পাটকল চালুর দাবিতে শ্রমিকদের বিজেএমসি ঘেরাও

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
২২ জুন ২০২২, ০৬:২৮ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

গত ২০২০ সালের ২ জুলাই রাতের আঁধারে সরকার একযোগে ২৬ টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ  ঘোষণা করে। এর ফলে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক কর্মহারা হন।  যে লোকসানের অজুহাত  দেখিয়ে সরকার পাটকল বন্ধ  ঘোষণা করে তার জন্য শ্রমিকরা  কোনো ভাবেই দায়ী নয়। 

সরকারের ভুলনীতি, অব্যবস্থাপনা ও বিজেএমসির দুর্নীতির কারণে এই পাটকলে  লোকসান হয়েছে। অথচ  সেই বিজেএমসি বহাল  রেখে শ্রমিকদের পাটকল  থেকে  বের করে  দেওয়া হয় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে। সমাবেশে বক্তারা এ সব কথা বলেন।

৫ জুটমিল শ্রমিকদের এরিয়ার টাকা, নাম সংক্রান্ত জটিলতা ও মামলা জটিলতায় ভুক্তভোগী সকল শ্রমিকের বকেয়া পাওনা পরিশোধ ও বন্ধ পাটকল চালুর দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ঢাকার বিজেএমসি কার্যালয়  ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে পাটকল শ্রমিকরা। 

জাতীয়  প্রেসক্লাবে সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিজেএমসি কার্যালয়  ঘেরাও কর্মসূচি শুরু হয় । উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাটকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যের সমন্বয়ক শ্রমিক  নেতা রুহুল আমিন। সঞ্চালনা করেন খালিশপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, আমিন জুটমিলের শ্রমিক  নেতা  মোঃ হানিফ ও পাটকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যে’র অন্যতম নেতা সত্যজিৎ বিশ্বাস। 

বক্তব্য  দেন- খালিশপুর জুটমিল শ্রমিক  নেতা শফিউদ্দিন সফি, আমিন জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি  মোঃ হানিফ, সাধারণ সম্পাদক  মোঃ নাসির, স্টার জুট মিলের শ্রমিক  নেতা আলমগীর  হোসেন, ক্রিসেন্ট জুটমিলের শ্রমিক  নেতা  মোশাররফ  হোসেন, নাসিমা আক্তার, জাতীয় জুটমিল শ্রমিক-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম, টিইউসি’র সভাপতি শহিদুল­াহ  চৌধুরী, বাম গণতান্ত্রিক  জোটের সমন্বয়ক আব্দুস সাত্তার, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, বাংলাদেশ শ্রমিক-কর্মচারী  ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক  ক্ষেত মজুর ও কৃষক ফ্রন্টের সভাপতি মঞ্জুরুল আলম মিঠু, খালিশপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সহ সম্পাদক আব্দুল হাকিম,  তৈয়ব  হোসেন, আকবর  হোসেন,  জেজেআই জুটমিলের সামস শ্যামল সহ প্রমুখ  নেতৃবৃন্দ।
 ঘেরাও কর্মসূচি  থেকে  ঘোষণা করা হয় যতক্ষণ না পর্যন্ত বিজেএমসির  চেয়ারম্যান স্বশরীরে না এসে দাবি বাস্তবায়নে  ঘোষণা দিবেন ততক্ষণ  ঘেরাও কর্মসুচি চলবে। পাটকল শ্রমিকের দাবি আদায়ের এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে নাটক পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে অংশগ্রহণ করেন নাটকের দল থিয়েটার বায়ান্নো। 

সরকার পাটকল বন্ধের সময় ২ মাসের মধ্যে শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া পাওনা পরিশোধ করে ৩ মাসের মধ্যে পুনরায় পাটকল চালুর  ঘোষণা দিলেও আজও  সেটা কথার কথা রয়ে  গেছে।  যে সকল স্থায়ী - বদলি শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। তাদের  দেখানো হয়নি  কোনো হিসাব। নাম ও মামলা সংক্রান্ত জটিলতার অজুহাত দেখিয়েও পরিশোধ করা হয়নি অনেক স্থায়ী - বদলি শ্রমিকের পাওনা।

আবার ২৬ টি জুটমিল একযোগে বন্ধ  ঘোষণা করে দেওয়া হলেও ৫ টি জুটমিলের (খালিশপুর জুটমিল,  দৌলতপুর জুটমিল, জাতীয় জুটমিল, আর আর জুটমিল ও  কেএফডি) শ্রমিকদের  কোনো টাকা পরিশোধ করা হয়নি। অথচ মজুরি কমিশন ২০১৫ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল  নোটিশে স্লিপ প্রদান প্রসঙ্গে স্পষ্ট উলে­খ আছে। 

মজুরি  স্কেল - ২০১৫ অনুযায়ী শ্রমিকদের ( দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকসহ) জানুয়ারি ২০২০ এর প্রথম সপ্তাহের ( ৪ হতে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত)  মজুরি স্লিপ আগামী ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রদানের জন্য নির্দেশ করা হয়। সুতরাং স্থায়ী ও বদলি শ্রমিকরা যদি ২০১৫ সালের মজুরি কমিশনের এরিয়ার টাকা  পেয়ে থাকে, তবে একই  নোটিশে প্রদান কৃত মজুরি কমিশনের এরিয়ার টাকা ৫টি জুটমিলের শ্রমিকরা  কেন পাবে না?

সরকার পাটকল বন্ধের সময় ৩ মাসের মধ্যে পুনরায় পাটকল চালুর  ঘোষণা দিলেও আজ পর্যন্ত দুটি জুটমিল ( বাংলাদেশ জুটমিল ও  কেএফডি জুটমিল) আংশিক ভাবে লিজের মাধ্যমে চালু করলেও  সেখানে  নেওয়া হচ্ছে না পুরাতন  কোনো শ্রমিককে। আর  বেতন  দেওয়া হচ্ছে  দৈনিক মাত্র ২৪০-২৮০ টাকা। যা শ্রম  শোষণের চ‚ড়ান্ত রূপ। আর অবশিষ্ট ২৩টি পাটকল এখনো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। জং ধরে নষ্ট হচ্ছে  কোটি  কোটি টাকার  মেশিনারিজ। এভাবে হাজার হাজার  কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট ও  বেহাত হওয়ার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে ক্রমশ। আমরা দাবি করছি, অবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে চালু করে  দেশের সম্পদ রক্ষা করে সমস্ত পাটকল শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ফিরিয়ে  দেওয়া  হোক। 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন