ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি
দাম নির্ধারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ জরুরি
২৫ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আবারও বাড়ানো হয়েছে কিছু ওষুধের দাম। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, তখন ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্রদের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করবে, তা সহজেই অনুমেয়। প্রতিবার বিভিন্ন ওষুধের দাম বৃদ্ধির আগে উৎপাদনকারীরা কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। তাদের যুক্তির বাস্তব ভিত্তি থাকলেও ওষুধের দাম যতটা বাড়ানো হয়, তা যুক্তিসংগত কি না খতিয়ে দেখা দরকার। স্বল্প-আয়ের ও গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত অতি প্রয়োজনীয় সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া। তা না হলে ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে; অনেকে ঝুঁকবে ঝাড়ফুঁকের দিকে। এতে দেশের স্বাস্থ্য খাত মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব জনগণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা নিরসনে উদ্যোগী হতে হবে কর্তৃপক্ষকে। সরকার অতি প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো উৎপাদন করে অল্প দামে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারে।
আমরা দেখেছি, ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে নিজেদের ইচ্ছামতো দামে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকেন। জীবন রক্ষাকারী ওষুধগুলোর দাম বেসরকারি কোম্পানির ওপর ছেড়ে দেওয়ার কারণে বহু মানুষ প্রয়োজনের সময় দরকারি ওষুধ কিনতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জনস্বাস্থ্যের ওপর। খোলাবাজারে একই ওষুধের দামে ভিন্নতা রয়েছে। ওষুধের দামে যখন এ অরাজকতা, তখন বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই নিয়মিত নজরদারি। কেউ কেউ কিছু ওষুধ কিনলেও বাকিগুলো খাওয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। রোগী প্রয়োজনীয় ওষুধসেবন ছেড়ে দিলে দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ বাড়াবে। কোনো ওষুধ এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করলে ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। মানুষকে যাতে বাধ্য হয়ে চড়া দামে কোনো ওষুধ কিনতে না হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
ওষুধশিল্পে দেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। ওষুধ উৎপাদনকারীরা নীতি-নৈতিকতার চর্চা থেকে বিচ্যুত হবেন না, এটাই প্রত্যাশা। বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে আগামী দিনে মূল্যস্ফীতিজনিত কারণে মানুষের কষ্ট বাড়তে পারে। এ অবস্থায় ওষুধসহ নিত্যপণ্য নিয়ে কেউ যাতে কারসাজি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির উদাহরণ থেকেই দেশের অনেক ব্যবসায়ীর নৈতিকতার দিকটি স্পষ্ট হয়েছে। কাজেই ওষুধের দাম নির্ধারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি
দাম নির্ধারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ জরুরি
আবারও বাড়ানো হয়েছে কিছু ওষুধের দাম। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, তখন ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্রদের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করবে, তা সহজেই অনুমেয়। প্রতিবার বিভিন্ন ওষুধের দাম বৃদ্ধির আগে উৎপাদনকারীরা কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। তাদের যুক্তির বাস্তব ভিত্তি থাকলেও ওষুধের দাম যতটা বাড়ানো হয়, তা যুক্তিসংগত কি না খতিয়ে দেখা দরকার। স্বল্প-আয়ের ও গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত অতি প্রয়োজনীয় সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া। তা না হলে ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে; অনেকে ঝুঁকবে ঝাড়ফুঁকের দিকে। এতে দেশের স্বাস্থ্য খাত মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব জনগণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা নিরসনে উদ্যোগী হতে হবে কর্তৃপক্ষকে। সরকার অতি প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো উৎপাদন করে অল্প দামে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারে।
আমরা দেখেছি, ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে নিজেদের ইচ্ছামতো দামে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকেন। জীবন রক্ষাকারী ওষুধগুলোর দাম বেসরকারি কোম্পানির ওপর ছেড়ে দেওয়ার কারণে বহু মানুষ প্রয়োজনের সময় দরকারি ওষুধ কিনতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জনস্বাস্থ্যের ওপর। খোলাবাজারে একই ওষুধের দামে ভিন্নতা রয়েছে। ওষুধের দামে যখন এ অরাজকতা, তখন বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই নিয়মিত নজরদারি। কেউ কেউ কিছু ওষুধ কিনলেও বাকিগুলো খাওয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। রোগী প্রয়োজনীয় ওষুধসেবন ছেড়ে দিলে দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ বাড়াবে। কোনো ওষুধ এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করলে ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। মানুষকে যাতে বাধ্য হয়ে চড়া দামে কোনো ওষুধ কিনতে না হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
ওষুধশিল্পে দেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। ওষুধ উৎপাদনকারীরা নীতি-নৈতিকতার চর্চা থেকে বিচ্যুত হবেন না, এটাই প্রত্যাশা। বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে আগামী দিনে মূল্যস্ফীতিজনিত কারণে মানুষের কষ্ট বাড়তে পারে। এ অবস্থায় ওষুধসহ নিত্যপণ্য নিয়ে কেউ যাতে কারসাজি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির উদাহরণ থেকেই দেশের অনেক ব্যবসায়ীর নৈতিকতার দিকটি স্পষ্ট হয়েছে। কাজেই ওষুধের দাম নির্ধারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।