খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ
স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে জোর দিতে হবে
দেশে খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি না থাকলেও প্রয়োজনের সময় খাদ্য আমদানি করে চাহিদা মেটানো কঠিন হতে পারে।
কারণ ইতোমধ্যে অনেক দেশে খাদ্য উৎপাদন কম হয়েছে, সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, খাদ্যপণ্যের দামও বেড়েছে।
এ ছাড়া অনেক দেশ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিছু দেশ নানা ধরনের বিধিনিষিধ আরোপ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে চুক্তি অনুসারে দেশে চাল ও গম আমদানি এখন পর্যন্ত অপর্যাপ্ত থাকার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এদিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পূর্বাভাস-গত বছরের তুলনায় এবার ২৫ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হবে; কমবে গম ও ভুট্টার উৎপাদন। জানা গেছে, কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের জোগান নেই। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও মহামারির কারণে গত কয়েক বছরে বিশ্বে অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। খাবারের অভাব এবং পণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আগামী বছর বিশ্বে বিপুলসংখ্যক মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে; খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে, যা দুর্ভিক্ষে রূপ নিতে পারে। এসব তথ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। কাজেই কেন চুক্তি অনুসারে চাল ও গম আমদানি অপর্যাপ্ত, কেন কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি-এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা দরকার।
দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিপুলসংখ্যক মানুষ পুষ্টিকর খাবার কেনার পরিবর্তে কম পুষ্টিকর খাবার কিনে থাকে। বৈশ্বিক উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থায় পারস্পরিক নির্ভরশীলতা গড়ে উঠেছে। মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেই সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অনিবার্যভাবে বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষের খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এবং বৈরী জলবায়ুর প্রভাবে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতির ওপর জোর দিতে হবে।
দেশে ডলার সংকটে খাদ্য আমদানির জন্য সময়মতো এলসি খোলা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে এ সংকট আরও তীব্র হতে পারে। কাজেই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। জ্বালানি সংকটের কারণে দেশে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার উৎপাদন করা সম্ভব না হলে আমদানি করে সারের মজুত নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি উপকরণের সরবরাহ নিশ্চিত করা না হলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হতে পারে। দেশে বিদ্যমান কর্মসংস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। সব ধরনের শিল্প খাতকে চাঙা রাখার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য উৎপাদকদের প্রণোদনা দিতে হবে। খাদ্যের স্থানীয় সরবরাহের সমস্যা দূর করা না হলে কোনো কোনো এলাকায় সংকট সৃষ্টি হতে পারে। উৎপাদকরা যাতে পণ্যের সঠিক মূল্য পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই থেকে অক্টোবর দেশে খাদ্যের সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে।
এ জন্য প্রয়োজনীয় মজুত নিশ্চিত করতে আগে থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে গরিব মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে হবে। গরিব মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার না পেলে জনশক্তি সৃষ্টির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ
স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে জোর দিতে হবে
সম্পাদকীয়
২৪ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি না থাকলেও প্রয়োজনের সময় খাদ্য আমদানি করে চাহিদা মেটানো কঠিন হতে পারে।
কারণ ইতোমধ্যে অনেক দেশে খাদ্য উৎপাদন কম হয়েছে, সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, খাদ্যপণ্যের দামও বেড়েছে।
এ ছাড়া অনেক দেশ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিছু দেশ নানা ধরনের বিধিনিষিধ আরোপ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে চুক্তি অনুসারে দেশে চাল ও গম আমদানি এখন পর্যন্ত অপর্যাপ্ত থাকার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এদিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পূর্বাভাস-গত বছরের তুলনায় এবার ২৫ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হবে; কমবে গম ও ভুট্টার উৎপাদন। জানা গেছে, কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের জোগান নেই। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও মহামারির কারণে গত কয়েক বছরে বিশ্বে অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। খাবারের অভাব এবং পণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আগামী বছর বিশ্বে বিপুলসংখ্যক মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে; খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে, যা দুর্ভিক্ষে রূপ নিতে পারে। এসব তথ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। কাজেই কেন চুক্তি অনুসারে চাল ও গম আমদানি অপর্যাপ্ত, কেন কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি-এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা দরকার।
দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিপুলসংখ্যক মানুষ পুষ্টিকর খাবার কেনার পরিবর্তে কম পুষ্টিকর খাবার কিনে থাকে। বৈশ্বিক উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থায় পারস্পরিক নির্ভরশীলতা গড়ে উঠেছে। মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেই সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অনিবার্যভাবে বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষের খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এবং বৈরী জলবায়ুর প্রভাবে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতির ওপর জোর দিতে হবে।
দেশে ডলার সংকটে খাদ্য আমদানির জন্য সময়মতো এলসি খোলা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে এ সংকট আরও তীব্র হতে পারে। কাজেই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। জ্বালানি সংকটের কারণে দেশে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার উৎপাদন করা সম্ভব না হলে আমদানি করে সারের মজুত নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি উপকরণের সরবরাহ নিশ্চিত করা না হলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হতে পারে। দেশে বিদ্যমান কর্মসংস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। সব ধরনের শিল্প খাতকে চাঙা রাখার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য উৎপাদকদের প্রণোদনা দিতে হবে। খাদ্যের স্থানীয় সরবরাহের সমস্যা দূর করা না হলে কোনো কোনো এলাকায় সংকট সৃষ্টি হতে পারে। উৎপাদকরা যাতে পণ্যের সঠিক মূল্য পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই থেকে অক্টোবর দেশে খাদ্যের সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে।
এ জন্য প্রয়োজনীয় মজুত নিশ্চিত করতে আগে থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে গরিব মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে হবে। গরিব মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার না পেলে জনশক্তি সৃষ্টির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023