নারী অফিসে হয়রানির শিকার হলে আইনি প্রতিকার কী? (ভিডিও)

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
১০ জুন ২০২২, ০১:২৮ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

কর্মক্ষেত্রে নারীকর্মীদের হয়রানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। সুস্পষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় এসব ঘটনার বিচার হয় না। কোনো কোনো সময় নিপীড়নের শিকার নারী লোকলজ্জা ও চাকরি হারানোর ভয়ে বিষয়টি চেপে যান। এতে এসব ঘটনা আরও বাড়ছে।

কর্মক্ষেত্রে কোনো নারীকর্মী কারও দ্বারা নিপীড়ন কিংবা হয়রানির শিকার হলে আইনি কী ব্যবস্থা নিতে পারবে, সেটির প্রক্রিয়াই বা কী হবে। এ বিষয়ে যুগান্তরের পাঠকদের আইনি পরামর্শ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা।

তিনি বলেন, নিপীড়ন-হয়রানির শিকার বহু নারী আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেন প্রতিকার পাওয়ার আশায়। শুধু কর্মক্ষেত্র নয়, গণপরিবহণ, পাবলিক প্লেস সব জায়গায় নারীর প্রতি হয়রানি সর্বকালের সর্বাধিক রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এটি এ মুহূর্তে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।

 

নারীর প্রতি কর্মক্ষেত্রে হয়রানি নিয়ে আমাদের যে আইনটি রয়েছে, সেটি হচ্ছে— ২০০৯ সালের উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা। সমাজে অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, এই যে নির্দেশনা এটি কোনো আইন নয়, এটি কেবল গাইডলাইন। এই ভুল ধারণা থেকে অনেক জায়গায় ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না পার্লামেন্টে এ বিষয়ে কোনো আইন পাশ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনাই আইন, যেটি সংবিধানে বলা রয়েছে। 

এই নির্দেশনায় হয়রানির সংজ্ঞা দেওয়া আছে। কোন কোন আচরণ কোন কোনো কাজ হয়রানির মধ্যে পড়ে সেটি বলা আছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকার নিয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিপীড়কের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা, কীভাবে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেওয়া হবে বিশদভাবে বলা হয়েছে এতে। 

আইনে বলা হয়েছে, প্রতিটি কর্মক্ষেত্র সেটি সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সবগুলোতে হয়রানির বিরুদ্ধে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। যেটি পাঁচ সদস্যের হবে। কমিটিতে নারীদের প্রাধান্য থাকবে এবং প্রধান হিসেবে নারীকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই কমিটির কাছে ভুক্তভোগী নাম-পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ করতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি বহু প্রতিষ্ঠানে আজ পর্যন্ত এ ধরনের কোনো কমিটিই করা হয়নি। কারণ তারা এটি অস্বীকার করতে চান যে, তার অফিসে কোনো নারীকর্মী হয়রানির শিকার হন। কোনো কোনো অফিস হয়রানি দেখেও না দেখার ভান করে। তারা মনে করে বিষয়টি সামনে এলে তাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে।

আমরা এও শুনে থাকি যে, নারীকর্মীরা অনেক সময় অফিসের বড় কর্তার নিপীড়ন কিংবা হয়রানির শিকার হন। এমন ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নারী বিষয়টি সামনে আনতে চান না চাকরি হারানোর ভয়ে। তাই দেখা যাচ্ছে, হয়রানি অস্বীকারের বিষয়টি ভুক্তভোগী ও প্রতিষ্ঠান দুই জায়গা থেকেই হয়ে থাকে। 

হয়রানির বিচার না হওয়ার জন্য আইনি দুর্বলতা নাকি ভুক্তভোগী নারীর চেপে চাওয়ার সংস্কৃতি দায়ী—এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মিতি সানজানা বলেন, আইনি দুর্বলতা নয়, বরং আইন বাস্তবায়ন না হওয়া দায়ী। ভুক্তভোগী নারীর ভয় ও সচেতনার অভাবও বিচার না পাওয়ার একটা কারণ।  

উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় শুধু কমিটি করার কথাই বলা হয়নি। বলা হয়েছে— তিন মাস, ছয় মাস অন্তর অন্তর ওই কমিটি বসে মূল্যায়ন করবে। এখানে সচেতনতামূলক ওয়ার্কশপের কথাও বলা হয়েছে। আইনটি নিয়ে বেশি বেশি সেমিনার ওয়ার্কশপ হলে কর্মীরা অনেক বেশি সচেতন হবেন। তারা বিচার চাইবেন। পুরুষ কর্মীও হয়রানির শাস্তি সম্পর্কে জেনে এ বিষয়ে সতর্ক হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রামে এই আইন নিয়ে কথা বলতে হবে। শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে হয়রানির শাস্তি কিন্তু কঠোর।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ করার প্রক্রিয়া কী হবে— এমন প্রশ্নে সুপ্রিমকোর্টের এই আইনজীবী বলেন, আইনে বলা রয়েছে ভুক্তভোগী মৌখিক অভিযোগও করতে পারবেন। আবার লিখিত অভিযোগও করতে পারবেন। সেখানে সময় দেওয়া আছে যে, নির্দিষ্ট সময়ে অভিযোগ নিয়ে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিতে হবে। পুরো প্রক্রিয়া চলাকালে অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীর নাম গোপন রাখার কথা বলা আছে আইনে। অভিযোগের শুনানির সময় সব বিষয় লিখতে হবে। মিথ্যা অভিযোগও আসে। সেটি প্রমাণ হলে ওই অভিযোগকারী উল্টো ফেঁসে যাবেন। আইনটি বাস্তবায়ন হলে আর মানুষ সচেতন হলে অফিসে হয়রানি কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন