সংকটে প্রকাশনা শিল্প
উপকরণের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
সম্পাদকীয়
২৩ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ, কালি, প্লেটসহ প্রকাশনা শিল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উপকরণের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ শিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
আমাদের দেশে বইয়ের বাজার ছোট। সামনে অমর একুশে বইমেলা। এখন প্রকাশকদের পুস্তক মুদ্রণে ব্যস্ত সময় পার করার কথা।
অথচ এখন প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সবাই হতাশায় নিমজ্জিত, যা আগে কখনো ঘটেনি। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সৃজনশীল প্রকাশ ঐক্য আয়োজিত ‘কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন প্রকাশকরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কাগজের অস্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশের পুরো প্রকাশনা খাত বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।
এছাড়া প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপকরণের বাজারও অস্থির। প্রকাশকদের দাবি, মানুষের বই কেনার প্রবণতা বাড়েনি, বর্তমান বাজারমূল্যে ছাপাকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বেশ কিছুদিন ধরেই সব ধরনের কাগজের বাজারে অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও চিন্তিত। কাগজের বাজারের অস্থিরতা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কেবল যে প্রকাশনা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাই নয়; শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধির কারণে বহু শিক্ষার্র্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কাগজের বাজারের অস্থিরতার কারণ সরবরাহের সংকট।
এদিকে কাগজ উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দাবি, জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি বেড়েছে পরিবহণ খরচ, বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরিও।
কাগজের বাজারের অস্থিরতার পেছনে এসব বিষয়েরও প্রভাব রয়েছে। এসব সংকটের অজুহাতে কেউ যাতে কাগজসহ প্রকাশনা শিল্পের অন্যান্য উপকরণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে কর্তৃপক্ষের উচিত যথাযথ দৃষ্টি দেওয়া।
গত কয়েক দশকে দেশের প্রকাশনা শিল্প যে গতিতে সম্প্রসারিত হয়েছে, তা আশাব্যঞ্জক। তবে বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসম্মত বই প্রকাশে উদ্যোগী না হলে এ শিল্পের সম্প্রসারণ অর্থহীন। মানসম্পন্ন বই প্রকাশ করা সম্ভব হলে সেসব বই বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন করা সম্ভব।
মননচর্চায় বইয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। গুণিজনদের মতে, কোনো জাতির সামগ্রিক উন্নতির পরিচয় কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়নে নয়; এর প্রতিফলন ঘটে মননচর্চার মধ্য দিয়েও।
জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার উন্নয়নে প্রকাশনা শিল্পের বিকাশ অব্যাহত রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। প্রকাশকদের মনে রাখতে হবে, মানহীন বই প্রকাশ অব্যাহত থাকলে তা প্রকাশনা শিল্পের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সংকটে প্রকাশনা শিল্প
উপকরণের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
কাগজ, কালি, প্লেটসহ প্রকাশনা শিল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উপকরণের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ শিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
আমাদের দেশে বইয়ের বাজার ছোট। সামনে অমর একুশে বইমেলা। এখন প্রকাশকদের পুস্তক মুদ্রণে ব্যস্ত সময় পার করার কথা।
অথচ এখন প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সবাই হতাশায় নিমজ্জিত, যা আগে কখনো ঘটেনি। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সৃজনশীল প্রকাশ ঐক্য আয়োজিত ‘কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন প্রকাশকরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কাগজের অস্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশের পুরো প্রকাশনা খাত বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।
এছাড়া প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপকরণের বাজারও অস্থির। প্রকাশকদের দাবি, মানুষের বই কেনার প্রবণতা বাড়েনি, বর্তমান বাজারমূল্যে ছাপাকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বেশ কিছুদিন ধরেই সব ধরনের কাগজের বাজারে অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও চিন্তিত। কাগজের বাজারের অস্থিরতা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কেবল যে প্রকাশনা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাই নয়; শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধির কারণে বহু শিক্ষার্র্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কাগজের বাজারের অস্থিরতার কারণ সরবরাহের সংকট।
এদিকে কাগজ উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দাবি, জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি বেড়েছে পরিবহণ খরচ, বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরিও।
কাগজের বাজারের অস্থিরতার পেছনে এসব বিষয়েরও প্রভাব রয়েছে। এসব সংকটের অজুহাতে কেউ যাতে কাগজসহ প্রকাশনা শিল্পের অন্যান্য উপকরণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে কর্তৃপক্ষের উচিত যথাযথ দৃষ্টি দেওয়া।
গত কয়েক দশকে দেশের প্রকাশনা শিল্প যে গতিতে সম্প্রসারিত হয়েছে, তা আশাব্যঞ্জক। তবে বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসম্মত বই প্রকাশে উদ্যোগী না হলে এ শিল্পের সম্প্রসারণ অর্থহীন। মানসম্পন্ন বই প্রকাশ করা সম্ভব হলে সেসব বই বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন করা সম্ভব।
মননচর্চায় বইয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। গুণিজনদের মতে, কোনো জাতির সামগ্রিক উন্নতির পরিচয় কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়নে নয়; এর প্রতিফলন ঘটে মননচর্চার মধ্য দিয়েও।
জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার উন্নয়নে প্রকাশনা শিল্পের বিকাশ অব্যাহত রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। প্রকাশকদের মনে রাখতে হবে, মানহীন বই প্রকাশ অব্যাহত থাকলে তা প্রকাশনা শিল্পের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে।
যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি
দাম নির্ধারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ জরুরি
আবারও বাড়ানো হয়েছে কিছু ওষুধের দাম। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, তখন ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্রদের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করবে, তা সহজেই অনুমেয়। প্রতিবার বিভিন্ন ওষুধের দাম বৃদ্ধির আগে উৎপাদনকারীরা কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। তাদের যুক্তির বাস্তব ভিত্তি থাকলেও ওষুধের দাম যতটা বাড়ানো হয়, তা যুক্তিসংগত কি না খতিয়ে দেখা দরকার। স্বল্প-আয়ের ও গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত অতি প্রয়োজনীয় সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া। তা না হলে ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে; অনেকে ঝুঁকবে ঝাড়ফুঁকের দিকে। এতে দেশের স্বাস্থ্য খাত মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব জনগণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা নিরসনে উদ্যোগী হতে হবে কর্তৃপক্ষকে। সরকার অতি প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো উৎপাদন করে অল্প দামে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারে।
আমরা দেখেছি, ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে নিজেদের ইচ্ছামতো দামে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকেন। জীবন রক্ষাকারী ওষুধগুলোর দাম বেসরকারি কোম্পানির ওপর ছেড়ে দেওয়ার কারণে বহু মানুষ প্রয়োজনের সময় দরকারি ওষুধ কিনতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জনস্বাস্থ্যের ওপর। খোলাবাজারে একই ওষুধের দামে ভিন্নতা রয়েছে। ওষুধের দামে যখন এ অরাজকতা, তখন বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই নিয়মিত নজরদারি। কেউ কেউ কিছু ওষুধ কিনলেও বাকিগুলো খাওয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। রোগী প্রয়োজনীয় ওষুধসেবন ছেড়ে দিলে দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ বাড়াবে। কোনো ওষুধ এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করলে ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। মানুষকে যাতে বাধ্য হয়ে চড়া দামে কোনো ওষুধ কিনতে না হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
ওষুধশিল্পে দেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। ওষুধ উৎপাদনকারীরা নীতি-নৈতিকতার চর্চা থেকে বিচ্যুত হবেন না, এটাই প্রত্যাশা। বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে আগামী দিনে মূল্যস্ফীতিজনিত কারণে মানুষের কষ্ট বাড়তে পারে। এ অবস্থায় ওষুধসহ নিত্যপণ্য নিয়ে কেউ যাতে কারসাজি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির উদাহরণ থেকেই দেশের অনেক ব্যবসায়ীর নৈতিকতার দিকটি স্পষ্ট হয়েছে। কাজেই ওষুধের দাম নির্ধারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।
যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অবৈধভাবে পণ্য আমদানি
কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে
অবৈধভাবে পণ্য আমদানির একটি উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো শুল্ক গোয়েন্দার গোপনীয় প্রতিবেদনে। আরও উদ্বেগের বিষয়, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে এ অবৈধ পণ্য আমদানির আড়ালে কার্যত অর্থ পাচার হচ্ছে। জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র চলতি বছর সাতটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আমদানির অনুমতিপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চ শুল্কের মদ-সিগারেট আমদানি করেছে। এক্ষেত্রে ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করার কারণ হলো-সাধারণ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানি করতে হয় ব্যাংকে এলসি বা ব্যাক-টু-ব্যাক খোলার মাধ্যমে বন্ডের আওতায়; কিন্তু ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান এলসি ছাড়াই শুধু সেলস কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে পণ্য আমদানির সুবিধা পেয়ে থাকে। তাছাড়া ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই কনটেইনার কাস্টমস থেকে সরাসরি ট্রাক-লরিতে ডেলিভারির জন্য উঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সুবিধার কারণেই চোরাকারবারি চক্রের নজর ইপিজেডের দিকে। এ কাজে তারা মূলত কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারের সঙ্গে বেপজার ওয়েবসাইটের আন্তঃসংযোগ না থাকার সুযোগ নিচ্ছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এর ফলে দেশ শুধু রাজস্ব থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ না যাওয়ায় আমদানির পুরো অর্থটাই পাচার হয়ে যাচ্ছে। কাজেই এ অপকর্ম প্রতিরোধ করতে হবে কঠোরভাবে।
বস্তুত দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে নানা পন্থায়। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানতে পেরেছে, বর্তমানে বিদেশে অর্থ পাচারে বড় ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিং। হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে এ অর্থ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো টাকার অঙ্ক খুব বেশি না হলেও মোট হিসাবে তা অনেক বড়। বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে এই চ্যানেলে। জানা যায়, একে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক সিন্ডিকেট। আর তা নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের বাইরে থাকা অবৈধ কারবারিরা। তারা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করে তা অন্যত্র ব্যবহার করছে। আর দেশে তাদের চক্রের সদস্যরা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে স্থানীয় মুদ্রা টাকা। এবার অর্থ পাচারের আরও একটি সূত্রের সন্ধান মিলল।
অর্থ পাচার যেভাবেই হোক না কেন, এর সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ এরা দেশের অর্থনীতির সমূহ ক্ষতি করছে। অর্থ পাচারের কারণে দেশে ডলার সংকট তীব্র হয়েছে এবং কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কাজেই অর্থ পাচারের মূল হোতাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু তাদেরই নয়, যারা তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে নানাভাবে সহায়তা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে ব্যবস্থা। কাস্টমসের তদন্তে উঠে এসেছে, ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধভাবে পণ্য আমদানিকারকদের প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করছে কাস্টমসেরই কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে তাদের কয়েকজনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসতে পারে অবৈধ পণ্য আমদানিকারকদের মূল হোতাদের নাম। এই অবৈধ পন্থায় আমদানি বন্ধ করা জরুরি এ কারণে যে, এর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। কাজেই এ ব্যাপারে এখনই দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এখনো অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ!
অপচয় রোধ করতে হবে
বিদ্যমান সংকটময় মুহূর্তে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও একটি প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের নামে তিন কর্মকর্তার বিদেশ সফরের ব্যবস্থা রাখার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য।
জানা যায়, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এতে অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা জানি, বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ব্যয় সাশ্রয়ের অংশ হিসাবে সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরও স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এমনকি ইতঃপূর্বে খোদ প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত বিদেশ সফর নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। প্রকল্পের অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তারা যেন অহেতুক বিদেশ সফর না করেন, সে বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না বিদেশ সফর।
জানা গেছে, ‘উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহিষ্ণু প্রকল্পে’র তিন কর্মকর্তার বিদেশ সফরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকেই বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একেই বোধহয় বলা হয় ‘ঋণ করে ঘি খাওয়া’!
অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে অথবা অন্যান্য অজুহাতে উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা প্রায়ই বিদেশ সফর করে থাকেন। প্রশ্ন হলো, কর্মকর্তাদের এ ধরনের বিদেশ সফরের কতটা সুফল পায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্প? ইতঃপূর্বে আমরা এমন সব বিষয়ে প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের প্রস্তাবের কথা জেনেছি, যেগুলো জনমনে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। বস্তুত প্রায় ক্ষেত্রেই কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর হয়ে থাকে অপ্রয়োজনে অথবা অযৌক্তিক কারণে।
অবশ্য এর মানে এই নয় যে, প্রকল্পের কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে যাবেন না। অত্যাবশ্যকীয় কাজে, প্রশিক্ষণের জন্য, বিশেষ কোনো বিষয়ে কারিগরি বা ব্যবস্থাপনার জ্ঞান আহরণে অথবা কোনো কিছু ক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাদের বিদেশ সফর করার বিষয়টি যৌক্তিক। তবে এই সংকটময় মুহূর্তে বৈদেশিক অর্থ ব্যয় করে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর যত কম রাখা যায় ততই মঙ্গল। আলোচ্য প্রকল্পের তিন কর্মকর্তার বিদেশ সফরের ব্যয় প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী যুগান্তরকে বলেছেন, একনেকে অনুমোদন হলেও এটি পরবর্তীকালে সংশোধনের সুযোগ আছে। আমরা আশা করব, যে কোনো প্রকল্পের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।