‘দাদুভাই আমাদের জীবনজুড়ে রয়েছেন’

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
০৩ মার্চ ২০২২, ০৭:০৮ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

জাতীয় শিশু-কিশোর ও যুবকল্যাণ সংগঠন চাঁদের হাটের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট সাংবাদিক, ছড়াকার, গীতিকার ও নাট্যকার প্রয়াত রফিকুল হক দাদুভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাঁদের হাট কেন্দ্রীয় পরিষদ দাদুভাই স্মৃতি পদক-২০২২ প্রদান করেছে। 

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে চাঁদের হাট আয়োজিত পদক প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, রফিকুল হক দাদুভাই ছিলেন সমাজের বাতিঘর। সমাজের আলো। আমাদের পথপ্রদর্শক। এক কথায় দাদুভাই আমাদের জীবনজুড়ে রয়েছেন। তার দেখানো পথে শিশু-কিশোর, যুবকরা এগিয়ে যাবে, আলোকিত হবে। তার স্মৃতি ধরে রাখতে সংগঠনটি এবার একজন সাংবাদিক, গীতিকার ও ছড়াকারকে পদক দিয়েছে। 

সাংবাদিকতায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, গীতিকারে রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী ও ছড়াকারে সাবেক সচিব ফারুক হোসেনকে দাদুভাই স্মৃতি পদক-২০২২ প্রদান করা হয়েছে। আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক মো. জাকারিয়া পিন্টুকে। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রফিকুল হক দাদুভাই আমাদের বাতিঘর। তিনি আলো ছড়িয়েছেন। সাহিত্য অঙ্গনে তার লেখনি চিরকাল বেঁচে থাকবে। তিনি তার জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। তার জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া-লক্ষ্যে পৌঁছার বিষয়গুলো শিশু-কিশোর সংগঠনগুলো দারুণভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। চাঁদের হাট এবং দাদুভাই- এ ক্ষেত্রে অনন্য। আগের শিশুকিশোর সংগঠনগুলো শিশুদের মানবিক, দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে-এখনো রাখছে। সংগঠনে যারা ছিলেন, এখনো যারা আছেন- তারা শিশু-কিশোরদের গড়ে তুলছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ গঠন হয় না। সৃষ্টিশীল উন্নয়ন জরুরি। উন্নত রাষ্ট্রে হয়ত বস্তুগত উন্নয়ন হয়েছে- হচ্ছে। কিন্তু মানবিক উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে। মানুষের মধ্যে মানুষের মমত্ববোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, সেটা একটা বড় প্রশ্নের বিষয়। ইউরোপ অনেক উন্নত, কিন্তু দেখা যায় বাবা-মা যখন বয়স্ক হয় তখন তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর ঘরে থাকলেও একা রাখা হয়। যখন মৃত্যু হয়, তখন ঘরেই লাশ পচেগলে গন্ধ বের হয়। আমরা এমন সমাজ চাই না। আমরা মানবিক মানুষ চাই। 

মন্ত্রী বলেন, উন্নত রাষ্ট্র গঠনের সঙ্গে সঙ্গে একটি মানবিক রাষ্ট্রও গড়তে হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানবিক ও দেশপ্রেমিক মানুষ হতে হলে শিশুকাল থেকেই গড়ে উঠতে হয়। আমাদের বয়স পর্যন্ত এসে, তা হবার নয়। শিশুদের এগিয়ে নিতে হবে। বড়দের মধ্যে পরিবর্তন সম্ভবপর নয়। বড়দের মধ্যে পরিবর্তন আনা খুব কঠিন। একটি উন্নত-মানবিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য ধরতে হবে শিশু-কিশোরদের। তাদের মধ্যে মেধা মূল্যবোধ, সাহিত্য, মমতা, দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে। আমি মনে করি, সেই কাজটি করছে চাঁদের হাট। আমি গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানাব, গণমাধ্যমে শিশু-কিশোরদের জন্য নির্ধারিত পাতা, স্থান রাখুন। তাদের কথা বেশি বেশি লিখুন।  অন্তত সপ্তাহে ২টি পাতা রাখুন। আমি বিশ্বাস করি, শিশু-কিশোরদের পাতা মানুষকে অনেক বড় করে। আমি শিশু-কিশোরদের পাতায় লিখেছি, সংগঠন করেছি, এ জন্যই আমি এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। 

