মিলানা মমিনের ভাবনায় শুধুই গান (ভিডিও)

 শামীম হোসেন 
২৯ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৪৯ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

মাত্র চার বছর বয়সে গানে হাতেখড়ি। সাত বছর বয়সে প্রথম গেয়েছিলেন স্টেজে। লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকায় গানের ভুবনে পদচারণা কমিয়ে দিয়েছিলেন কণ্ঠশিল্পী মিলানা মমিন। হলিক্রস থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি থেকে ডাবল গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পাওয়া মিলানা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োটেকনোলজিতে অনার্স-মাস্টার্স করেন। এরপর মাঝে চাকরি করেছেন কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সব ছেড়ে তার ভাবনায় এখন শুধুই গান। যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলানা মমিন গানকে ঘিরে তার পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।

প্রশ্ন : ঈদে নতুন কী গান আসছে?
মিলানা মমিন
: এবারের ঈদে আমার মিলানা মোমিন ইউটিউব চ্যানেল থেকে ‘ভীষণ ভালো লাগে’ শিরোনামে একটি ডুয়েট গান আসছে। আমার সঙ্গে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন শেখ সাদী। মেহেদী হাসান লিমনের কথায় গানটির সুর করেছেন জেসএসএ মার্সেল। ভিডিও পরিচালনা করেছেন রাকিব আহমেদ। ঈদের পর আরও একটি গান রিলিজ দেব। এখন পর্যন্ত আমার দুটি মৌলিক গান মুক্তি পেয়েছে। প্রথম গান ‘মনের দরজা’ গত বছর ডিসেম্বরে মুক্তি পায়। শ্রদ্ধেয় লুৎফর হাসানের কথায় গানের সুর ও সংগীতায়োজন করেছিলেন শান সায়েক। এছাড়া অসংখ্য গান কাভার করেছি।

প্রশ্ন : গানে হাতেখড়ি যেভাবে?
মিলানা :
মাত্র চার বছর বয়সে আমার গানের হাতেখড়ি। সাত বছর বয়সে প্রথম স্টেজে গান করি। তখন কিছুই বুঝতাম না। শুধু মনে আছে গান শেষে আম্মুর কাছে আসার পর সবাই আমাকে অনেক আদর করছিলেন। আমি বাফা, বুলবুল ললিতকলা, শিশু একাডেমি এবং ছায়ানটে গান শিখেছি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূল অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছি। ২০১১ সালের দিকে আমি গান শেখানো শুরু করি। এটা করি সম্পূর্ণ ভালো লাগা থেকে। কারণ শেখাতে গিয়ে নিজেও গানের চর্চার মধ্যে থাকতে পারি।

প্রশ্ন : পেশা হিসাবে গানকে বেছে নিলেন কেন?
মিলানা :
ভালো লাগা থেকেই আমি গান করি। ছোটবেলায় পড়ালেখার পাশাপাশি গান, নাচ ও ছবি আঁকা-এই তিনটি বিষয়ে চর্চা করতাম। এরমধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লাগার জায়গাটা হলো গান। আমি গানটাকে ধরে রেখেছি, কারণ গান আমাকে টানে। গান আমার আত্মার সঙ্গে জড়িত। আমার কাছে গান ছাড়া বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না। আমার ভাবনাজুড়ে এখন শুধুই গান। আমি বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি। কিন্তু জীবনে সুখী হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর যেটা আপনাকে সুখ দেয়, সেটা নিয়েই থাকা উচিত। এজন্য গান আমি পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছি। আমি ভাগ্যবান যে, বরাবরই পরিবার থেকে সম্পূর্ণ সর্মথন-সহযোগিতা পেয়ে আসছি।

প্রশ্ন : গান নিয়ে পরিকল্পনা?
মিলানা :
গান যেহেতু পেশা হিসেবে নিয়েছি, গানই করে যাব। নাটক, সিনেমায় গান করার পাশাপাশি আমার নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য নিয়মিত গান করব। এছাড়া কিংবদন্তি সব শিল্পীর গান কাভার করার পরিকল্পনা আছে। কখনোই ভাইরাল হওয়ার পক্ষে আমি নই। আমি শ্রোতাদের মনে জায়গা পেতে চাই। যেন চলে যাওয়ার পরও তারা আমাকে মনে রাখেন।

প্রশ্ন : আপনি প্লেব্যাকের জন্য প্রস্তুত কি না?
মিলানা :
প্রত্যেক শিল্পীর স্বপ্ন থাকে সিনেমায় গান করার। আমি তার বাইরে নই। আমি প্লেব্যাকের জন্য প্রস্তুত। সুযোগ পেলে সিয়াম আহমেদ ও পূজা চেরি জুটির সিনেমায় গান করতে চাই। এই জুটি গড়ে ওঠার পর নতুন করে বাংলা সিনেমা দেখার প্রতি ঝোক বেড়ে গেছে। এছাড়া মেহজাবিন চৌধুরী আপু, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, আফরান নিশো ভাইদের নাটকে গান করার ইচ্ছাটাও প্রবল।

প্রশ্ন : গানের পথে চলার অনুপ্রেরণা ...
মিলানা :
আজ আমাকে যে মিলানাকে দেখছেন, তার পুরোটাই আমার আম্মুর জন্য সম্ভব হয়েছে। সত্তর-আশির দশকে আমার আম্মু এক প্রকার লড়াই করে সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়েছেন। আমি সেই মায়েরই সন্তান। যত বাধাই আসুক সামনে এগিয়ে যাবই। অনেকেই অনেক কথা বলবে, বলুক। বাংলাদেশ স্বাধীন, মানুষও স্বাধীন। ডানে-বাঁয়ে তাকাতে গেলে তো রাস্তা হারিয়ে ফেলব। রাস্তা হারানোর মতো মানুষ আমি নই।

প্রশ্ন : আপনার কাছে কোনটা ভালো গান?
মিলানা :
ভিউ দিয়ে গান নির্ধারণ করা উচিত নয়। ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যের কল্যাণে হঠাৎ যেকোনো গান ভাইরাল হওয়াটা ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। আমি মনে করি, গানের মতো সাধনার একটি বিষয় ভাইরাল দিয়ে মাপা ঠিক নয়। গান নিয়ে যারা ভাবেন, গবেষণা করেন, তারা যদি ভালো বলেন আমার কাছে সেটাই ভালো গান।

প্রশ্ন : ঝরে পড়া মেধাবীদের সংরক্ষণে আপনার পরামর্শ কী?
মিলানা :
গানের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। বিভিন্ন রিয়েলেটি শো’র মাধ্যমে যারা আসে তাদের অধিকাংশ খুব মেধাবী। একটু যত্নের অভাবে তারা ঝরে পড়ছে। তাদের প্রতি যত্নবান হওয়া দরকার। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান পরিচিত মুখ বা ভাইরালদের নিয়ে কাজ করে। কিন্তু তারা দেখে না যে, আশেপাশে অনেক প্রতিভা আছে যারা সুযোগের অভাবে সামনে আসতে পারছে না। আমার বিশ্বাস, নতুনদের সুযোগ দিলে তারাও ভালো কিছু করে দেখাতে পারবে।

প্রশ্ন : কার গান শুনলে ঈর্ষা হয় বা কার মতো গাইতে ইচ্ছা করে?
মিলানা :
আমি শুধু দেশের নন, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সব নারী শিল্পীর গান শোনার চেষ্টা করি। বোঝার চেষ্টা করি তারা কীভাবে গাইছেন। আমি কারও জনপ্রিয়তাকে ঈর্ষা করি না। যারা সফল হয়েছেন গানের প্রতি তাদের ভালোবাসা, নিবেদন, ত্যাগ-এগুলোকে সম্মান করি। ব্যক্তিকে নয়, ব্যক্তির সংগ্রামটাকে ঈর্ষা করা উচিত। আমি মনে করি, একটা মানুষ কতটা সফল হলো সেটাকে ঈর্ষা করে লাভ নেই। তাদের সফলতার পথটাকে ঈর্ষা করাই শ্রেয়।

প্রশ্ন : গানের শিক্ষক হিসাবে তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ ...
মিলানা :
তরুণদের বলব, ধৈর্য্য ধরতে হবে। ধৈর্য্যশীল হয়ে ধীরে ধীরে এগোতে হবে। কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পরিশ্রমের ফল কোনো না কোনো সময় মানুষ পেয়ে থাকে। অনেকেই দেখেছি, যাদের গান ভাইরাল হয়েছে। রাতারাতি জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। আবার হঠাৎ করে হারিয়েও গেছে। আমি মনে করি, গানকে ধারণ না করতে পারলে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা যায় না।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন