আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে আটকের পর নিখোঁজ রাবির ২ শিক্ষার্থী

 রাবি প্রতিনিধি 
১৪ নভেম্বর ২০২২, ১০:৪৬ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে। রোববার সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে নগরীর চকপাড়া এলাকা থেকে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন ব্যক্তি তাদের তুলে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।

নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর নাম শাকিব খান এবং রেজোয়ান ইসলাম। তারা দুইজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং নগরী চকপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় একসঙ্গে থাকতেন।

এ বিষয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিখোঁজ শিক্ষার্থী রেজোয়ানের বড়ভাই মেরাজুল ইসলাম জানান, গত শনিবার রাতে আমি যশোর থেকে রাজশাহীতে আসায় তাদের সঙ্গেই ঘুমিয়ে ছিলাম। আনুমানিক সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে দেখি রেজোয়ান ও শাকিবের হাতে হাতকড়া পরানো। এছাড়া তাদের পরিচিত আরও দুইজনের মধ্যে রবিন নামের একজনের হাতকড়া পরানো ছিল। বাসার মধ্যে ৫-৬ জন সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি ছিল। তারা বাসার সব জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। 

তিনি বলেন, তল্লাশি শেষে তারা শাকিব, রেজোয়ানের ফোন ও ল্যাপটপ নিয়ে তাদেরসহ বাকি দুজনকে একটি সাদা রঙের কালো কাচের হায়েস মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। যাওয়ার আগে তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয় এবং পরবর্তীতে যোগাযোগ করবেন জানিয়ে আমার ফোন নম্বর নেয়। এরপর থেকে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরাও আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

থানায় অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাদিন খোঁজ নেওয়ার পর না পেয়ে রাতে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ জিডি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। পরে রাজশাহী র‌্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হলে, র‌্যাবের পক্ষ থেকে কাউকে তুলে নেওয়া হয়নি বলে জানানো হয় এবং র্যা ব কর্তৃপক্ষ চন্দ্রিমা থানায় জিডি করতে বলেন।

তবে সোমবার চন্দ্রিমা থানায় জিডি করতে কয়েকবার যাওয়া হলে শাকিব, রেজোয়ান নিখোঁজ বা অপহৃত হয়নি জানিয়ে থানা কর্তৃপক্ষ জিডি গ্রহণ করেনি। 

জিডি না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরান আলী বলেন, এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তবে এখন পর্যন্ত এটুকু নিশ্চিত করতে পারি যে, তারা হারিয়ে যায়নি বা অপহৃত হয়নি।

তবে এ বিষয়ে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, তাদের নামে আর্থিক লেনদেন বিষয়ে প্রতারণা চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকায় ঢাকা পুলিশের একটি শাখা তাদের আটক করেছে। 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সোবাহান হীরা বলেন, বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। এ বিষয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরাও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমি এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে খোঁজ নিতে বলেছি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের নিখোঁজের বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। আমরা যতদূর জেনেছি, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে আছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আছে সে বিষয়ে আমরা জানি না।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন