শিল্প খাতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট: দ্রুত নিরসনের উদ্যোগ নিন
সম্পাদকীয়
২২ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শিল্প খাতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যেই আইএমএফ-এর শর্ত পূরণের লক্ষ্যে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দেবে শিল্প খাতের জন্য। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিু পর্যায়ে নেমে আসার পরও গ্যাস ক্রয়ের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না পেট্রোবাংলা।
উল্লেখ্য, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করতে ৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ গত ১৪ দিনেও কেন কার্যকর করা গেল না, এটাই প্রশ্ন। শিল্প খাতসংশ্লিষ্টদের অভিমত হচ্ছে-বর্তমানে গ্যাসের তীব্র সংকট চলায় মোট কর্মঘণ্টার ৪০-৪৫ শতাংশও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বস্তুত গত এক বছরে উৎপাদন ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেলেও শ্রমিকদের বেতনভাতা ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বলা চলে, দেশের মোট শিল্প-কারখানার প্রায় ৭০ ভাগই এখন হুমকির মুখে, যা অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।
শিল্প-কারখানায় বিপর্যয় নেমে এলে দেশের রপ্তানি খাত অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। এমনিতেই করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিল্পকারখানা বন্ধ ছিল। বন্ধ থাকাকলীন গ্যাসের বিল বা জরিমানা মওকুফ হয়নি। এরপরও শিল্পমালিকরা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ার কারণে অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করেও উৎপাদনে আসতে পারছেন না। অন্যদিকে নতুন বিনিয়োগেও আগ্রহী হচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। অভিযোগ রয়েছে, দেশে পর্যাপ্ত গ্যাস মজুত থাকলেও তা উত্তোলনে নেওয়া হচ্ছে না কার্যকর উদ্যোগ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি গ্যাস খাত নিয়ে ষড়যন্ত্র। বস্তুত দেশে জ্বালানি খাত নিয়ে একধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের শিল্প খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। দুঃখজনক হলো, বিশ্বের অনেক দেশেই বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য উদ্যোক্তাদের নানারকম সুযোগ-সুবিধা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হলেও দেশে এর উলটো চিত্রই পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
শিল্প খাতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট: দ্রুত নিরসনের উদ্যোগ নিন
শিল্প খাতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যেই আইএমএফ-এর শর্ত পূরণের লক্ষ্যে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দেবে শিল্প খাতের জন্য। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিু পর্যায়ে নেমে আসার পরও গ্যাস ক্রয়ের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না পেট্রোবাংলা।
উল্লেখ্য, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করতে ৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ গত ১৪ দিনেও কেন কার্যকর করা গেল না, এটাই প্রশ্ন। শিল্প খাতসংশ্লিষ্টদের অভিমত হচ্ছে-বর্তমানে গ্যাসের তীব্র সংকট চলায় মোট কর্মঘণ্টার ৪০-৪৫ শতাংশও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বস্তুত গত এক বছরে উৎপাদন ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেলেও শ্রমিকদের বেতনভাতা ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বলা চলে, দেশের মোট শিল্প-কারখানার প্রায় ৭০ ভাগই এখন হুমকির মুখে, যা অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।
শিল্প-কারখানায় বিপর্যয় নেমে এলে দেশের রপ্তানি খাত অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। এমনিতেই করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিল্পকারখানা বন্ধ ছিল। বন্ধ থাকাকলীন গ্যাসের বিল বা জরিমানা মওকুফ হয়নি। এরপরও শিল্পমালিকরা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ার কারণে অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করেও উৎপাদনে আসতে পারছেন না। অন্যদিকে নতুন বিনিয়োগেও আগ্রহী হচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। অভিযোগ রয়েছে, দেশে পর্যাপ্ত গ্যাস মজুত থাকলেও তা উত্তোলনে নেওয়া হচ্ছে না কার্যকর উদ্যোগ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি গ্যাস খাত নিয়ে ষড়যন্ত্র। বস্তুত দেশে জ্বালানি খাত নিয়ে একধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের শিল্প খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। দুঃখজনক হলো, বিশ্বের অনেক দেশেই বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য উদ্যোক্তাদের নানারকম সুযোগ-সুবিধা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হলেও দেশে এর উলটো চিত্রই পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি
দাম নির্ধারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ জরুরি
আবারও বাড়ানো হয়েছে কিছু ওষুধের দাম। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, তখন ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্রদের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করবে, তা সহজেই অনুমেয়। প্রতিবার বিভিন্ন ওষুধের দাম বৃদ্ধির আগে উৎপাদনকারীরা কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। তাদের যুক্তির বাস্তব ভিত্তি থাকলেও ওষুধের দাম যতটা বাড়ানো হয়, তা যুক্তিসংগত কি না খতিয়ে দেখা দরকার। স্বল্প-আয়ের ও গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত অতি প্রয়োজনীয় সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া। তা না হলে ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে; অনেকে ঝুঁকবে ঝাড়ফুঁকের দিকে। এতে দেশের স্বাস্থ্য খাত মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব জনগণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা নিরসনে উদ্যোগী হতে হবে কর্তৃপক্ষকে। সরকার অতি প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো উৎপাদন করে অল্প দামে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারে।
আমরা দেখেছি, ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে নিজেদের ইচ্ছামতো দামে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকেন। জীবন রক্ষাকারী ওষুধগুলোর দাম বেসরকারি কোম্পানির ওপর ছেড়ে দেওয়ার কারণে বহু মানুষ প্রয়োজনের সময় দরকারি ওষুধ কিনতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জনস্বাস্থ্যের ওপর। খোলাবাজারে একই ওষুধের দামে ভিন্নতা রয়েছে। ওষুধের দামে যখন এ অরাজকতা, তখন বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই নিয়মিত নজরদারি। কেউ কেউ কিছু ওষুধ কিনলেও বাকিগুলো খাওয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। রোগী প্রয়োজনীয় ওষুধসেবন ছেড়ে দিলে দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ বাড়াবে। কোনো ওষুধ এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করলে ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। মানুষকে যাতে বাধ্য হয়ে চড়া দামে কোনো ওষুধ কিনতে না হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
ওষুধশিল্পে দেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। ওষুধ উৎপাদনকারীরা নীতি-নৈতিকতার চর্চা থেকে বিচ্যুত হবেন না, এটাই প্রত্যাশা। বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে আগামী দিনে মূল্যস্ফীতিজনিত কারণে মানুষের কষ্ট বাড়তে পারে। এ অবস্থায় ওষুধসহ নিত্যপণ্য নিয়ে কেউ যাতে কারসাজি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির উদাহরণ থেকেই দেশের অনেক ব্যবসায়ীর নৈতিকতার দিকটি স্পষ্ট হয়েছে। কাজেই ওষুধের দাম নির্ধারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।
যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অবৈধভাবে পণ্য আমদানি
কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে
অবৈধভাবে পণ্য আমদানির একটি উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো শুল্ক গোয়েন্দার গোপনীয় প্রতিবেদনে। আরও উদ্বেগের বিষয়, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে এ অবৈধ পণ্য আমদানির আড়ালে কার্যত অর্থ পাচার হচ্ছে। জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র চলতি বছর সাতটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আমদানির অনুমতিপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চ শুল্কের মদ-সিগারেট আমদানি করেছে। এক্ষেত্রে ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করার কারণ হলো-সাধারণ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানি করতে হয় ব্যাংকে এলসি বা ব্যাক-টু-ব্যাক খোলার মাধ্যমে বন্ডের আওতায়; কিন্তু ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান এলসি ছাড়াই শুধু সেলস কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে পণ্য আমদানির সুবিধা পেয়ে থাকে। তাছাড়া ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই কনটেইনার কাস্টমস থেকে সরাসরি ট্রাক-লরিতে ডেলিভারির জন্য উঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সুবিধার কারণেই চোরাকারবারি চক্রের নজর ইপিজেডের দিকে। এ কাজে তারা মূলত কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারের সঙ্গে বেপজার ওয়েবসাইটের আন্তঃসংযোগ না থাকার সুযোগ নিচ্ছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এর ফলে দেশ শুধু রাজস্ব থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ না যাওয়ায় আমদানির পুরো অর্থটাই পাচার হয়ে যাচ্ছে। কাজেই এ অপকর্ম প্রতিরোধ করতে হবে কঠোরভাবে।
বস্তুত দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে নানা পন্থায়। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানতে পেরেছে, বর্তমানে বিদেশে অর্থ পাচারে বড় ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিং। হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে এ অর্থ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো টাকার অঙ্ক খুব বেশি না হলেও মোট হিসাবে তা অনেক বড়। বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে এই চ্যানেলে। জানা যায়, একে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক সিন্ডিকেট। আর তা নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের বাইরে থাকা অবৈধ কারবারিরা। তারা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করে তা অন্যত্র ব্যবহার করছে। আর দেশে তাদের চক্রের সদস্যরা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে স্থানীয় মুদ্রা টাকা। এবার অর্থ পাচারের আরও একটি সূত্রের সন্ধান মিলল।
অর্থ পাচার যেভাবেই হোক না কেন, এর সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ এরা দেশের অর্থনীতির সমূহ ক্ষতি করছে। অর্থ পাচারের কারণে দেশে ডলার সংকট তীব্র হয়েছে এবং কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কাজেই অর্থ পাচারের মূল হোতাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু তাদেরই নয়, যারা তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে নানাভাবে সহায়তা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে ব্যবস্থা। কাস্টমসের তদন্তে উঠে এসেছে, ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধভাবে পণ্য আমদানিকারকদের প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করছে কাস্টমসেরই কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে তাদের কয়েকজনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসতে পারে অবৈধ পণ্য আমদানিকারকদের মূল হোতাদের নাম। এই অবৈধ পন্থায় আমদানি বন্ধ করা জরুরি এ কারণে যে, এর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। কাজেই এ ব্যাপারে এখনই দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এখনো অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ!
অপচয় রোধ করতে হবে
বিদ্যমান সংকটময় মুহূর্তে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও একটি প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের নামে তিন কর্মকর্তার বিদেশ সফরের ব্যবস্থা রাখার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য।
জানা যায়, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এতে অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা জানি, বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ব্যয় সাশ্রয়ের অংশ হিসাবে সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরও স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এমনকি ইতঃপূর্বে খোদ প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত বিদেশ সফর নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। প্রকল্পের অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তারা যেন অহেতুক বিদেশ সফর না করেন, সে বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না বিদেশ সফর।
জানা গেছে, ‘উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহিষ্ণু প্রকল্পে’র তিন কর্মকর্তার বিদেশ সফরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকেই বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একেই বোধহয় বলা হয় ‘ঋণ করে ঘি খাওয়া’!
অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে অথবা অন্যান্য অজুহাতে উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা প্রায়ই বিদেশ সফর করে থাকেন। প্রশ্ন হলো, কর্মকর্তাদের এ ধরনের বিদেশ সফরের কতটা সুফল পায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্প? ইতঃপূর্বে আমরা এমন সব বিষয়ে প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের প্রস্তাবের কথা জেনেছি, যেগুলো জনমনে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। বস্তুত প্রায় ক্ষেত্রেই কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর হয়ে থাকে অপ্রয়োজনে অথবা অযৌক্তিক কারণে।
অবশ্য এর মানে এই নয় যে, প্রকল্পের কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে যাবেন না। অত্যাবশ্যকীয় কাজে, প্রশিক্ষণের জন্য, বিশেষ কোনো বিষয়ে কারিগরি বা ব্যবস্থাপনার জ্ঞান আহরণে অথবা কোনো কিছু ক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাদের বিদেশ সফর করার বিষয়টি যৌক্তিক। তবে এই সংকটময় মুহূর্তে বৈদেশিক অর্থ ব্যয় করে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর যত কম রাখা যায় ততই মঙ্গল। আলোচ্য প্রকল্পের তিন কর্মকর্তার বিদেশ সফরের ব্যয় প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী যুগান্তরকে বলেছেন, একনেকে অনুমোদন হলেও এটি পরবর্তীকালে সংশোধনের সুযোগ আছে। আমরা আশা করব, যে কোনো প্রকল্পের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।