পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি
গ্রাহক পর্যায়ে দাম অপরিবর্তিত রাখুন
চলমান সংকটকালে সব মহলের আপত্তি সত্ত্বেও পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
দাম বৃদ্ধির হার ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে এই নতুন মূল্য। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির খবরে সবাই, বিশেষত সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন।
কারণ, বিদ্যুতের দাম বাড়লে খরচ বাড়বে কৃষি, শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাতে। ফলে আরেক দফা বাড়বে দ্রব্যমূল্য।
ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানি খাত। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে মানুষ, বিশেষ করে দেশের শিল্প খাত। এ অবস্থায় পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে মহাসংকটে পড়বে এ খাত। সাধারণ মানুষের জীবন হবে আরও সংকটাপন্ন। তাই পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো হলেও এ মুহূর্তে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম অপরিবর্তিত রাখা উচিত বলে মনে করি আমরা।
দেশে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যা ওই বছরের মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়। এরপর চলতি বছরের মে মাসে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। তবে সরকার যদি ভর্তুকি দেয়, তাহলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলেও তারা সুপারিশ করে। সরকার ভর্তুকি দেওয়ায় তখন বিদ্যুতের দাম আর বাড়ানো হয়নি। বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে অর্থনৈতিক সংকট এখন সে সময়ের চেয়েও প্রকট। সেক্ষেত্রে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করি আমরা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেনের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি যদি এক বছর পরে করা হয়, তাহলে গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে। অন্যথায় বাজারের যে সার্বিক অবস্থা, গ্রাহক পর্যায়ে এখন দাম বাড়ালে ভোক্তাদের ওপর দ্বিগুণ চাপ পড়বে। এখন এমনিতেই সবকিছুর দাম বেশি। এ সময়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোই উচিত হবে। আর ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, চলমান বৈশ্বিক সংকটময় মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম যাতে না বাড়ানো হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পোশাকশিল্পসহ শিল্প খাতের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে ব্যাহত হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
আমরা মনে করি, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এ খাতের সিস্টেম লস দূর করার বিষয়ে মনোনিবেশ করা উচিত সরকারের। তাহলে এ খাতের অপচয় দূর হবে। বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লসের কারণে অপচয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এর দায় চাপছে গ্রাহকদের ওপর।
এখন বিদ্যুতের দাম বাড়নো হলে আক্ষরিক অর্থেই সাধারণ মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে আমাদের। একদিকে করোনার ক্ষত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদিতে নাকাল হয়ে আছে মানুষের জীবন। এ সময় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম কোনোক্রমেই বাড়ানো উচিত হবে না।
পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি
গ্রাহক পর্যায়ে দাম অপরিবর্তিত রাখুন
সম্পাদকীয়
২৩ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চলমান সংকটকালে সব মহলের আপত্তি সত্ত্বেও পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
দাম বৃদ্ধির হার ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে এই নতুন মূল্য। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির খবরে সবাই, বিশেষত সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন।
কারণ, বিদ্যুতের দাম বাড়লে খরচ বাড়বে কৃষি, শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাতে। ফলে আরেক দফা বাড়বে দ্রব্যমূল্য।
ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানি খাত। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে মানুষ, বিশেষ করে দেশের শিল্প খাত। এ অবস্থায় পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে মহাসংকটে পড়বে এ খাত। সাধারণ মানুষের জীবন হবে আরও সংকটাপন্ন। তাই পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো হলেও এ মুহূর্তে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম অপরিবর্তিত রাখা উচিত বলে মনে করি আমরা।
দেশে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যা ওই বছরের মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়। এরপর চলতি বছরের মে মাসে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। তবে সরকার যদি ভর্তুকি দেয়, তাহলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলেও তারা সুপারিশ করে। সরকার ভর্তুকি দেওয়ায় তখন বিদ্যুতের দাম আর বাড়ানো হয়নি। বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে অর্থনৈতিক সংকট এখন সে সময়ের চেয়েও প্রকট। সেক্ষেত্রে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করি আমরা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেনের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি যদি এক বছর পরে করা হয়, তাহলে গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে। অন্যথায় বাজারের যে সার্বিক অবস্থা, গ্রাহক পর্যায়ে এখন দাম বাড়ালে ভোক্তাদের ওপর দ্বিগুণ চাপ পড়বে। এখন এমনিতেই সবকিছুর দাম বেশি। এ সময়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোই উচিত হবে। আর ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, চলমান বৈশ্বিক সংকটময় মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম যাতে না বাড়ানো হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পোশাকশিল্পসহ শিল্প খাতের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে ব্যাহত হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
আমরা মনে করি, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এ খাতের সিস্টেম লস দূর করার বিষয়ে মনোনিবেশ করা উচিত সরকারের। তাহলে এ খাতের অপচয় দূর হবে। বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লসের কারণে অপচয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এর দায় চাপছে গ্রাহকদের ওপর।
এখন বিদ্যুতের দাম বাড়নো হলে আক্ষরিক অর্থেই সাধারণ মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে আমাদের। একদিকে করোনার ক্ষত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদিতে নাকাল হয়ে আছে মানুষের জীবন। এ সময় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম কোনোক্রমেই বাড়ানো উচিত হবে না।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023