অনুষ্ঠানে দাদুভাই স্মৃতি পদকপ্রাপ্ত যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম তার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, দাদুভাইয়ের সঙ্গে বছরের পর বছর একসঙ্গে কাজ করেছি। তার সঙ্গে আমাদের স্মৃতি অনেক, অন্তহীন। আমি মনে করি যে অন্তহীন জীবনে, অন্তহীন পথযাত্রায় আমাদের জীবন এক পশলা বৃষ্টির মতো, এখানে আমরা সিক্ত হই-মাটি সিক্ত হয়, সিক্ত হয় ধরণীও। দাদুভাই সেই মানুষ, নিজে যিনি সেই বৃষ্টিতে স্নিগ্ধ হয়েছেন এবং আমাদের সবাইকে একসঙ্গে সিক্ত করেছেন। আমি চাঁদের হাটের ফসল। আমার সব কিছুই চাঁদের হাটকে ঘিরে। ১৯৭৫ থেকে আজ ৪৬ বছর এ চাঁদের হাটের সঙ্গে আমি যুক্ত। আমার জীবনের সবচেয়ে গৌরবের, সবচেয়ে অহংকারের-দাবিয়ে বেড়ানোর যে বয়সটা ছিল- সেই বয়সটা চাঁদের হাটের সঙ্গে ছিল।  চাঁদের হাট আসলে এক বুক ভালোবাসার নাম, চাঁদের হাট একটা আন্দোলনের নাম।  চাঁদের হাট একটা অদৃশ্য বন্ধনের নাম। সারা দেশে চাঁদের হাটের সংগঠন ছিল। বরিশাল শহরেই ২৩টি শাখা ছিল। এক এক অঞ্চলে গিয়ে চাঁদের হাট সম্মেলন করেছে। আমরা নিজেরা পুরনো কাপড় সংগ্রহ করে বিতরণ করেছি। নিজেকে বিকশিত করতে আমরা মাঠে কাজ করেছি। স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষার পর পুরনো বই সংগ্রহ করেছি- যারা বই কিনতে পারে না, তাদের মাঝে সব বই বিতরণ করেছি। আমাদের স্লোগান ছিল প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করা। সেই সময়টা আবার এসেছে। আমাদের আগামী প্রজন্মকে সেই কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আর তাতেই সোনার মানুষ গড়ে উঠবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে, সোনার বাংলা হবে। 

মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী বলেন, দেশ ও দেশের মাটি, আকাশ-বাতাস আমাকে সব সময় টানে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, জীবন আমাকে সাহস দেয়। সেই সাহস থেকেই আমি লিখি, লিখে যাব। আমার জন্য কিছুই করি না, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে পারলেই আমি খুশি। আমার লেখা গান ছড়িয়ে পড়ুক সব বয়সীদের কাছে, এটাই আমার চাওয়া পাওয়া। 

ফারুক হোসেন বলেন, জীবনে দাদুভাইয়ের সঙ্গে অনেক গল্প করেছি। আমার লেখা কবিতা ও ছড়া দাদুভাই, সাইফুল আলম ভাই ছাপিয়েছেন। দাদুভাইকে সব সময় আদর্শ হিসেবে দেখি, মানি। 

চাঁদের হাটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াহিয়া সোহেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জামিউর রহমান লেমন। বক্তব্য দেন- দাদুভাই স্মৃতি পদক সমন্বয়ক মুফদি আহমেদ মনা। অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্তদের হাতে স্মৃতি পদকসহ জীবনী স্মারক তুলে দেওয়া হয়। ঘোষণা করা হয় প্রতি বছর ৮ জানুয়ারি দাদুভাই স্মৃতি পদক প্রদান করা হবে। 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন