পাঁচ বছরেরও রূপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় হলো না

 রীতা ভৌমিক 
২৫ আগস্ট ২০২২, ১০:১৯ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

আজ বৃহস্পতিবার চাঞ্চল্যকর জাকিয়া সুলতানা রূপা ধর্ষণ এবং হত্যা মামলার পাঁচ বছর পূর্ণ হলো। এখনো তার মামলার নিু আদালত প্রদানকৃত রায় হাইকোর্ট আপিল বিভাগে আটকে আছে। এখনো  মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যার বিচার পায়নি রূপার বাবা-মা।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রমোশনাল ডিভিশনে কর্মরত জাকিয়া সুলতানা রূপা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে শেরপুর থেকে বগুড়া আসেন। বগুড়া থেকে ছোঁয়া নামক একটি বাসে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে পরিবহণ শ্রমিকদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয় ও। এরপর বাসেই তাকে হত্যা করে মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনে মরদেহ ফেলে রেখে যায়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে মধুপুর থানা পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় নারী হিসাবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। মধুপুর থানার পুলিশ ময়না তদন্ত করে বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করে। ২৮ আগস্ট পত্রিকায় তার ছবি প্রকাশিত হয়। এই ছবি দেখে তার বড় ভাই হাফিজুর রহমান ছোট বোনের লাশ শনাক্ত করেন। ৩১ আগস্ট রূপার লাশ উত্তোলন করে বড় ভাইয়ের কাছে পুলিশ হস্তান্তর করে। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ নিজ গ্রামের আসানবাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলাম বাদি হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এই মামলার ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট,  ছোঁয়া বাসের হেলপার শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর, চালক হাবিবুর এবং সুপারভাইজার সফর আলীকে  গ্রেফতার করে পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নাসিমুল আক্তার নাসিম। তাকে সহায়তা করেন মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী এস আকবর খান, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এমএ করিম মিয়া ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ। মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়া। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় ২৩ জানুয়ারি। মোট ৩২ জনের মধ্যে ২৭ জন সাক্ষ্য দেন। এ বছরের ২৮ জানুয়ারি ফৌজাদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারা মোতাবেক আসামিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ৩১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের এবং ৪ ফেব্র“য়ারি আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ৫ ফেব্র“য়ারি উভয়পক্ষের আইনজীবীদের আইনগত বিষয় উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে যুক্তিতর্ক পর্ব শেষ হয়। 

টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়া সব আসামির উপস্থিতিতে রায় প্রদানকালে বলেছেন, আদালত ৪ আসামিকে ফাঁসির আদেশ এবং সুপারভাইজার সফর আলীকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেছে। এছাড়া ক্ষতিপূরণ বাবদ জরিমানার টাকা ও অপরাধ কাজে ব্যবহৃত ছোঁয়া পরিবহণের বাসটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই বাসের মালিকানা ভিকটিমের পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। 

এই রায়ের ভিত্তিতে আসামি পক্ষ পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে।  বিচারের নামে কালক্ষেপণ প্রসঙ্গে রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, নিম্ন আদালতের রায় ৪ বছর ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ভিকটিমের পরিবার হিসাবে কোনো নোটিশ পাইনি।

এ প্রসঙ্গে আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক বলেন, রূপা গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মাত্র নিু আদালতের রায় হয়েছে। উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। তারপরও রূপার মামলার রায় দৃষ্টান্তমূলক। কারণ মামলা দায়েরের ১৭১ দিনের মাথায় মাত্র ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে রায় হয়েছে। যদিও আইন অনুযায়ী এ ধরনের মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা, কিন্তু তা আদালতের ওপর বাধ্যতামূলক নয়। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব মামলা এত দ্রুত নিষ্পত্তি হয় না। আবার অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত বাসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ রূপার পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪৫ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতের ভুক্তভোগী পরিবারকে এ ধরনের ক্ষতিপূরণ প্রদানের এখতিয়ার রয়েছে। কিন্তু এর প্রয়োগ তেমন নেই। সাধারণত আমাদের দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলো এ এখতিয়ার অনুসরণ করে না। আমরা আশা করব, নিম্ন আদালতের ন্যায় উচ্চ আদালতেও মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় রূপার মামলাটি নিম্ন আদালত থেকে দ্রুত রায় পেয়েছিল। উচ্চ আদালত থেকে যাতে রূপার মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হয় গণমাধ্যমকর্মীরা এক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন