চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ৪৫ নাগরিকের বিবৃতি

 যুগান্তর ডেস্ক 
২২ আগস্ট ২০২২, ১০:২৪ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

দেশের বিশিষ্ট ৪৫ নাগরিক চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছেন। 

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছি, চা বাগানের শ্রমিকরা ৯ আগস্ট থেকে তাদের ন্যূনতম মজুরি দৈনিক ১২০ থেকে টাকা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে প্রথমে ২ ঘণ্টা, পরবর্তী সময়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করে আসছেন। চা বাগানের মালিকপক্ষ তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। 

উপরন্তু ১৪ আগস্ট চা সংসদের (চা বাগান মালিকপক্ষের সংগঠন) পক্ষ থেকে একটি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, চা শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরিতে ভালো আছেন। বর্তমানের এ উচ্চ বাজারমূল্যের সময় দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে কোনো একটি পরিবার কেন, একজন ব্যক্তির সংসারও চালানো সম্ভব নয়। 

দেশে চা শিল্পের বিকাশ ঘটেছে তা-ও প্রায় ১৬৮ বছর। কিন্তু এ ১৬৮ বছরে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬৮ টাকাও করা যায়নি। ১৪ আগস্ট চা মালিকরা ন্যূনতম মজুরি ১২০ থেকে টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা করার প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছে; যা শ্রমিকদের প্রতি অবহেলা ও উপহাসের নামান্তর। 

আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, একজন কৃষি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৩ কেজি ৩৭০ গ্রাম চালের সমপরিমাণ। বর্তমানে গ্রামের একজন মজুরকে সারাদিনের জন্য মজুরি দিতে হয় কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ ছাড়া শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিম্নতম মজুরি বোর্ড বিভিন্ন সেক্টরের যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছে, তা আরও বেশি। 

শুধু তাই নয়, সেখানে প্রতি বছর বেতন বৃদ্ধির বিধান রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চা শ্রমিকদের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ২৩২ রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ২৭৭ টাকা। তারাও এ মজুরি বৃদ্ধির দাবি করছে। সর্ববৃহৎ চা রপ্তানিকারক দেশ শ্রীলংকা, নেপাল, কেনিয়া এবং চীনে দৈনিক মজুরি চা শ্রমিকদের দাবিকৃত মজুরির চেয়েও বেশি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা রয়ে গেল। 

সম্প্রতি, চা বোর্ডের তথ্য অনুসারে দেশের ১৬৭ চা বাগানে ৫ লাখের বেশি চা-জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক প্রায় এক লাখ। একজন শ্রমিকের মজুরির ওপর কমপক্ষে পাঁচজনের ভরণপোষণ নির্ভর করে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে ৩০০ টাকা মজুরি পেলেও তা সম্ভব নয়। 

তাই আমাদের সুস্পষ্ট দাবি-অবিলম্বে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে চা শ্রমিকদের ন্যায়সংগত দাবি, চা বাগান মালিকরা যেন মেনে নেয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তেলের দাম বাড়লে পরের দিনই সরকার ভাড়া সমন্বয় করে। গার্মেন্টস মালিকদের দাবির সঙ্গে সঙ্গে প্রণোদনা দেয়, অথচ চা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির জন্য ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারল না। 
২০২০ সালে শ্রমিক-মালিকদের সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর কথা। মজুরি বাড়ানোর চুক্তি সই করতে চা শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার দাবি জানানো হলেও মালিকপক্ষ আলোচনায় বসেনি। 
সরকারি তথ্য অনুসারে, দেশে মাথাপিছু বার্ষিক আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার অর্থাৎ ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৮০ টাকা। চা শ্রমিকদের বার্ষিক আয় মাত্র ৪৩ হাজার ২০০ টাকা। আমরা চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির প্রতি সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করে তাদের ন্যায্য ও মানবিক ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি; সঙ্গে সঙ্গে তাদের সার্বিক জীবনমান (যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ঝুঁকিপূর্ণ কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার, নারী স্বাস্থ্য) উন্নয়ন ও তদারকিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা হলেন- সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও চেয়ারপারসন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি ও চেয়ারপারসন, এএলআরডি, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, কনভেনর, সিটিজেন প্লাটফর্ম ফর এসডিজি, আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি, শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), ড. স্বপন আদনান, প্রফেশনাল রিসার্স অ্যাসোসিয়েট, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, শিরিন হক, সদস্য, নারীপক্ষ, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, নির্বাহী পরিচালক, রিসার্স ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ (রিব), রানা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ প্রমুখ।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন