ভ্যাট ও চার্জে যাচ্ছে ব্যয়ের ২১ শতাংশ
jugantor
ব্যয় কমলে হজে যেতে বাড়বে আগ্রহ
ভ্যাট ও চার্জে যাচ্ছে ব্যয়ের ২১ শতাংশ
হজ প্যাকেজ: ভ্যাট প্রত্যাহারে সৌদি সরকারের কাছে আবেদন করা উচিত * বিমান ভাড়া কমাতে সব বিমান সংস্থা উন্মুক্ত করার দাবি

  হুমায়ুন কবির  

২৪ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

একজন হজযাত্রীর মোট ব্যয়ের ২১ শতাংশই চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জের পেছনে। টাকার অঙ্কে এটি ১ লাখ ৮ হাজার টাকা।

এর মধ্যে দেশে ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জে গুনতে হয় প্রায় ৫৭ হাজার টাকা। আর ৫১ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয় সৌদিতে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে একজন ব্যক্তির হজের প্যাকেজ ৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

তবে ভ্যাট ও চার্জের অংশ বাদ দেওয়া গেলে প্যাকেজের আকার নেমে আসবে ৪ লাখ ১৯ হাজার টাকায়। এতে অধিকসংখ্যক ব্যক্তি হজ করতে আগ্রহী হবেন।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম যুগান্তরকে বলেন, সৌদি আরব যে ভ্যাট আরোপ করেছে সেটি দেশটির সারকারি সিদ্ধান্ত। ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে বাংলাদেশ সৌদি সরকারের কাছে আবেদন করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা কতটুকু উদার হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর ব্যাপারে আমরা দীর্ঘদিন দাবি করে আসছি। এক্ষেত্রে তেমন সাড়া মেলেনি।

হাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ওমরা গমনে ট্রানজিট বিমান ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ফ্লাইটে ৮০-৮৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। যদিও ডলারের কারণে দাম কমে-বাড়ে। কিন্তু গত হজের সময় প্রত্যেক হজযাত্রীর কাছ থেকে বিমান ভাড়া ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করে হজযাত্রীদের জন্য সব বিমান সংস্থা উন্মুক্ত করে দিতে পারে। এতে যাত্রী বহনে প্রতিযোগিতা চলে আসবে। বহনকারী সংস্থা বেশি হলে ভাড়া এমনিতেই কমে আসবে।

ইসলামি ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধনের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজারের কোঠায় পৌঁছেছে। যেটি প্রতিবছর হজে যাওয়ার ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ। আবেদনের সংখ্যা এত বেশি বাড়ছে যে, এখন কেউ হজে যেতে চাইলে দুই থেকে তিন বছর আগে প্রাক-নিবন্ধন করতে হয়।

জানা যায়, নিজ দেশ ও সৌদি আরবে বড় অঙ্কের ভ্যাট পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন হাজিরা। সৌদি সরকারকে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচের সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। হজ মৌসুমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গমনেচ্ছু প্রত্যেক যাত্রীর হজ প্যাকেজ-১ এর সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৩ লাখ ৪২ হাজার ১১৮ টাকা পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে সৌদি সরকারকে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচে ভ্যাট পরিশোধ করতে হয় ৫১ হাজার ৩১৭ টাকা। এছাড়া গত মৌসুমে বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর মধ্যে নিট বিমান ভাড়া ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। ভাড়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে ভ্যাট ও অন্যান্য ফি দিতে হয় প্রায় ৭ হাজার ৩৪৫ টাকা। যেমন-এজেন্ট কমিশন ২ হাজার ১২৮ টাকা, এম্বারকেশন ফি ৫০০ টাকা। এম্বারকেশন ফির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ৩৩১ টাকা, আফগারি শুল্ক ২ হাজার টাকা, বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি ৮৫১ টাকা, যাত্রী সুরক্ষা ফি ৮৫১ টাকা, হজ টার্মিনাল সার্ভিস চার্জ ৬৮৪ টাকা দিতে হয়। এছাড়া সৌদি আরবে বিমানবন্দর বিল্ডিং চার্জ ৩ হাজার ৯৬০ টাকা ও সুরক্ষা চার্জ ৩৮৪ টাকা দিতে হয়। সবমিলে ৪ হাজার ৩৪৪ টাকা ফি যোগ হয়েছে। হজে যেতে প্রতি হজযাত্রীকে প্রায় ১২ হাজার টাকা ভ্যাট ও অন্যান্য ফি দিতে হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক হজযাত্রীর আইডি কার্ড ও লাগেজ ট্যাগ বাবদ ১০০০ টাকা ও কল্যাণ তহবিল ২০০ টাকা, প্রশিক্ষণ ফি ৩০০, খাওয়া খরচ ৩২ হাজার টাকা, হজ গাইড বাবদ ১১ হাজার ৭২২ টাকা দিতে হয়েছে। এই হিসাবে প্রত্যেক হাজিকে হজে যেতে নিট বিমান ভাড়া ছাড়া ভ্যাটসহ অন্যান্য খরচ বাবদ বাংলাদেশে পরিশোধ করতে হয়েছে ৫৭ হাজার টাকা।

দুই দেশে মোট ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৩১৭ টাকা। এমনিতে হজের ব্যয় অনেক বেড়েছে তার সঙ্গে বড় অঙ্কের ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জ টাকা বহন করা অধিকাংশ হাজির কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অথচ সরকার চাইলে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করে এই খরচ মওকুফ অথবা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। এদিকে গত মৌসুমে সরকারি খরচে ২৫৪ জন ফ্রি হজে গেছেন। এই খরচ হজ প্যাকেজ থেকে সমন্বয় করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে হজের খরচ ছিল সর্বনিম্ন ১ লাখ ৯৬ হাজার। ২০১৫ সালে হজের তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ২০১৭ সালে আরও বেড়ে ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকায় হয়। ২০১৯ সালে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ২০২০ সালে হয় ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা। আর গত হজ মৌসুমে খরচ লেগেছে গড়ে ৫ লাখ টাকার বেশি। এর বাইরেও হজযাত্রীদের নানা খরচ আছে। গত হজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজে-১ সর্বোচ্চ ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা লেগেছে। প্যাকেজের বাইরে ব্যক্তিগত ভোগবিলাস করতে হলে আরও বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়।

আবাসনসহ অন্যান্য খরচ সৌদি মুদ্রা রিয়ালে দিতে হয়। সৌদি রিয়ালের দাম বাড়লে এ খাতে খরচও বেড়ে যায়। গত মে মাসে হজের প্যাকেজ চলার সময় প্রতি রিয়ালের দাম ছিল ২৪ টাকা ৩০ পয়সা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকায়। ফলে রিয়ালের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আগামী হজে মৌসুমে খরচ আরও বাড়বে।

সূত্র জানায়, সরকারি ‘এ’ প্যাকেজে গত বছরে তুলনায় চলতি বছর হজে বাড়ি ভাড়া ৫০ হাজারের বেশি টাকা বেড়েছে। উন্নত বাস সার্ভিস তিনগুণ বেড়েছে। জেদ্দা বিমানবন্দরে আপ্যায়ন খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। হাজিদের বাড়ি ভাড়া ছাড়া অন্যান্য ফি এক বছরের ব্যবধানে অনেক বেড়েছে। জানা যায়, বাংলাদেশে সরকারিভাবে হজ করতে পারে শুধু ৪ শতাংশ হাজি। বাকি ৯৬ শতাংশ বেসরকারিভাবে হজ পালন করেন। দেশে মোট অনুমোদিত হজ এজেন্সি ১ হাজার ১৭০টি। প্রতিবছর ১ লাখ ৩৫ হাজার জন হজে যান। গতবার মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত আকারে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ পালন করেন।

