সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। ১ম অধিবেশনে হাউজ রুল প্রণয়ন ও প্রত্যাশা চয়ন বিষয়ে আলোচনা করেন জুনিয়র আইনজীবী সিননোমে মারমা ও নিরঞ্জন বিশ্বাস। 

নারী ও কন্যার মানবাধিকার : পরিপ্রেক্ষিত নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, প্রতিকার ও নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। 

নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলনে স্থানীয় পর্যায়ে সাম্প্রতিক সময়ের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে আলোচনা করেন পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লবি ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট দীপ্তি রানী সিকদারসহ অংশগ্রহণকারী নেতারা। 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাতেমা খাতুন। 

২য় অধিবেশনে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ আন্দোলনে সংগঠকদের ভ‚মিকা ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। বাল্যবিয়ের সামাজিক অভিঘাত এবং বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী। 

নারী ও কন্যার মানবাধিকারের সুরক্ষায় পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ এবং পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন সিনিয়র আইনজীবী, অ্যাডভোকেট রাম লাল রাহা এবং নারী ও কন্যার মানবাধিকার : অভিন্ন পারিবারিক আইন (ইউএফসি) বিষয়ে আলোচনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম।
 
জেলা শাখা নেতাদের অংশগ্রহণে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আন্দোলনে সংগঠকদের ভ‚মিকা : পরিপ্রেক্ষিত চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়, সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ আন্দোলনে সংগঠকদের ভূমিকা : পরিপ্রেক্ষিত চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়, সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ আন্দোলনে সংগঠকদের ভ‚মিকা : পরিপ্রেক্ষিত চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয় এবং অভিন্ন পারিবারিক আইন (ইউএফসি) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বিষয়ে দলীয় কাজ অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে সুপারিশমালাও উপস্থাপন করা হয়। 

দলীয় কাজে ফেসিলিটেটর ছিলেন অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী, লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লবি ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট দীপ্তি সিকদার, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাম লাল রাহা এবং কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাতেমা খাতুন। দলীয় কাজের সঞ্চালনায় ছিলেন কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের সদস্য ডা. নাহিদ নবী লেনা। 

সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। বক্তব্য দেন লিগ্যাল এইড উপপরিষদ সম্পাদক রেখা সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের প্রোগ্রাম অফিসার (কাউন্সেলিং) সাবিকুন নাহার। দিনব্যাপী আয়োজিত প্রশিক্ষক কর্মসূচিতে ৩টি বিভাগের ২৭টি জেলা শাখা থেকে নেতারা, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলী, সদস্যবৃন্দ, কর্মকর্তাসহ প্রায় ৭১ জন উপস্থিত ছিলেন।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন