শেখ হাসিনার জন্মদিন, একটি মূল্যায়ন
jugantor
শেখ হাসিনার জন্মদিন, একটি মূল্যায়ন

  ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন  

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

’৭৫-এর পর ভারতে ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে শেখ হাসিনা ’৮১-এর ১৭ মে দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগের নতুন নির্বাচিত সভাপতি হিসাবে। সেদিন আমার বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, নির্বাসন থেকে বাংলাদেশ অস্তিত্বে ফিরল (Bangladesh from exile to existence)।

আমার এমন ভাবনা যে যুক্তি স্পর্শ করেছিল, তার প্রমাণ, কবি হাসান হাফিজুর রহমান শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, ‘আপনিই তো বাংলাদেশ।’ ’৯১-এর নির্বাচনি বিপর্যয়ের পর শেখ হাসিনা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; কিন্তু জননী সাহসিকা বেগম সুফিয়া কামাল তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘তোমাকে থাকতে হবে এবং বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে।’ শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত পালটিয়েছিলেন; তিনি ছিলেন বলেই বাংলাদেশের অর্জন এখন সারা দুনিয়ার নজরকাড়া। নজর কেড়েছেন তিনিও। তিনি বিশ্বনেতার তালিকাভুক্ত।

শেখ হাসিনার ফেরায় এমন উচ্ছ্বাসের অন্তত দুটো কারণ নির্দেশ করা যেতে পারে। এক. বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা তার কন্যাকে নেতৃত্বে পেয়েছি। কন্যার ধমনিতে প্রবাহিত পিতার রক্ত। হারানো বঙ্গবন্ধুকে যেন ফিরে পাই শেখ হাসিনাকে দেখে। সব মিলিয়ে তার বড় পরিচয় তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। দুই. ’৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশ নির্বাসনে ছিল; দেশটা তো ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছিল। অবয়ব-কাঠামোতে মুক্তিযুদ্ধ ছিল উধাও। বাংলাদেশ মিনি পাকিস্তান তকমা পেতে শুরু করেছিল। কাজেই শেখ হাসিনার ফেরা মানে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ফেরা।

শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্বে চার দশকের বেশি; সরকারের নেতৃত্বে প্রায় সতেরো-আঠারো বছর। উল্লেখ্য, তার নেতৃত্বেই ’৭৫-এর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরে। তার ওপর দিয়ে ঝড়ঝাপটা কম যায়নি। জীবনের ওপর আঘাত এসেছে উনিশ-কুড়ি বার। তার বেঁচে থাকায় অলৌকিকত্ব আছে, আছে দৈব ব্যাপারও। তবে আমরা ভাগ্যবান যে, আমরা তার নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হইনি। তার দীর্ঘ নেতৃত্ব পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা কিছু মন্তব্য করতে পারি।

সম্মোহন : সন্দেহ নেই, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সম্মোহনী; এবং তা ম্যাক্স ভেবার যে অর্থে/নিহিতার্থে ধারণাটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে শেখ হাসিনার সম্মোহনী নেতৃত্ব মিশ্র; দুটো উপাদান আছে। প্রথমত, আহরিত সম্মোহন (borrowed charisma)। তিনি সম্মোহনী বৈশিষ্ট্য আহরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে। তার সম্মোহন যে, তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনার নিজস্ব সম্মোহনী সংযোজন, যার উৎস তার বহুবিচিত্র জনগণলগ্ন কর্মকাণ্ড। এমন সম্মোহন সৃষ্টিতে একটি ঐতিহাসিক উপাদানও বিবেচ্য। তিনি যখন দেশে ফেরেন, তখন তো ফিরেছিলেন স্বজন হারানো শ্মশানে।

এমন একজন মানুষের জনগণলগ্ন হওয়ার বিকল্প কিছু নেই। কারণ তার নিজস্ব চাওয়া-পাওয়ার জগৎ বলে কিছু নেই। আর সে কথা তো তিনি দেশে ফিরেই বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি এসেছি আপনাদের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায় করতে।’ এ একটি কথায় জাদু ছিল, ছিল সম্মোহন।

সম্মোহনী নেতৃত্বের সমান্তরালে শেখ হাসিনাকে রূপান্তরের নেতৃত্বও (transformational leadership) বলা যায়; যে দুটো গুণ বঙ্গবন্ধুর মধ্যেও ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সময় পেয়েছিলেন ১,৩১৪ দিন; যে সময়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। বাকশাল কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় হতো। শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ যে অনেক বদলে গেছে, তার অগুনতি আর্থ-সামাজিক সূচক আছে। দেশ ও দেশের মানুষের দিনবদলের পালা চলমান। যেতে হবে এখনো বহুদূর। যাব অনেক দূর। কারণ আমাদের রয়েছে স্বপ্নসারথি শেখ হাসিনা।

সৃজনশীলতা : সৃজনশীল না হলে নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। জনতার কাজ করতে হলে সৃজনশীলতা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা দু’ধরনের নেতৃত্বের মিশেল-ঘটনাশ্রয়ী (eventful) এবং ঘটনা সংঘটনকারী (event-making)। আওয়ামী লীগের এক ক্রান্তিলগ্নে তিনি ঘটনাচক্রে সভাপতি হন। তিনি সভাপতি হয়ে দলকে রক্ষা করেছেন, দেশকে বাঁচানোর লক্ষ্যে নিবেদিত হয়ে অনেক ঘটনা সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ সৃষ্টিশীলতায় তিনি নিজেকে নিয়ত অতিক্রম করে যাচ্ছেন।

মানবিকতা : বঙ্গবন্ধুকন্যা বঙ্গবন্ধুর মতোই তার ব্যক্তিত্বে ধারণ করেন দুস্থ মানুষের জন্য কল্যাণ-কামনা। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনাকে নিয়ে অনেক কথাই বলা যায়; কিন্তু বলি শুধু রোহিঙ্গাদের কথা। নিজ বাসভূমে পরবাসী হয়ে প্রায় দশ-বারো লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আশ্রিত-অতিথি। অতিথি সৎকারের জন্য তৈরি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ভাসানচর প্রকল্প। তাদের নিজ দেশে ফেরানোর কূটনীতিতে কমতি-ঘাটতি নেই। কাজেই শেখ হাসিনার জন্য অভিধা এসেছে ‘মানবতার জননী’ (Mother of Humanity); এবং তা-ও আবার বিদেশ থেকে।

সাহসিকতা : বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব ভাষ্যে তার সাহসের কথা আছে; তার কন্যার মধ্যেও সাহস থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। বিবেকী সাহসের উৎস আত্মবিশ্বাস, যা আমরা পিতা-পুত্রীর মধ্যে দেখেছি/দেখছি। বঙ্গবন্ধুর সাহসের ফসল স্বাধীন বাংলাদেশ; শেখ হাসিনার সাহসের ফসল অসম্ভবকে সম্ভব করা দিনবদলের হাওয়া লাগা আজকের বাংলাদেশ, এবং তা করোনা অতিমারি সত্ত্বেও।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করা সম্ভব হয় শেখ হাসিনার সাহসের জন্য। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কোনো দিন ভাবতে পারেনি যে, তাদের বিচার হবে, রায় কার্যকর হবে। ’৭৬-এর আগস্ট মাসে লন্ডনের আইটিভিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কর্নেল রশীদ দম্ভ নিয়ে বলেছিল, ‘আমি শেখ মুজিবকে হত্যা করেছি। তোমাদের সাহস আছে আমার বিচার করার?’

তার দম্ভের কারণ ছিল দায়মুক্তি অধ্যাদেশ (সেপ্টেম্বর ১৯৭৫) ও পাক-মার্কিন সমর্থন। ’৯৬-র ১২ নভেম্বর সংসদে দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করার অসম্ভব সাহস দেখিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। জাতিকে তিনি কলঙ্কমুক্ত করেছিলেন।

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের নাটকের কথা আমরা জানি। অর্থায়ন বন্ধ হলো এমন একটি মেগা প্রকল্পের। এমন সংকটকালে শেখ হাসিনার সাহসী উচ্চারণ ছিল, আমরা পদ্মা সেতু তৈরি করব নিজেদের টাকায়। পদ্মা সেতু হয়েছে। সাহসী সিদ্ধান্তের কৃতিত্ব শেখ হাসিনার; আর অর্থ জোগান দেওয়ার কৃতিত্ব বাংলাদেশের মানুষের, তাদের টাকায় এ সেতু হলো। ’৭১-এ বিজয় ছিনিয়ে এনে লড়াকু বাঙালি বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল; নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু বানিয়ে বাঙালি একই কাজ করল। কবি সুকান্তের পঙ্ক্তি তো নিরর্থক নয়-

সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী

অবাক তাকিয়ে রয়ঃ

জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার

তবুও মাথা নোয়াবার নয়।

একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছিল; এখন শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে হয়েছে পদ্মা সেতু। বাঙালি তো মাথা নোয়াবার জাত নয়। শেখ হাসিনার সাহস প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।

নারী উন্নয়ন : শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে নারী প্রগতি বোঝানোর জন্য পশ্চিমে সত্তর-আশি দশকের জনপ্রিয় গায়িকা হেলেন রেড্ডির গান থেকে কলি ধার করছি-

আই অ্যাম উওম্যান, হিয়ার মি রোহ্র

ইন নাম্বারস টু-উ বিগ টু ইগনোর,

......................................

ইফ আই হ্যাভ টু, আই ক্যান ডু এনিথিং-

আই অ্যাম স্ট্রং,

আই অ্যাম ইনভিন্সিব্ল,

আই অ্যাম উওম্যান!

(শেষ বাক্যটি খুব জোর দিয়ে গাইতেন)

২০১০-এ ঘোষিত নারীনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু। তারপর তো অনেক পথচলা হয়েছে। শুধু রাষ্ট্রপতি বা নভোচারী হওয়া ছাড়া বাংলাদেশের নারী এখন সব অবস্থানে পৌঁছে গেছে। নারীর অগ্রযাত্রা নিশ্চিত হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে।

প্রবৃদ্ধি/উন্নয়নের রূপকার : মনে আছে, বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ড. কিসিঞ্জারের অভিসম্পাত ছিল, দেশটি তলাবিহীন ঝুড়ি হবে। বঙ্গবন্ধুর আমলেই জাতীয় গড় প্রবৃদ্ধি সাতের ওপর হয়ে ঝুড়িতে জমা হয়েছিল বেশ কিছু। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর, ’৭৬-এ দু’জন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ- জাআস্ট ফারল্যান্ড ও জে.আর. পার্কিনসন-বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনটি তীর্যক মন্তব্য করলেন। এক. বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বের কঠিনতম সমস্যা। দুই. বাংলাদেশের উন্নয়ন হলে, সব দেশেরই উন্নয়ন হবে। তিন. বাংলাদেশের উন্নয়ন হলেও, অন্তত দুইশ’ বছর লাগবে। কিন্তু ২০১৬-তে শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসাবে তকমা দেয়। এখন তো দেশটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের অবস্থানে উন্নীত, সারা বিশ্বের বিস্ময়।

সংস্কৃত প্রবচন আছে-রত্ন কর্ষতি পুরঃপরমেক/স্তদগতানুগতিকোন মহার্যৎ-অর্থাৎ একজনই আগে পথ তৈরি করে দেন। পরে সে পথ দিয়ে যাত্রায়াত করার লোক দুর্লভ হয় না। বঙ্গবন্ধুর তৈরি করা পথে শেখ হাসিনা চলছেন, যদিও তার পথচলা সহজ নয়, বেশ কঠিন।

শেখ হাসিনার জন্মদিনে আমরা বলতে বাধ্য ‘জন্মদিনে বলতে এলাম, শুভ তোমার জয়ন্তী।’

জয়তু শেখ হাসিনা।

ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি)

শেখ হাসিনার জন্মদিন, একটি মূল্যায়ন

 ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন 
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

’৭৫-এর পর ভারতে ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে শেখ হাসিনা ’৮১-এর ১৭ মে দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগের নতুন নির্বাচিত সভাপতি হিসাবে। সেদিন আমার বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, নির্বাসন থেকে বাংলাদেশ অস্তিত্বে ফিরল (Bangladesh from exile to existence)।

আমার এমন ভাবনা যে যুক্তি স্পর্শ করেছিল, তার প্রমাণ, কবি হাসান হাফিজুর রহমান শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, ‘আপনিই তো বাংলাদেশ।’ ’৯১-এর নির্বাচনি বিপর্যয়ের পর শেখ হাসিনা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; কিন্তু জননী সাহসিকা বেগম সুফিয়া কামাল তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘তোমাকে থাকতে হবে এবং বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে।’ শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত পালটিয়েছিলেন; তিনি ছিলেন বলেই বাংলাদেশের অর্জন এখন সারা দুনিয়ার নজরকাড়া। নজর কেড়েছেন তিনিও। তিনি বিশ্বনেতার তালিকাভুক্ত।

শেখ হাসিনার ফেরায় এমন উচ্ছ্বাসের অন্তত দুটো কারণ নির্দেশ করা যেতে পারে। এক. বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা তার কন্যাকে নেতৃত্বে পেয়েছি। কন্যার ধমনিতে প্রবাহিত পিতার রক্ত। হারানো বঙ্গবন্ধুকে যেন ফিরে পাই শেখ হাসিনাকে দেখে। সব মিলিয়ে তার বড় পরিচয় তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। দুই. ’৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশ নির্বাসনে ছিল; দেশটা তো ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছিল। অবয়ব-কাঠামোতে মুক্তিযুদ্ধ ছিল উধাও। বাংলাদেশ মিনি পাকিস্তান তকমা পেতে শুরু করেছিল। কাজেই শেখ হাসিনার ফেরা মানে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ফেরা।

শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্বে চার দশকের বেশি; সরকারের নেতৃত্বে প্রায় সতেরো-আঠারো বছর। উল্লেখ্য, তার নেতৃত্বেই ’৭৫-এর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরে। তার ওপর দিয়ে ঝড়ঝাপটা কম যায়নি। জীবনের ওপর আঘাত এসেছে উনিশ-কুড়ি বার। তার বেঁচে থাকায় অলৌকিকত্ব আছে, আছে দৈব ব্যাপারও। তবে আমরা ভাগ্যবান যে, আমরা তার নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হইনি। তার দীর্ঘ নেতৃত্ব পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা কিছু মন্তব্য করতে পারি।

সম্মোহন : সন্দেহ নেই, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সম্মোহনী; এবং তা ম্যাক্স ভেবার যে অর্থে/নিহিতার্থে ধারণাটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে শেখ হাসিনার সম্মোহনী নেতৃত্ব মিশ্র; দুটো উপাদান আছে। প্রথমত, আহরিত সম্মোহন (borrowed charisma)। তিনি সম্মোহনী বৈশিষ্ট্য আহরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে। তার সম্মোহন যে, তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনার নিজস্ব সম্মোহনী সংযোজন, যার উৎস তার বহুবিচিত্র জনগণলগ্ন কর্মকাণ্ড। এমন সম্মোহন সৃষ্টিতে একটি ঐতিহাসিক উপাদানও বিবেচ্য। তিনি যখন দেশে ফেরেন, তখন তো ফিরেছিলেন স্বজন হারানো শ্মশানে।