ব্যয় কমলে হজে যেতে বাড়বে আগ্রহ

ভ্যাট ও চার্জে যাচ্ছে ব্যয়ের ২১ শতাংশ

হজ প্যাকেজ: ভ্যাট প্রত্যাহারে সৌদি সরকারের কাছে আবেদন করা উচিত * বিমান ভাড়া কমাতে সব বিমান সংস্থা উন্মুক্ত করার দাবি
 হুমায়ুন কবির 
২৪ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

একজন হজযাত্রীর মোট ব্যয়ের ২১ শতাংশই চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জের পেছনে। টাকার অঙ্কে এটি ১ লাখ ৮ হাজার টাকা।

এর মধ্যে দেশে ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জে গুনতে হয় প্রায় ৫৭ হাজার টাকা। আর ৫১ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয় সৌদিতে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে একজন ব্যক্তির হজের প্যাকেজ ৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

তবে ভ্যাট ও চার্জের অংশ বাদ দেওয়া গেলে প্যাকেজের আকার নেমে আসবে ৪ লাখ ১৯ হাজার টাকায়। এতে অধিকসংখ্যক ব্যক্তি হজ করতে আগ্রহী হবেন।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম যুগান্তরকে বলেন, সৌদি আরব যে ভ্যাট আরোপ করেছে সেটি দেশটির সারকারি সিদ্ধান্ত। ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে বাংলাদেশ সৌদি সরকারের কাছে আবেদন করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা কতটুকু উদার হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর ব্যাপারে আমরা দীর্ঘদিন দাবি করে আসছি। এক্ষেত্রে তেমন সাড়া মেলেনি।

হাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ওমরা গমনে ট্রানজিট বিমান ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ফ্লাইটে ৮০-৮৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। যদিও ডলারের কারণে দাম কমে-বাড়ে। কিন্তু গত হজের সময় প্রত্যেক হজযাত্রীর কাছ থেকে বিমান ভাড়া ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করে হজযাত্রীদের জন্য সব বিমান সংস্থা উন্মুক্ত করে দিতে পারে। এতে যাত্রী বহনে প্রতিযোগিতা চলে আসবে। বহনকারী সংস্থা বেশি হলে ভাড়া এমনিতেই কমে আসবে।

ইসলামি ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধনের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজারের কোঠায় পৌঁছেছে। যেটি প্রতিবছর হজে যাওয়ার ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ। আবেদনের সংখ্যা এত বেশি বাড়ছে যে, এখন কেউ হজে যেতে চাইলে দুই থেকে তিন বছর আগে প্রাক-নিবন্ধন করতে হয়।

জানা যায়, নিজ দেশ ও সৌদি আরবে বড় অঙ্কের ভ্যাট পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন হাজিরা। সৌদি সরকারকে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচের সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। হজ মৌসুমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গমনেচ্ছু প্রত্যেক যাত্রীর হজ প্যাকেজ-১ এর সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৩ লাখ ৪২ হাজার ১১৮ টাকা পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে সৌদি সরকারকে বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচে ভ্যাট পরিশোধ করতে হয় ৫১ হাজার ৩১৭ টাকা। এছাড়া গত মৌসুমে বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর মধ্যে নিট বিমান ভাড়া ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। ভাড়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে ভ্যাট ও অন্যান্য ফি দিতে হয় প্রায় ৭ হাজার ৩৪৫ টাকা। যেমন-এজেন্ট কমিশন ২ হাজার ১২৮ টাকা, এম্বারকেশন ফি ৫০০ টাকা। এম্বারকেশন ফির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ৩৩১ টাকা, আফগারি শুল্ক ২ হাজার টাকা, বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি ৮৫১ টাকা, যাত্রী সুরক্ষা ফি ৮৫১ টাকা, হজ টার্মিনাল সার্ভিস চার্জ ৬৮৪ টাকা দিতে হয়। এছাড়া সৌদি আরবে বিমানবন্দর বিল্ডিং চার্জ ৩ হাজার ৯৬০ টাকা ও সুরক্ষা চার্জ ৩৮৪ টাকা দিতে হয়। সবমিলে ৪ হাজার ৩৪৪ টাকা ফি যোগ হয়েছে। হজে যেতে প্রতি হজযাত্রীকে প্রায় ১২ হাজার টাকা ভ্যাট ও অন্যান্য ফি দিতে হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক হজযাত্রীর আইডি কার্ড ও লাগেজ ট্যাগ বাবদ ১০০০ টাকা ও কল্যাণ তহবিল ২০০ টাকা, প্রশিক্ষণ ফি ৩০০, খাওয়া খরচ ৩২ হাজার টাকা, হজ গাইড বাবদ ১১ হাজার ৭২২ টাকা দিতে হয়েছে। এই হিসাবে প্রত্যেক হাজিকে হজে যেতে নিট বিমান ভাড়া ছাড়া ভ্যাটসহ অন্যান্য খরচ বাবদ বাংলাদেশে পরিশোধ করতে হয়েছে ৫৭ হাজার টাকা।

দুই দেশে মোট ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৩১৭ টাকা। এমনিতে হজের ব্যয় অনেক বেড়েছে তার সঙ্গে বড় অঙ্কের ভ্যাট ও বিভিন্ন চার্জ টাকা বহন করা অধিকাংশ হাজির কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অথচ সরকার চাইলে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করে এই খরচ মওকুফ অথবা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। এদিকে গত মৌসুমে সরকারি খরচে ২৫৪ জন ফ্রি হজে গেছেন। এই খরচ হজ প্যাকেজ থেকে সমন্বয় করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে হজের খরচ ছিল সর্বনিম্ন ১ লাখ ৯৬ হাজার। ২০১৫ সালে হজের তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ২০১৭ সালে আরও বেড়ে ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকায় হয়। ২০১৯ সালে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ২০২০ সালে হয় ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা। আর গত হজ মৌসুমে খরচ লেগেছে গড়ে ৫ লাখ টাকার বেশি। এর বাইরেও হজযাত্রীদের নানা খরচ আছে। গত হজে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজে-১ সর্বোচ্চ ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা লেগেছে। প্যাকেজের বাইরে ব্যক্তিগত ভোগবিলাস করতে হলে আরও বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়।

আবাসনসহ অন্যান্য খরচ সৌদি মুদ্রা রিয়ালে দিতে হয়। সৌদি রিয়ালের দাম বাড়লে এ খাতে খরচও বেড়ে যায়। গত মে মাসে হজের প্যাকেজ চলার সময় প্রতি রিয়ালের দাম ছিল ২৪ টাকা ৩০ পয়সা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকায়। ফলে রিয়ালের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আগামী হজে মৌসুমে খরচ আরও বাড়বে।

সূত্র জানায়, সরকারি ‘এ’ প্যাকেজে গত বছরে তুলনায় চলতি বছর হজে বাড়ি ভাড়া ৫০ হাজারের বেশি টাকা বেড়েছে। উন্নত বাস সার্ভিস তিনগুণ বেড়েছে। জেদ্দা বিমানবন্দরে আপ্যায়ন খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। হাজিদের বাড়ি ভাড়া ছাড়া অন্যান্য ফি এক বছরের ব্যবধানে অনেক বেড়েছে। জানা যায়, বাংলাদেশে সরকারিভাবে হজ করতে পারে শুধু ৪ শতাংশ হাজি। বাকি ৯৬ শতাংশ বেসরকারিভাবে হজ পালন করেন। দেশে মোট অনুমোদিত হজ এজেন্সি ১ হাজার ১৭০টি। প্রতিবছর ১ লাখ ৩৫ হাজার জন হজে যান। গতবার মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত আকারে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ পালন করেন।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের ১০ বছর

সাভারে বিচারের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

 আশুলিয়া প্রতিনিধি 
২৫ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

সাভারের তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ১০ বছর পূর্তিতে বৃহস্পতিবার পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। দিনটির স্মরণে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, তাজরীন ফ্যাশনের মারা যাওয়া শ্রমিকদের আত্মীয়স্বজন এবং বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা সমাবেশ করেছেন। তাজরীনকাণ্ডে দোষীদের বিচারের দাবি জানান তারা। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন কারখানার ১১৩ শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যান। এ সময় কয়েকশ শ্রমিক দগ্ধ ও আহত হন । শ্রমিক নেতারা জানান, সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারেননি আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া শ্রমিকদের আত্মীয়স্বজন ও আহত শ্রমিকরা। মারাত্মক আহতরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ঘটনায় কেউ কেউ ক্ষতিপূরণ পেলেও অনেকেই বঞ্চিত। এখনও ক্ষতিপূরণের আশায় আছেন অনেকে। তাজরীনকাণ্ডের পর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও দোষীদের বিচার শেষ হয়নি। নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি।

তাজরীনের সুইং অপারেটর রেবা খাতুন জানান, ওই দিন আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর তিনি তিন তলা থেকে লাফ দেন। এতে তার কোমরের হাড় ভেঙে যায় ও পায়ে ব্যথা পান। এ ব্যথা নিয়ে তিনি ১০ বছর ধরে শ্রমিক নেতাসহ সব দপ্তরে ক্ষতিপূরণের জন্য ঘুরছেন। কিন্তু কারও দয়া পাননি। কত জায়গায় গেছি। শুধু বিদেশি কিছু সহায়তা ছাড়া আর কিছুই পাইনি। বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি তুহিন চৌধুরী বলেন, তাজরীনে আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনার ১০ বছর পার হলেও দোষীদের শাস্তি হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে মালিকপক্ষের অবহেলায় পোশাক শিল্পে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

বিল্পবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দু বেপারী বিন্দু বলেন, শ্রমিকরা আরও কোনো বিচার পায়নি। গার্মেন্টস টেইলার্স ওয়ার্কাস লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম সোহাগ বলেন, তাজরীন ট্র্যাজেডির পর ভবনটি দানবের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ ভবনে নতুন কোনো কারখানা অথবা হাসপাতাল বানিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান তিনি।

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রথম টিউব উদ্বোধন কাল

 চট্টগ্রাম ব্যুরো 
২৫ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রথম টিউবের উদ্বোধন হবে কাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন সকাল ১০টায় ভার্চুয়ালি এ টিউবের উদ্বোধন করবেন।

সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন এক চিঠিতে জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন।

কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত টানেলের দুটি টিউবের অপরটির বাকি কাজও ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে টিউবের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও বৈদ্যুতিক, মেকানিক্যালসহ আরও অনেক কাজ বাকি আছে। এসব কাজ শেষ করে যান চলাচলের জন্য এ টানেল প্রস্তুত হতে আগামী বছর জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে টানেল দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে।

সূত্র জানায়, চলতি মাসে এ টানেলের সামগ্রিক কাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে বলা যায়। দুটি টিউব তিনটি সংযোগপথের মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। এগুলোর খননকাজও শেষ হয়েছে। দুই টিউবের অভ্যন্তরে সড়ক এবং সংযোগ সড়ক ও গোলচত্বরের নির্মাণ কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলছে টানেলের ভেতরে বৈদ্যুতিক লাইট স্থাপন, অগ্নিপ্রতিরোধক বোর্ড স্থাপন, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, পাম্প স্থাপন, টানেলের ভেতরে সাজসজ্জা ও বাতাস চলাচলের জন্য ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা চালুর কাজ।

টানেল প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি ডিসেম্বরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই টানেলের কাজ শেষ করার। সরকারের পক্ষ থেকেও তাগাদা ছিল।

জানা গেছে, এ টানেলটি ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে। নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল এটি। কর্ণফুলীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের কাজ উদ্বোধন করেন। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। ২ শতাংশ হার সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে এ ব্যাংক। বাকি ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশ

নগরীর আশপাশে অবস্থান হাজারো নেতাকর্মীর

 আবুল খায়ের, কুমিল্লা 
২৫ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

কুমিল্লায় রাত পোহালেই বিএনপির গণসমাবেশ। এরই মধ্যে দলটির সাংগঠনিক এ বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক নগরীসহ আশপাশের এলাকাগুলোয় অবস্থান নিয়েছে।

অনেকে হোটেল-মোটেল ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে থাকছেন। কুমিল্লা দক্ষিণ, মহানগর ও উত্তর জেলা বিএনপির উদ্যোগে প্রায় ৫০ হাজার লোকের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে সমাবেশের দিন মাঠের দখল এবং নিজেদের আধিপত্য দেখাতে পাল্লা দিয়ে লোকসমাগম ঘটাচ্ছে জেলা ও মহানগর নেতারা।

বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু এবং নিজাম উদ্দিন কায়সারও ব্যাপক শোডাউন করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে মাঠের শৃঙ্খলা রক্ষায় দুদিন আগে থেকে কুমিল্লায় অবস্থান করে সবকিছু তদারকি করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

আগামীকাল কুমিল্লার টাউন হল মাঠে বিএনপির এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মাঝে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া, মাঠ প্রস্তুত করাসহ সব কাজ সম্পন্ন করেছে দলটি। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুসহ একদল সিনিয়র নেতা সার্বিক বিষয়গুলো তদারকি করছেন।

এ গণসমাবেশকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, অন্য বিভাগের মতো এখানে পরিবহণ ধর্মঘট ডাকা হয়নি। কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা না থাকায় ব্যাপক লোকসমাগমের আশা করছেন নেতাকর্মীরা।

এদিকে মূলধারার বিএনপি নেতা এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিন মাঠের সিংহভাগ তার সমর্থক দ্বারা দখলে রাখার চেষ্টা করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে লোকসমাগমের চেষ্টা করছেন বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার।

তবে মাঠ দখল নিয়ে যেন কোনো সংঘাত-সহিংসতা কিংবা হট্টগোলের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখছেন সমাবেশ সফল করার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতারা। তাছাড়া কুমিল্লার বাইরে থেকে আসা অতিথি নেতাকর্মীরা যেন থাকা-খাওয়ার কোনো সমস্যায় না পড়েন, সেদিকও তদারকি করছে মহানগর বিএনপি।

কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, আমরা ৫০ হাজার লোকের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। সমাবেশে আসা কোনো অতিথি নেতাকর্মী যেন কোনোরকম ভোগান্তির শিকার না হন, সে বিষয়টি খেয়াল রাখছি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নগরীসহ আশপাশের এলাকাগুলোয় হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান করছেন, আমরা তাদের আপ্যায়ন এবং সব সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। নেতাকর্মীরা কোন কোন এলাকায় জড়ো হয়েছেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুলিশি হয়রানিসহ নানা ঝামেলা এড়াতে এই মুহূর্তে তা আমরা প্রকাশ করছি না। তবে সময় মতো কুমিল্লার টাউন হল মাঠসহ প্রতিটি সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে।

মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমার হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক সমাবেশে উপস্থিত থাকবে, সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যেই আমি এমন উদ্যোগ গ্রহন করেছি।

নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, আমার ১০ হাজার কর্মী-সমর্থক সমাবেশে যোগ দেবে, এরই মাঝে আমি তাদের আপ্যায়নসহ সবকিছু তদারকি করছি। তবে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় এমন কোনো কাজ আমি এবং আমার কর্মী-সমর্থকরা করবে না।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
No more pages