ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সফলতার কথা জানান মামুন জারির

 তানজিল আমির 
২৮ অক্টোবর ২০২২, ০৩:০২ এএম  |  অনলাইন সংস্করণ

কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন মামুন জারির। শরহে বেকায়া শ্রেণীতে উঠে পড়াশোনা বাদ দিতে হয় তাকে। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত পড়ার সুযোগ হয়নি। 

জীবিকার তাগিদে চাকরি নেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু, চাকরি করে যে টাকা বেতন পেতেন তা দিয়ে পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। চিন্তা করলেন ব্যবসা করবেন। 

মনে আশঙ্কা ছিল, ব্যবসায় যদি সফল হতে না পারেন, তাহলে তো চাকরি করে যে টাকা পান, তাও পাবেন না। তবুও আল্লাহর ওপরে ভরসা করে কিছু টাকা জোগাড় করে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। 

ব্যবসায় সফল হন মামুন জারির। বাবার অবর্তমানে মামুনই এখন পরিবারের যাবতীয় খরচের জোগান দেন। মামুন জারির এখানে এসেই থেমে যাননি। স্বপ্ন দেখেন, তার মতো আরো অসংখ্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি করবেন। 

কিন্তু, টাকাকড়ি দিয়ে বেকার যুবকদের উদ্যোক্তা বানানো তার পক্ষে তো সম্ভব নয়। কথায় আছে–ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। তিনি ঠিক করলেন, যেসব উদ্যোক্তা ব্যবসা করে সফল হয়েছেন, তাদের সফলতা ও অভিজ্ঞতার গল্প ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দিবেন। এতে আর্থিক সহায়তা করতে না পারলেও বেকার যুবকদের মনে সাহস জোগাতে পারবেন। 

ফেসবুক এবং ইউটিউবে মামুন জারির ব্লগ নামে অ্যাকাউন্ট খুলেন। এরপরে নিজে ব্যবসা করার পাশাপাশি মামুন জারির ঘুরে বেড়ান সফল উদ্যোক্তাদের খোঁজে। শুরুর দিকে অনেক মানুষই হাসাহাসি করত। নানা কথা বলে কটাক্ষ করত। তাদের কথায় কান নিয়ে নিজের প্রবল ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিয়মিত ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতে থাকেন। দর্শকদের ব্যাপক সাড়াও পান মামুন। 

মামুন জারির বলেন, আমার ব্লগের যাত্রা শুরু হয় করোনার ভয়াবহ সময়ে। ওই সময়তো অসংখ্য মানুষ চাকরি হারিয়ে ফেলে। আর্থিক অস্বচ্ছলতা দেখা দিয়েছিল প্রকটভাবে। আমি অনেক স্কুল শিক্ষককে দেখেছি তারা পেটের দায়ে রিকশা চালিয়েছেন। মানসম্মান আর ব্যক্তিত্বের চিন্তা বাদ দিয়ে সবাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল তখন। 

মামুন জারির বলেন, ওই সময় আমি চিন্তা করলাম–এই সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে মানুষকে যদি অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার সঠিক তথ্য দেয়া যায়, তাহলে হয়তো তারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবেলা করার সাহস পাবে। ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বেঁচে থাকার জন্য। এভাবেই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মামুন জারির ব্লগের যাত্রা শুরু হয়।

মামুন জারির আরো বলেন, আমার পথচলার শুরুটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। করোনার সময়ে সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল যাতায়াত। তথ্য সংগ্রহ করতে অধিকাংশ সময়ই চলে যেতে হত ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে। 

মামুন জানান, কাজ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে এমন হতো যে ক্যামেরা দেখে অনেক ব্যবসায়ীরা ভয় পেয়ে যেতেন। অনেকে আবার রেগেও যেতেন। যাদেরকে আমার কার্যক্রম সম্পর্কে বোঝাতে পারতাম, তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক তথ্য দিয়ে সাহায্য করতেন। আর সেগুলোকে ভিডিওর মাধ্যমে উপস্থাপন করার চেষ্টা করতাম। অনেক দিন তো সারাদিন ঘুরেও কোনো ব্যবসায়ী থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারতাম না। তখন খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয়েছে।

মামুন জারির বলেন,  দীর্ঘ দুই বছরের প্রচেষ্টায় প্রায় ১০০টি ব্যবসায়িক ভিডিও তৈরি করেছি। যেগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অনেক উপকারে এসেছে। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ইউটিউব এবং ফেসবুক মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মামুন জারির ব্লগকে ফলো করছে। নিয়মিত ভিডিও দেখে লাখ লাখ মানুষ। 

মামুন জারির আরো বলেন, এই দুই বছরের পথচলায় যতটুকু জানতে পেরেছি–মামুন জারির ভ্লগের ভিডিও কন্টেন্ট দেখে প্রায় ২৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। যারা একদমই বেকার ছিল। হতাশার মধ্যে ডুবে ছিল। তাদের অধিকাংশই এখন উদ্যোক্তা হিসাবে সফল। 

তার ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে উদ্যোক্তা হওয়া একজনের কথা উল্লেখ করে মামুন জারির বলেন,  মো. ফারুক একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ঢাকা নিউ মার্কেটে তার দুটি কাপড়ের দোকান ছিল। করোনায় দীর্ঘদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঋণের চাপে ব্যবসা ছেড়ে পথে বসার উপক্রম হয়। বাধ্য হয়ে ব্যবসা ছেড়ে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী হিসেবে চাকরি নেন। কাকতালীয়ভাবে কামরাঙ্গীরচরের একটি প্রতিষ্ঠানের ভিডিও করতে গিয়ে মামুনের কথা হয় ওই উদ্যোক্তার সঙ্গে। কথায় কথায় জানতে পারেন ব্যবসায় তার ব্যর্থ হওয়ার কথা। 

মামুন জারির বলেন, আমি তাকে আবার ব্যবসা শুরু করতে বললাম। কিছু পরামর্শও দিলাম। তিনি আমার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আবার নতুনভাবে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে এই উদ্যোক্তাও সফলতার মুখ দেখতে পান। 

মামুন জারির বলেন, নিজে ভালো থাকার পাশাপাশি আরো দশজন মানুষকে নিয়ে ভালো থাকার মধ্যে ভিন্ন রকম আনন্দ রয়েছে। আমি সেই আনন্দই খুঁজে বেড়াই।


 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন