নবাবগঞ্জে আনজাম গ্লোবালে বিনিয়োগের নামে ভয়ানক প্রতারণা

 যুগান্তর প্রতিবেদন, নবাবগঞ্জ 
১৭ নভেম্বর ২০২২, ১০:৪১ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

আনজাম গ্লোবাল নামক কথিত ই-কমার্স নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানির প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহারসহ আশপাশের এলাকার অসংখ্য মানুষ আজ দিশেহারা। আর এই ভয়ানক প্রতারক চক্রের মূলহোতা উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের সিংজোর এলাকার মো. জালাল উদ্দিন, বক্সনগর চৌরাহাটি এলাকার শ্যামল শীলের স্ত্রী ঝুমুরী বিশ্বাস ও তার ছোটভাই বাসুদেব চন্দ্র শীল এখন লাপাত্তা।

প্রতারক চক্রের টার্গেট ছিল উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণী, কলেজ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রবাসীদের স্ত্রী, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে, নিজ মোবাইলে আইডি খুলে দিয়ে, এ অঞ্চল থেকে লুটে নিয়েছে প্রতারক চক্র কয়েক কোটি টাকা।

জানা যায়, চোখ ধাঁধানো আধুনিক ও উন্নত ডেকোরেশন করে, ২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে, উপজেলার কাশিমপুর প্যারাগন হাসপাতালে বিপরীতে একটি  ভাড়া বাড়িতে, আনজাম গ্লোবাল নামক প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলে প্রতারক চক্রের মূলহোতা, জালাল, ঝুমুরী বিশ্বাস ও বাসুদেব চন্দ্র। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানি ডেসটিনি-২০০০ এর আদলে তাদের  ব্যবসা শুরু করে এখানে।

বিনিয়োগকারীদের মোবাইল ফোনে আইডি খুলে দিয়ে, আইডি প্রতি ১৬শ করে টাকা নেয় প্রথমে। পরে প্রতারক চক্রের প্রলোভনে পরে একজন বিনিয়োগকারী এক হাজার থেকে ৩ হাজার আইডি পর্যন্ত ক্রয় করে অধিক লাভের আশায়।

নবাবগঞ্জ সদরে অবস্থিত এক ওষুধ ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি ১শ আইডি ক্রয় করি যার প্রতিটির মূল্য ১৬শ টাকা। অধিক মুনাফার আশায় তার মতো একাধিক বিনিয়োগকারী টিম তৈরি করে আইডি ক্রয় করে প্রতারিত হয়েছে। গ্রাহকপ্রতি কমিশন দেওয়া হবে এমন কথা বলে আনজাম গ্লোবালে প্রতিনিয়ত লোকের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চালায় চক্রটি।

উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের সিংহরা গ্রামের রাহাত পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, আমি ৭০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছি। কোনো টাকাই ফেরত পাইনি। কবে পাবো কোনো নিশ্চয়তা নেই। এভাবে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে প্রায় ৮-৯ মাস ধরে তারা পালিয়ে গেছে। তাদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে কয়েকশ নারী-পুরুষ।

বান্দুরা এলাকার এক নারী গ্রাহক জানান, তিনি প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তার সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে। স্বজনদের কাছ থেকে ধার নেয়া এ টাকা পরিশোধে তাকে চাপ সৃষ্টি করছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ- তাদের টাকা নিয়ে জালাল ও ঝুমুরী তাদের নামে বেনামে ব্যাংকে জমা রাখে ও নিজ নামে জায়গা জমি কিনেছে। এই চক্রের বিরুদ্ধে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ দীর্ঘ সময় ধরে অনুসন্ধান করে। সর্বশেষ গত সোমবার তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে মামলা করে।

নবাবগঞ্জ থানার ওসি শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীরা স্থানীয় সাংসদ সালমান ফজলুর রহমানের কাছে অভিযোগ করলে তার নির্দেশে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে ২ জনকে আটক করা হয়েছে। মূল হোতা জালাল ও ঝুমুরীকে তারা খুব স্বল্প সময়ে গ্রেফতারে সক্ষম হবে পুলিশ।

আনজাম গ্লোবালের প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে দোহার ও নবাবগঞ্জে দুই হাজারের অধিক বিনিয়োগকারী আজ দিশেহারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবাবগঞ্জের এক গৃহবধূ যুগান্তরকে বলেন, আমি জালাল ও ঝুমুরী বিশ্বাসের কথায় আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা এনে আনজাম গ্লোবালে প্রায় ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। টাকার জন্য আমি বাড়িতে থাকতে পারি না। আজ কয়েক মাস যাবত মোবাইল বন্ধ করে রেখেছি। জালাল ও ঝুমুরীর কাছে টাকার কথা বললে তারা দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। অপরদিকে পাওনাদাররা আমার বাড়ি ছাড়ছে  না। আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নেই আমার। তিনি এই প্রতারক চক্রকে  দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য জোর দাবি জানান।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জেলার খবর
অনুসন্ধান করুন