এমন একজন মানুষের জনগণলগ্ন হওয়ার বিকল্প কিছু নেই। কারণ তার নিজস্ব চাওয়া-পাওয়ার জগৎ বলে কিছু নেই। আর সে কথা তো তিনি দেশে ফিরেই বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি এসেছি আপনাদের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায় করতে।’ এ একটি কথায় জাদু ছিল, ছিল সম্মোহন।

সম্মোহনী নেতৃত্বের সমান্তরালে শেখ হাসিনাকে রূপান্তরের নেতৃত্বও (transformational leadership) বলা যায়; যে দুটো গুণ বঙ্গবন্ধুর মধ্যেও ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সময় পেয়েছিলেন ১,৩১৪ দিন; যে সময়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। বাকশাল কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় হতো। শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ যে অনেক বদলে গেছে, তার অগুনতি আর্থ-সামাজিক সূচক আছে। দেশ ও দেশের মানুষের দিনবদলের পালা চলমান। যেতে হবে এখনো বহুদূর। যাব অনেক দূর। কারণ আমাদের রয়েছে স্বপ্নসারথি শেখ হাসিনা।

সৃজনশীলতা : সৃজনশীল না হলে নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। জনতার কাজ করতে হলে সৃজনশীলতা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা দু’ধরনের নেতৃত্বের মিশেল-ঘটনাশ্রয়ী (eventful) এবং ঘটনা সংঘটনকারী (event-making)। আওয়ামী লীগের এক ক্রান্তিলগ্নে তিনি ঘটনাচক্রে সভাপতি হন। তিনি সভাপতি হয়ে দলকে রক্ষা করেছেন, দেশকে বাঁচানোর লক্ষ্যে নিবেদিত হয়ে অনেক ঘটনা সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ সৃষ্টিশীলতায় তিনি নিজেকে নিয়ত অতিক্রম করে যাচ্ছেন।

মানবিকতা : বঙ্গবন্ধুকন্যা বঙ্গবন্ধুর মতোই তার ব্যক্তিত্বে ধারণ করেন দুস্থ মানুষের জন্য কল্যাণ-কামনা। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনাকে নিয়ে অনেক কথাই বলা যায়; কিন্তু বলি শুধু রোহিঙ্গাদের কথা। নিজ বাসভূমে পরবাসী হয়ে প্রায় দশ-বারো লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আশ্রিত-অতিথি। অতিথি সৎকারের জন্য তৈরি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ভাসানচর প্রকল্প। তাদের নিজ দেশে ফেরানোর কূটনীতিতে কমতি-ঘাটতি নেই। কাজেই শেখ হাসিনার জন্য অভিধা এসেছে ‘মানবতার জননী’ (Mother of Humanity); এবং তা-ও আবার বিদেশ থেকে।

সাহসিকতা : বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব ভাষ্যে তার সাহসের কথা আছে; তার কন্যার মধ্যেও সাহস থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। বিবেকী সাহসের উৎস আত্মবিশ্বাস, যা আমরা পিতা-পুত্রীর মধ্যে দেখেছি/দেখছি। বঙ্গবন্ধুর সাহসের ফসল স্বাধীন বাংলাদেশ; শেখ হাসিনার সাহসের ফসল অসম্ভবকে সম্ভব করা দিনবদলের হাওয়া লাগা আজকের বাংলাদেশ, এবং তা করোনা অতিমারি সত্ত্বেও।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করা সম্ভব হয় শেখ হাসিনার সাহসের জন্য। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কোনো দিন ভাবতে পারেনি যে, তাদের বিচার হবে, রায় কার্যকর হবে। ’৭৬-এর আগস্ট মাসে লন্ডনের আইটিভিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কর্নেল রশীদ দম্ভ নিয়ে বলেছিল, ‘আমি শেখ মুজিবকে হত্যা করেছি। তোমাদের সাহস আছে আমার বিচার করার?’

তার দম্ভের কারণ ছিল দায়মুক্তি অধ্যাদেশ (সেপ্টেম্বর ১৯৭৫) ও পাক-মার্কিন সমর্থন। ’৯৬-র ১২ নভেম্বর সংসদে দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করার অসম্ভব সাহস দেখিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। জাতিকে তিনি কলঙ্কমুক্ত করেছিলেন।

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের নাটকের কথা আমরা জানি। অর্থায়ন বন্ধ হলো এমন একটি মেগা প্রকল্পের। এমন সংকটকালে শেখ হাসিনার সাহসী উচ্চারণ ছিল, আমরা পদ্মা সেতু তৈরি করব নিজেদের টাকায়। পদ্মা সেতু হয়েছে। সাহসী সিদ্ধান্তের কৃতিত্ব শেখ হাসিনার; আর অর্থ জোগান দেওয়ার কৃতিত্ব বাংলাদেশের মানুষের, তাদের টাকায় এ সেতু হলো। ’৭১-এ বিজয় ছিনিয়ে এনে লড়াকু বাঙালি বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল; নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু বানিয়ে বাঙালি একই কাজ করল। কবি সুকান্তের পঙ্ক্তি তো নিরর্থক নয়-

সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী

অবাক তাকিয়ে রয়ঃ

জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার

তবুও মাথা নোয়াবার নয়।

একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছিল; এখন শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে হয়েছে পদ্মা সেতু। বাঙালি তো মাথা নোয়াবার জাত নয়। শেখ হাসিনার সাহস প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।

নারী উন্নয়ন : শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে নারী প্রগতি বোঝানোর জন্য পশ্চিমে সত্তর-আশি দশকের জনপ্রিয় গায়িকা হেলেন রেড্ডির গান থেকে কলি ধার করছি-

আই অ্যাম উওম্যান, হিয়ার মি রোহ্র

ইন নাম্বারস টু-উ বিগ টু ইগনোর,

......................................

ইফ আই হ্যাভ টু, আই ক্যান ডু এনিথিং-

আই অ্যাম স্ট্রং,

আই অ্যাম ইনভিন্সিব্ল,

আই অ্যাম উওম্যান!

(শেষ বাক্যটি খুব জোর দিয়ে গাইতেন)

২০১০-এ ঘোষিত নারীনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু। তারপর তো অনেক পথচলা হয়েছে। শুধু রাষ্ট্রপতি বা নভোচারী হওয়া ছাড়া বাংলাদেশের নারী এখন সব অবস্থানে পৌঁছে গেছে। নারীর অগ্রযাত্রা নিশ্চিত হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে।

প্রবৃদ্ধি/উন্নয়নের রূপকার : মনে আছে, বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ড. কিসিঞ্জারের অভিসম্পাত ছিল, দেশটি তলাবিহীন ঝুড়ি হবে। বঙ্গবন্ধুর আমলেই জাতীয় গড় প্রবৃদ্ধি সাতের ওপর হয়ে ঝুড়িতে জমা হয়েছিল বেশ কিছু। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর, ’৭৬-এ দু’জন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ- জাআস্ট ফারল্যান্ড ও জে.আর. পার্কিনসন-বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনটি তীর্যক মন্তব্য করলেন। এক. বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বের কঠিনতম সমস্যা। দুই. বাংলাদেশের উন্নয়ন হলে, সব দেশেরই উন্নয়ন হবে। তিন. বাংলাদেশের উন্নয়ন হলেও, অন্তত দুইশ’ বছর লাগবে। কিন্তু ২০১৬-তে শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসাবে তকমা দেয়। এখন তো দেশটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের অবস্থানে উন্নীত, সারা বিশ্বের বিস্ময়।

সংস্কৃত প্রবচন আছে-রত্ন কর্ষতি পুরঃপরমেক/স্তদগতানুগতিকোন মহার্যৎ-অর্থাৎ একজনই আগে পথ তৈরি করে দেন। পরে সে পথ দিয়ে যাত্রায়াত করার লোক দুর্লভ হয় না। বঙ্গবন্ধুর তৈরি করা পথে শেখ হাসিনা চলছেন, যদিও তার পথচলা সহজ নয়, বেশ কঠিন।

শেখ হাসিনার জন্মদিনে আমরা বলতে বাধ্য ‘জন্মদিনে বলতে এলাম, শুভ তোমার জয়ন্তী।’

জয়তু শেখ হাসিনা।

ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি)

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

বিশ্বকাপে আজ

  
২৫ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

ওয়েলস ও ইরান

(আহমদ বিন আলী, বিকাল ৪টা)

কাতার ও সেনেগাল

(আল থুমামা, সন্ধ্যা ৭টা)

নেদারল্যান্ডস ও ইকুয়েডর

(খলিফা আন্তর্জাতিক, রাত ১০টা)

ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র

(আল বাইত, রাত ১টা)

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

পুলিশ-মিলিটারি দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: সিইসি

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
২৫ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভারসাম্য ছাড়া পুলিশ-মিলিটারি (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) দিয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে আয়োজন করাও সম্ভব নয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ১৮ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত নেপালের ‘ইলেকশন অব হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ ও প্রভিনসিয়াল অ্যাসেম্বলি’ পরিদর্শন নিয়ে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হবে না। তবে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তারা (রাজনৈতিক দল) ভোটকেন্দ্রে ভারসাম্য তৈরি না করলে পুলিশ-মিলিটারি দিয়ে সব সময় নির্বাচন সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও আস্থাপূর্ণ করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ অপরিহার্য জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মোটাদাগে মতৌক্য না থাকলে নির্বাচন কমিশন একটি সুন্দর নির্বাচন করতে পারবে না। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা লাগবে। তাদের মধ্যে একটা সমঝোতা লাগবে। অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়-উল্লেখ করে সিইসি বলেন, পুলিশ দিয়ে আমি ভারসাম্য তৈরি করব না। ভারসাম্য তৈরি হবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি এজেন্টরা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভারসাম্য তৈরি করবেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে একটা সুন্দর নির্বাচন সম্ভব নয়। এটা আমি বিশ্বাসও করি না। এখন সবদলই বলছে রাজপথে দেখা হবে। রাজপথে শক্তি পরীক্ষা হবে। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে আমি বলব-রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করে, শক্তি দেখিয়ে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবে না। আপনাদের নির্বাচনে আসতে হবে। নির্বাচনের মাঠে নির্বাচনের যে নীতি বিধি আছে সেই অনুযায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে কাজী আউয়াল সিইসি বলেন, সরকারের একটা ভিন্ন সত্ত্বা আছে। সরকারের মন্ত্রণালয়, দপ্তর আমাদের সহায়তা করতে হবে। তাদের তরফ থেকে আন্তরিক ও সদিচ্ছাভিত্তিক সহায়তা না থাকলে নির্বাচন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সফল করা সম্ভব হবে না। তাদের সহযোগিতা থাকলে নির্বাচন অধিক সুন্দর ও সফল হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একেবারেই সংলাপ হচ্ছে না মন্তব্য করে সিইসি বলেন, এটা হওয়া খুব প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। রাজনীতিতে আমরা জড়িত হতে চাই না। কিন্তু রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে আমরা আবশ্যক সহায়তা প্রত্যাশা করি। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রজ্ঞা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা একটু চিন্তা করবেন।

গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিইসি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আরপিও সংশোধনে আইন মন্ত্রণালয়ের সাড়া না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয় এখনো কিছু জানায়নি। তবে জানাবে না এটা নয়। আমরা একটু অপেক্ষা করি। আমার বিশ্বাস সরকার আমাদের প্রস্তাব পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখবে। আমরা মনে করি-যৌক্তিকভাবেই আমরা কিছু প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আমরা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করব। নির্বাচনের আগে নেপালের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি আবারও সংলাপে বসবেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমি মনে করি-সংলাপ যত করা যায় ততই ভালো।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আগামী বছর আসছে নতুন শিক্ষাক্রম

চালুর আগেই বদল মূল্যায়ন পদ্ধতি

 মুসতাক আহমদ 
২৫ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বাস্তবায়নের আগেই বদলে গেছে নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি। গত ৩০ মে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটিতে (এনসিসিসি) এ সংক্রান্ত রূপরেখা অনুমোদন হয়। তখন এতে পাঠের একটি অংশ শিখনকালীন আর বাকিটা সামষ্টিক মূল্যায়নের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু এখন শিখনকালীন ও সামস্টিক মূল্যায়ন মিলিয়ে ফেলা হয়েছে। অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার আগে অভিজ্ঞতাভিত্তিক যে পাঠ বা কাজ দেওয়া হবে, সেগুলোই থাকবে সামষ্টিক মূল্যায়নে। এ ক্ষেত্রে কেবল সমস্যাগুলো (প্রশ্ন) তুলনামূলক কঠিন করে দেওয়া হবে। এর ফলে উভয় ধরনের (শিখনকালীন ও সামষ্টিক) মূল্যায়নে আলাদাভাবে কোনো অংশ থাকছে না। প্রথমে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে মোট পাঠের ৬০ শতাংশই শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়ার কথা ছিল। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ৫০ শতাংশ, নবম-দশম শ্রেণিতে ৪০ আর উচ্চ মাধ্যমিকে ৩০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দৈনন্দিন পাঠদানে শিখনকালীন মূল্যায়ন করার কথা ছিল। সরকার ছাত্রছাত্রীদের বাস্তবজীবন ও কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে হাতে-কলমে শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আগামী বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম আসছে। প্রথম শ্রেণিতেও এটি চালু করার কথা আছে। এরপর পর্যায়ক্রমে চালু হবে অন্যান্য শ্রেণিতে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম এবং পরের বছর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে আর দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে চালুর কথা আছে। সেই হিসাবে ২০২৫ সালের এসএসসি ও ২০২৬ এবং ২০২৭ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা নতুন পদ্ধতিতে পাবলিক পরীক্ষায় বসবে। তবে তাদের (এসএসসি-এইচএসসি) পরীক্ষা পদ্ধতি কেমন হবে, তা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিতে গিয়েই চালুর আগে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কেননা সামষ্টিক মূল্যায়নে পাঠের আলাদা অংশ রাখা হলে, আগের মতোই মুখস্থভিত্তিক লিখিত পরীক্ষা ফিরে আসতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা আবার নোট-গাইড আর কোচিংয়ের কবলে পড়তে পারে। এসব ভেবেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা কমে যাবে। বর্তমানে মাধ্যমিকে ১০ থেকে ১৩টি পাঠ্যবই আছে। প্রত্যেক বিষয়ের ওপর পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। নতুন শিক্ষাক্রমে বিষয় কমবে না। কিন্তু কমবে পাঠ্যবই। চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয় থাকবে। এগুলো হচ্ছে-বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান। এগুলোর ওপর শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। এছাড়া পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৬টি, অষ্টম পর্যন্ত ৮টি আর বাকি শ্রেণিতে দশটি বিষয় থাকবে। উল্লিখিত ৫টির বাইরে যেসব বিষয় থাকবে তার ওপর অবশ্য কোনো অর্ধবার্ষিক বা বার্ষিক মূল্যায়ন হবে না। কেবল শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে। এটি কিছুতেই পরীক্ষা নয়।

অন্যদিকে বছরব্যাপী যে মূল্যায়ন (শিখনকালীন ও সামষ্টিক) হবে তার তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এজন্য শিক্ষকদের একটি অ্যাপ দেওয়া হবে মোবাইল ফোনে। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও সেটি ডাউনলোড করে সেটিতে তারা তথ্য দিতে (ডাটা ইনপুট) পারবেন। এরপর সুবিধাজনক সময়ে ইন্টারনেট সংযোগে এলে তার তথ্য কেন্দ্রীয় ডাটাব্যাংকে চলে আসবে। সূত্র জানায়, এ লক্ষ্যে বর্তমানে অ্যাপ তৈরির কাজ চলছে। আর কেন্দ্রীয় ডাটা ব্যাংকের জন্য আমাজনের সার্ভার ভাড়া নেওয়ার চিন্তা আছে দুবছরের জন্য। এর মধ্যে নিজস্ব সার্ভার ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে। সম্প্রতি এনসিটিবির এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নতুন এই শিক্ষাক্রম তৈরির সঙ্গে যুক্ত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, সামষ্টিক মূল্যায়নের নামে লিখিত পরীক্ষা শুরু হলে একদিকে অভিজ্ঞতাভিত্তিক লেখাপড়া বিঘ্নিত হবে। এজন্যই সামষ্টিক (অর্ধবার্ষিক-বার্ষিক) পরীক্ষার বদলে শিখনকালীন মূল্যায়নের পুনরাবৃত্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে একই বিষয়ে অপেক্ষাকৃত কঠিন সমস্যা সমাধান করতে দেওয়া হবে। ফলে পাঠ্যবই থেকে কিছু মুখস্থ করার প্রয়োজন পড়বে না।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবার যে ৬২ স্কুলে পাইলটিং (পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন) করা হয়েছে, তা অনেকটাই তাড়াহুড়োর করে হয়। এরপরও সেটির আলোকেই মূল্যায়নে উল্লিখিত পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু পাইলটিংয়ের ফলাফলে বিশেষজ্ঞরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। এ কারণে আগামী বছর সপ্তম শ্রেণিতে ফের পাইলটিং চলবে। এরপর ‘ফিডব্যাক’ (পর্যবেক্ষণ/মূল্যায়ন) অনুযায়ী ২০২৪ সালে তুলনামূলক চূড়ান্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি আনা হবে।

বিদ্যমান শিক্ষাক্রমে নবম-দশম দুই শ্রেণিতে পঠিত বিষয়ের ওপর এসএসসি আর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পঠিত বিষয়ের ওপর এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়। নতুন শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণি স্কুলে কেবল দুটি মূল্যায়নে অংশ নেবে। আর এসএসসি মূল্যায়ন নেওয়া হবে কেবল দশম শ্রেণির পাঠের ওপর। আর ইংরেজি মাধ্যমের ‘এ’ লেভেলের মতোই উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুবার মূল্যায়ন হবে। এটিকে শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা বলা হচ্ছে না। আর যেহেতু এটি পরীক্ষা নয়, তাই প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে যেভাবে শিখনকালীন মূল্যায়নের মধ্য দয়ে বছর কাটাতে হবে, সেভাবেই এই স্তরেও যেতে হবে। তবে এই মূল্যায়ন পদ্ধতি কেমন হবে, কী কী থাকছে-সেটি জানতে আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, যেহেতু দুই পাবলিক পরীক্ষায় শিখনকালীন মূল্যায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চিন্তা আছে, তাই বিদ্যমান সৃজনশীল পদ্ধতি থাকছে না। এর পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট নম্বরের এমসিকিউও বিদায় নিচ্ছে। এই উভয় ধরনের প্রশ্নের উত্তরই শিক্ষার্থীরা মুখস্থ করে পরীক্ষা দিচ্ছে। সৃজনশীল পদ্ধতি চালুর সময়ে নোটগাইড-কোচিং ব্যবসা ‘পালাবে’ বলা হলেও মূলত উভয় ব্যবসাই দারুণ জমজমাট হয়েছে। উদ্দীপক ‘কমন’ পড়ার জন্য এখন শিক্ষার্থীদের একাধিক কোম্পানির গাইডবই কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি পদ্ধতি বুঝতে যেতে হচ্ছে শিক্ষকের বা ব্যবসায়িক কোচিং সেন্টারে। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের শিখনকালীন বা ক্লাসরুমে এমন সব যোগ্যতা অর্জন করতে শেখানো হবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, যা সে নিজের জীবনে বাস্তব কাজে প্রয়োগ করতে পারবে। ফলে কেউ শিক্ষার মাঝপথে ঝরে পড়লেও জীবনযুদ্ধে কিছু করে খেতে পারবে।

সম্প্রতি সংশোধিত নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতির প্রস্তাবে দেখা যায়, শিক্ষার্থীকে বর্তমানে পরীক্ষার আগে সারা বছর পাঠদান আর মুখস্থ করানো হয়। এর পরিবর্তে এখন তাকে অ্যাসাইনমেন্ট (একটি বিষয়ে কাজ/সমস্যা সমাধান করতে দেওয়া), প্রেজেন্টেশন (কাজ করে আনা বিষয় ক্লাসরুমে উপস্থাপন), যোগাযোগ ইত্যাদি দেওয়া হবে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষকই লেখাপড়ার কেন্দ্রে থাকেন। নতুন পদ্ধতিতে তার ভূমিকা হবে সমন্বয়কের। কেন্দ্রে থাকবে শিক্ষার্থী। সহপাঠী, অভিভাবক, প্রতিবেশী বা সমাজের অংশীজনের কাছে গিয়ে শিক্ষকের দেওয়া কাজ সমাধান করে নিয়ে আসবেন। তার এই কাজ শিক্ষকের পাশাপাশি তার সহপাঠীসহ যাদের কাছে যাবেন তাদের সবাই মূল্যায়ন করবেন। এভাবে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট অর্ধবার্ষিক আর বার্ষিক পরীক্ষার আগে পর্যন্ত করবেন। মোট কয়টি অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে এবং উপস্থাপন করতে হবে তা শিক্ষকের গাইডে ও প্রশিক্ষণকালে বলে দেওয়া থাকবে। এ লক্ষ্যে কেবল শিক্ষক গাইডই তৈরি করা হবে না, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার আলোকে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নীতিমালা’ করে দেওয়া হবে।

জানা গেছে, মূল্যায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা এমনকি এসএসসি-এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায়ও নম্বর দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। এর পরিবর্তে মূল্যায়ন বা শিক্ষার্থীর গ্রেডিং নির্ধারণ তিনটি মন্তব্য দিয়ে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়ে তিন ভাগ করা হবে ক্লাসের শিক্ষার্থীদের। আর এটা হবে যোগ্যতা অর্জনের বিচারে। যারা নির্দিষ্ট কোনো কাজ কোনোরকমে করে আনতে পারবে তাদের দেওয়া হবে ‘প্রারম্ভিক’ মন্তব্য। যাদের কাজ মোটামুটি হবে তারা পাবে ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ মন্তব্য। আর যারা ওই কাজ সফলতার সঙ্গে ভালোভাবে করে এনে ক্লাসে উপস্থাপন করতে পারবে তাদের ‘পারদর্শী’ মন্তব্য দেওয়া হবে। কাউকে কোনো গ্রেড দেওয়া হবে। আবার শিক্ষক এককভাবে এই মূল্যায়ন করবেন না। একজন মাত্র শিক্ষকের মন্তব্যেও সামষ্টিক মন্তব্য বা ফল দেওয়া হবে না। এছাড়া শিক্ষক আলাদাভাবে নিজের স্মার্টফোনে যে মন্তব্য দেবেন তারা অন্য দশজন শিক্ষকের মন্তব্যের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয় করে মন্তব্য বা মূল্যায়ন গ্রেড তৈরি হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে তার সহপাঠী, অভিভাবক, সমাজের অংশীজন যে মন্তব্য দিয়েছেন সেসব যুক্ত করতে হবে অ্যাপে। ফলে সবমিলে শিক্ষকের অসাধুতা করার সুযোগ থাকবে না।

এই পদ্ধতি অনুযায়ী, কেবল নির্দিষ্টসংখ্যক দক্ষতা অর্জন করতে পারলেই পরবর্তী শ্রেণিতে উঠানো হবে শিক্ষার্থীকে। ক্লাসে দেওয়া কাজের পাশাপাশি উপস্থিতির হার, ক্লাসরুমে কাজে সাড়াদান, মনোযোগ, সহমর্মিতা ইত্যাদিও বিবেচনায় নেওয়া হবে শিক্ষার্থী মূল্যায়নে। পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণের ক্ষেত্রে তিন ধরনের মন্তব্য থাকবে। এগুলো হচ্ছে-‘উত্তীর্ণ হয়েছে’, ‘উত্তীর্ণ হয়নি’ এবং ‘শর্ত সাপেক্ষে উত্তীর্ণ’। আর এই তিন শ্রেণির বাইরে যারা থাকবে বা যারা কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করতে পারবে না তাদের আগের শ্রেণিতেই রাখা হবে।

প্রশ্ন উঠেছে, যদি পাবলিক পরীক্ষায় এই পদ্ধতিতে ফল বা মূল্যায়ন করা হয় তাহলে এর আন্তর্জাতিকীকরণ কীভাবে হবে? কেননা অনেকে এইচএসসি পাশের পর বিদেশে লেখাপড়া করতে যায়। এছাড়া উচ্চশিক্ষায়ও এসএসসি-এইচএসসি পর্যায়ের রেকর্ড দেখতে চায়। এর জবাবে শিক্ষাক্রমের কাজে যুক্ত অধ্যাপক তারিক আহসান বলেন, নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ভুটান এই পদ্ধতিতে যাচ্ছে। ২০২৫ সালে এসএসসি আর ২০২৭ সালে এইচএসসিতে যখন ‘মন্তব্য’ভিত্তিক ফল আর সনদ দেওয়া হবে, তখন ইংরেজি মাধ্যমের ও-এ লেভেলেও পরিবর্তন চলে আসবে। সুতরাং শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বে না। আর কেউ উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যেতে চাইলে সার্ভারে থাকা তার রেকর্ড বড় সম্পদ হবে। এটা থেকে সংশ্লিষ্টরা তাকে ‘রিকমেন্ড’ (সুপারিশ) করবেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের ভেতরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায়ও ততদিনে পরিবর্তন আসবে। আনতে বাধ্য হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন পদ্ধতিতে বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা থাকবে শিক্ষকের ও শিক্ষার মাঠ প্রশাসনের। এজন্য মধ্য ডিসেম্বরে প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক, একাডেমিক সুপারভাইজার, শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষা বোর্ড ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু করা হবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
No more pages