রাজনীতি: নাটোর-৪

এমপির সঙ্গে বিরোধ দুই উপজেলা চেয়ারম্যানের

 মো. শহীদুল হক সরকার, নাটোর 
২৫ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের দীর্ঘদিনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে দুই উপজেলা চেয়ারম্যান ও গুরুদাসপুর পৌর মেয়রের চরম বিরোধ রয়েছে।

এর জের ধরে এই নির্বাচনি এলাকায় নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও একজন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ছয়জন ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী পরাজয় বরণ করেছেন।

জানা যায়, এই আসনে পাঁচবার নির্বাচিত এমপি অধ্যাপক কুদ্দুসের পালিত পুত্র হিসাবে পরিচিত তার ঘনিষ্ঠজন আনোয়ার হোসেন। তিনি ঘোড়া প্রতীক নিয়ে গত উপজেলা (গুরুদাসপুর) চেয়ারম্যান নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রবীণ নেতা জাহিদুল ইসলামকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।

পরে নানা কারণে বিরোধ হওয়ায় বর্তমানে এমপি কুদ্দুস ও চেয়ারম্যান আনোয়ার এখন রাজনীতির মাঠে আলাদা অবস্থান করছেন। গুরুদাসপুর পৌরসভার গত তিনটি নির্বাচনেও এমপি কুদ্দুস দলীয় প্রার্থী বর্তমান মেয়র গুরুদাসপুর থানা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ মোল্লার বিরোধিতা করেন। তখন তিনি দলের বিদ্রোহী আরিফুল ইসলাম বিপ্লবের পক্ষে কাজ করেছেন বলে দাবি করেন মেয়র শাহনেওয়াজ।

মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ ও কোন্দলের কারণে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গুরুদাসপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে চারটিতে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। অথচ উপজেলার বিয়াঘাট, নাজিরপুর, চাপিলা ও মশিন্দা ইউনিয়ন সব সময়ই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল।

গুরুদাসপুর পৌরসভার দলীয় মেয়র শাহনেওয়াজ মোল্লা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, কোন্দল উসকে দেওয়ার জন্য ১৫ নভেম্বর কাউন্সিলের নামে বিনা ভোটে আমাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বাদ দিয়ে কখনো দল করেননি এমন একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে আমরা ভোট দিলেও অধ্যাপক কুদ্দুস জামানত হারাবেন। উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এই প্রকাশ্য কোন্দল নিরসন হওয়া দলের জন্য খুবই জরুরি।

অপরদিকে বড়াইগ্রাম উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের নির্বাচনে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরোধের জেরে জোনাইল ও নগর ইউনিয়ন পরিষদে এমপি সমর্থিত নৌকা প্রতীকের দুই প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। সেখানে বিজয়ী হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ তুলে বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিুকর রহমান পাটোয়ারী প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, এমপি কুদ্দুস নির্বাচনি এলাকায় প্রবেশ করলে তার গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে। বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের গত দুটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হন ডা. সিদ্দিুকর রহমান পাটোয়ারী। তিনি অভিযোগ করেন, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে দুটি নির্বাচনেই এমপি কুদ্দুস প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন।

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মী বলছেন, দল থেকে নির্বাচিত ও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের মধ্যে বিরোধের অবসান না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস এমপি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দলীয় প্রতীকে হয়নি।

গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে অনেক এলাকায় বিএনপি-জামায়াত অবস্থান নেওয়ায় কিছু স্থানে নৌকার পরাজয় হয়েছে। তার সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিরোধ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা অধম ও উত্তম উল্লেখ করে বলেন, কুকুরের পায়ে কামড় দেওয়া আমার কাজ নয়।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন