সেরা গল্প: রক্ত যোদ্ধা

 সুমাইয়া সুলতানা সিফা 
১৩ জানুয়ারি ২০২০, ০৫:৫৯ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

[বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস বিক্রয় ডটকমের আয়োজিত ‘বিক্রয়-সাইকেল লাইফ এক্সক্লুসিভ গল্প প্রতিযোগিতা’য় বিজয়ী পাঁচ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় আড়াই শতাধিক সংগৃহীত গল্পগুলো থেকে পাঁচ জনকে গল্প বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করা হয়। সেরা বিজয়ীদের গল্প ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করবে যুগান্তর অনলাইন। আজ প্রকাশ হচ্ছে সেরা পঞ্চম বিজয়ীর গল্প।

আমি বলছি এক রক্ত যোদ্ধার কথা। নিয়মিত রক্তদাতা। রক্ত প্রয়োজন, এমন কথা শুনলে সে অস্থির হয়ে যায় রক্ত যোগাড় করে দিতে। চার ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় আরিফ। ছোট বেলায় বন্ধুদের নিয়ে সাইকেল নিয়ে ঘুরতে ভালোবাসতেন। সে পরিবারের খুব পরিশ্রমী ছেলে। বিভিন্নভাবে দক্ষতা ও সফলতা দেখিয়েছেন। মিষ্টভাষী ও ভদ্র। নিজ এলাকায় তাকে সবাই খুব পছন্দ করে। অন্যকে সাহায্য করতে কখনো দ্বিতীয়বার চিন্তা করেন না। 

যেভাবে রক্ত যোদ্ধা হয়ে উঠলেন


এক সময় তার বন্ধুর জাহিদের বড় ভাইয়ের জরুরি (AB+) রক্তের প্রয়োজন হলো। জাহিদ ও তার পরিবারের সবার রক্ত খুঁজে পাচ্ছিলেন না। জাহিদ তার বন্ধু আরিফকে সব কিছু বললো, তারপর আরিফ তার কিছু বন্ধুকে বললো রক্ত খুঁজে দিতে। সবাই অনেক খুঁজে রক্ত পাওয়া গেল। তারপর আরিফ ভাবলো সে এমন কিছু করবে যেন কারো রক্ত প্রয়োজন হলে সঙ্গে সঙ্গে তখন ব্যবস্থা করা যায়।

প্রথমে আরিফ তার ৫ জন বন্ধুকে রক্তর ব্যাপারে কথা বলে। সবাই আরিফের সঙ্গে থাকবে বলে কথা দেয়। আরিফ আরও অনুপ্রাণিত হয়। আরিফ প্রতিদিন ফেসবুকে রক্ত দানে উৎসাহিত করার জন্য সুন্দর সুন্দর পোষ্ট করতেন।

এক রাতের গল্প 

এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটেছিল। রাত ১টা কেউ একজন আরিফকে কল দিল। আরিফ ঘুম থেকে উঠে কল রিসিভ করে সালাম দিল, ওপার থেকে একজন লোক বললো

কে আরিফ?

জ্বী বলুন

বাবা, তোমার রাসেল স্যার তোমার নাম্বারটা দিয়েছে। বাবা আমার ছেলে তো এক্সিডেন্ট করেছে সন্ধ্যায়, এখন আমি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছি। বাবা জরুরি রক্ত লাগবে। বাবা, আমার ছেলেটাকে বাঁচাও প্লীজ (আমি শুনতে পেলাম লোকটা কান্না করছে)

আমি বললাম, আংকেল টেনশন করবেন না। আমি দেখছি। আংকেল রক্তের গ্রুপ কী?

লোকটা বললো, বাবা (বি+)

আমি বললাম আংকেল টেনশন করবেন না। আমি দেখছি, আপনিও দেখেন।

ফোন রাখার পর একটু ভাবলাম কী করা যায় রাত ১টার ওপরে। কী করবো এখন। কিছুক্ষণ ভাবতেই মনে পড়লো আমার বন্ধু মৃদুলের কথা। মৃদুল হাসপাতালের পাশেই থাকে। মৃদুলকে ৫টা কল দেয়ার পর কল রিসিভ করলে আমি তাকে খুব তাড়াতাড়ি সব বললাম। সে সব শুনে দিবে বললো। আমি আংকেলকে কল দিয়ে বললাম এবং মৃদুলের নাম্বার দিলাম। মৃদুল রাত ২টায় রক্ত দিল। মৃদুল বাসায় গেল, আংকেল বললো রক্ত দেয়া শুরু করেছে, তা শুনে আমি ঘুমালাম।

রক্ত স্বল্পতা

এক রোগীর মা আরিফকে তিনদিন আগে বললো তার মেয়ের জন্য এক ব্যাগ (এ+) রক্ত লাগবে। আরিফ তিনদিন পর বললো রক্ত পাওয়া গেছে। সকাল ৯টায় রক্ত দিবে। আরিফ আর রক্তদাতা সকল ৮:৫০ মিনিটে হাসপাতালে উপস্থিত হলো। রোগীর বাবা তাদের ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে বললেন। পরে আবার ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে বললেন। এভাবে থাকার পর ১২টা রোগী আসলেন এবং রক্ত নিলেন।

প্রায় সময় রক্তদাতার সকল খরচ নিজে বহন করেন।

আরিফ এ পর্যন্ত অনেক রোগীকে রক্ত ব্যবস্থা করে দেন। তাকে তার পরিবার, বন্ধুরা অনেক সাহায্য করে। এ কাজের জন্য পেয়েছেন অনেক সংগঠন থেকে সম্মাননা। পেয়েছেন মানুষের ভালবাসা।

আরিফ বিভিন্নভাবে মানুষকে রক্ত দানে উৎসাহিত করতে থাকলো। আরিফ শুধু তার এলাকায় না এই সেবা দিতে চেয়েছেন উপজেলা, জেলা না পুরো বাংলাদেশের মধ্যে।

আরিফ তার উপজেলার এবং জেলার কিছু রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়। সংগঠনের সকল কর্মকাণ্ড অংশগ্রহণ করেন। আরিফ তার সংগঠনের সাহায্যে অনেক মানুষের ফ্রিতে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে দিয়েছেন। প্রতি বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আরিফ ও তার বন্ধুরা মিলে ফ্রি রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করান।

আরিফ একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। সব জাতীয় দিবস পালন করেন। সব স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেন। বিভিন্নভাবে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত। আরিফের জন্য তার পরিবারের সবাইকে মানুষ খুব ভালবাসে, সম্মান করে।

আরিফ নিয়মিত তিন মাস পরপর রক্ত দান করেন। স্বপ্ন দেখে সুন্দর, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং রক্তের কোন‌ অভাব থাকবে না বাংলাদেশে। সবাই রক্ত দানে উৎসাহিত হবে।

এতক্ষণ যে আরিফের কথা বললাম সে আমার বড় ভাই। আরিফ ভাইয়ের মতো ছেলে বাংলার ঘরে ঘরে দরকার।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন